ভূ-মধ্যসাগরের লেবাননে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের আওতায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বৈরুত বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিজয় চট্টগ্রাম নেভালে ফিরেছে।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) জাহাজটি চট্টগ্রাম নেভাল জেটিতে পৌছায়। এ সময় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইশবাল জাহাজটিকে স্বাগত জানান। এছাড়া জাহাজে উপস্থিত সকল কর্মকর্তা ও নাবিকদের সফলভাবে মিশন সমাপ্তির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, সফলভাবে দেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার উপর ন্যাস্ত যেকোন দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম। এছাড়া বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে জাহাজের নৌসদস্যরা করোনা থেকে মুক্ত থাকায় সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এর আগে দায়িত্ব পালন শেষে বানৌজা বিজয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং প্রায় ১০ হাজার ২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ অতিক্রম করে দেশে এসে পৌছায়। বর্তমানে বানৌজা সংগ্রাম প্রতিস্থাপক হিসেবে ভূ-মধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় লেবাননে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে জাহাজটি ২০১৭ সালের পহেলা ডিসেম্বর লেবানন যাত্রা করে। যোগদানের পর থেকে জাহাজটি লেবানীজ জলসীমায় মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ারক্রাফট এর উপর নজরদারী, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবানীজ নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছিল।
লেবাননে অবস্থানকালে বিগত তিন বছরে জাহাজটিতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও শৃংখলার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন।
জাহাজটি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের অধীনে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাহাজসমূহের সাথে নিয়মিত শান্তিরক্ষা টহল ও বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এতে অন্যান্য দেশের নৌবাহিনী সম্পর্কে ধারণা লাভের পাশাপাশি ঐ সকল জাহাজের সাথে সমুদ্র মহড়ায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া জাহাজটি ভূ-মধ্যসাগরে সাফল্যের সাথে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
সূত্রমতে, গত ০৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং নৌসদস্যদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং নৌসদস্যদের সুচিকিৎসার ক্ষেত্রে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। সকলের সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাহাজের প্রয়োজনীয় মেরামত শেষে নিরাপদে জাহাজটি দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নৌপ্রধান জাহাজের প্রতিটি সদস্যের অসীম সাহস, উদ্যম এবং পেশাদারিত্বের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।