× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১৯৩৫-২০২০ /মানবদরদি এক আইনবিদের বিদায়

প্রথম পাতা

রাশিম মোল্লা
২৫ অক্টোবর ২০২০, রবিবার

দীর্ঘ ছয় দশকের আইন পেশার বর্ণাঢ্য এক জীবন। ছিলেন দলমতনির্বিশেষে সবার আইনি অভিভাবক। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি আপসহীন। নির্মোহ, নির্লোভ পেশাজীবনে তিনি অকপটে সত্য উচ্চারণ করেছেন। নিজের শ্রমে-ঘামে উপার্জিত অর্থও আজীবন ব্যয় করে গেছেন মানবকল্যাণে। হাসপাতালসহ বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের তিনি ছিলেন পৃষ্ঠপোষক। দেশের বিচার অঙ্গনের সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালত অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক শোক বার্তায় প্রয়াত রফিক-উল হকের স্মৃতিচারণ করে শোক প্রকাশ করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের স্মৃতিচারণ করে সিনিয়র আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি ছিলেন অভিভাবকতুল্য একজন দরদি মানুষ। তার মৃত্যুতে বিচার অঙ্গনে এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আইন পেশায় নিরপেক্ষ ভূমিকা ও মানবসেবায় তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আদ-দ্বীন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম নামাজে জানাজা। জানাজা পড়ান আদ-দ্বীন হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ সাইদুল ইসলাম। মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় মরদেহের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক চলে যাওয়ায় আইন জগতে একটা বিরাট রকমের ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি বলেন, এ ধরনের আইনজীবীর এখন খুবই অভাব। তার অভাব আমরা অনুভব করছি। তিনি সব সময় নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদেরকে আইনি সহায়তা দিয়ে গেছেন।
আদ-দ্বীন হাসপাতালে জানাজা শেষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মরদেহ নেয়া হয় পুরানা পল্টনের নিজ বাসায়। পল্টনের বাসায় মরদেহ কিছুক্ষণ রাখার পর নেয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে। এরপর মরদেহ নেয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এড. জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবীরা অংশ নেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ছেলে দেশের বাইরে থাকায় তার বড় ভাইয়ের ছেলে মিজবাউল হক সবার কাছে দোয়া চান। জানাজা শেষে রফিক-উল হকের কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম ও বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায় তাকে। জানাজা শেষে বনানীর কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেলকে।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, এই প্রথিতযশা আইনজীবী অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে তিনি আদালতকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।

গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দেশের অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী ছিলেন। নিজ কর্মগুণেই বিজ্ঞ এই আইনজীবী দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে দেশের আইন অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো।

প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মাহবুব হোসেন বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সারা জীবন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। তিনি দলমত দেখতেন না। তিনি দেখতেন আসলে তিনি বিচারপ্রার্থী কিনা। সেজন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি সবার মামলা লড়তেন। যা এখন অনেক আইনজীবীর মধ্যেই দেখা যায় না।

এছাড়াও গভীর শোক প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, রফিক-উল হক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। তার এই চলে যাওয়া আইন অঙ্গনে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করবে। তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ আইনজীবী। সব সময় প্রস্তুতি নিয়ে আদালতে আসতেন। রেফারেন্স হিসেবে আদালতে নিয়ে আসতেন অনেক বই- পুস্তক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান সকলেই স্মরণ করবে। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

এর আগে গত ১৫ই অক্টোবর থেকে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এরপর গত মঙ্গলবার কিছুটা সুস্থবোধ করলে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু দুপুরের পরপরই ফের তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। রক্তশূন্যতা, ইউরিন সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। তিনি ডা. রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে রফিক-উল হকের জন্ম। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে। শৈশব শুরু করে শিক্ষা জীবনের প্রায় পুরোটাই কলকাতায় কেটেছে। পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন রফিক-উল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পর পর দু’বার জিতেছিলেন তিনি। সোশ্যাল সেক্রেটারি হয়েছিলেন। পরে পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। তখন ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন কেন্দ্রীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি। রাজনীতির সূত্রে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছে, সুযোগ পেয়েছেন একসঙ্গে কাজ করার। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের বাবা মুমিন- উল হক পেশায় ডাক্তার হলেও চব্বিশ পরগনা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কলকাতা শহরও তখন এর অন্তর্গত ছিল। তিনি চব্বিশ পরগনা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। ডাক্তারি, জমিদারি ছেড়ে গণমানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে নিঃস্ব হতে হয়েছিল তাকে।
কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন রফিক-উল হক। বেকার হোস্টেলে যে কক্ষে বঙ্গবন্ধু থাকতেন তার পাশের কক্ষেই থাকতেন তিনি। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও কারমাইকেল হোস্টেলে কিছুদিন বঙ্গবন্ধুর সহচর্যে ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকেই অসামান্য মেধাবী ছিলেন রফিক-উল হক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ক্রিমিনাল ল’তে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তিনি। হিন্দু ল’ নিয়ে ব্যারিস্টারি পড়েছেন। সেখানেও দ্বিতীয় হতে হয়নি তাকে। সপ্তাহান্তে খণ্ডকালীন চাকরি করে ব্যারিস্টারি পড়ার খরচ চালিয়েছেন। স্বাভাবিক গতিতে তিন বছরে ব্যারিস্টারি শেষ করার কথা থাকলেও মাত্র দেড় বছরের মধ্যে সবগুলো কোর্সে পাস করেছিলেন। তাকে দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ল’ পড়ানো শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পরীক্ষক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন।

রফিক-উল হক ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। এরপর ১৯৬০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন রফিক-উল হক। এ ছাড়া তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল ও বার কাউন্সিল ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয় তাকে। তখনই তিনি পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এসময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যে সম্মানী পেতেন তার পুরোটাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগের প্রথম মাসে তিনি তার সম্মানী থেকে ১ টাকা গ্রহণ করেছিলেন বলে জানান ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জুনিয়র ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তারা বলেন, ১৯৯০ সালের ৭ই এপ্রিল থেকে ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্যার। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার প্রথম মাসে শুধু তার সম্মানী থেকে ১ টাকা নিয়েছিলেন। এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার বেতনের পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দিয়ে দিতেন।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। সমাজ ও মানবতার সেবায় তার হাত ছিল সবসময়ই উদার হস্ত। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়। ১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিল তার। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। ঢাকার ফার্মগেটে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের দাদার গড়া প্রতিষ্ঠান। ঢাকা শিশু হাসপাতাল গড়ে তোলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ব্যরিস্টার রফিক-উল হক। এই হাসপাতালের জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। লটারির টিকিট বিক্রি করে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার খরচের বড় একটা অংশ সংগ্রহ করেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে কোনো ফি নিতেন না বলে এই হাসপাতালের জন্য আশির দশকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন। শিশু হাসপাতাল ছাড়াও সুবর্ণ ক্লিনিক, আদ-দ্বীন, বারডেম, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালসহ অনেক চিকিৎসাধর্মী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। নিজের উপার্জিত অর্থে গাজীপুরের চন্দ্রায় ১০০ শয্যার সুবর্ণ-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ২০১১ সালে প্রিয়তমা স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের মৃত্যুর পর থেকেই নিঃসঙ্গতা অনুভব করতেন তিনি। এরই মধ্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হয়। মাঝে মধ্যে পায়ে ব্যথা হতো। যে কারণে হুইলচেয়ারে যাওয়া-আসা করতে হতো তাকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর