× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর হাজী সেলিমের ছেলে আটক বাসায় অভিযান, অস্ত্র ও বিদেশি মদ উদ্ধার, ১ বছরের কারাদণ্ড

এক্সক্লুসিভ

স্টাফ রিপোর্টার:
২৭ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

ইরফান সেলিম। রোববার রাত থেকে আলাচনায় তিনি। রাজপথে প্রকাশ্যে তিনি ও তার সঙ্গীরা নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাকে পিটিয়েছেন। দিয়েছেন হুমকি-ধমকি। মারধরে দাঁত ভেঙে রক্ত বের হচ্ছিলো নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানের। মারধর পরবর্তী একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মুহূর্তেই তা আলোচনার জন্ম দেয়। প্রভাবশালী ইরফান সেলিম দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র।
গতকাল ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে। তার আগে গ্রেপ্তার করা হয় ইরফানের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে। দিনভর হাজী সেলিমের লালবাগের  ‘চাঁন সর্দার দাদাবাড়ি’তে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, ওয়াকিটকি জব্দ করা হয়। মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে  ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে কারাদণ্ড দেন র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তার আগে গতকাল ভোরে নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। রোববার রাতে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে থাকা একজন ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এই ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় ওঠে চারপাশে। দিনের প্রথম ভাগেই ইরফানকে হেফাজতে নেয় র‌্যাব। দুপুরের পর সোয়ারীঘাটে অবস্থিত এমপি হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। টানা কয়েক ঘণ্টার অভিযানে সেখান থেকে অবৈধ অস্ত্র, মদ, ৩৮টি ওয়াকিটকি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে এমন হাতকড়া উদ্ধার করা হয়। পৃথক অভিযানে চকবাজারের মদিনা আশিক টাওয়ারে ইরফান সেলিমের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব।
এক বছরের জেল: মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার দুপুর থেকে চলা হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর এই দণ্ড দেয়া হয়। র‌্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই দণ্ডের পাশাপাশি দু’জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করা হবে। ইরফান ও তার সহযোগীদের হাতে নৌ বাহিনীর এক কর্মকর্তা মারধরের শিকার হওয়ার জের ধরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সোয়ারীঘাটের দেবীদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে র‌্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। সাদা রঙের নয়তলা ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ইরফান সেলিম থাকেন জানিয়ে বিকালে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, ওই দুই ফ্লোর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার পাওয়া গেছে। আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। আর ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ, কালো রঙের এসব ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন। মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করার অপরাধে ইরফান ও তার দেহরক্ষীকে ছয় মাস করে প্রত্যেককে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে আশিক বিল্লাহ জানান।
পুরান ঢাকার ত্রাস ইরফান: দেবীদাস ঘাট লেন। চাঁন মিয়া দাদাবাড়ি। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে আভিজাত্য। মনে হবে কোনো রাজপ্রসাদ। এই বাড়িটির চার এবং পাঁচতলায় ছিল কন্ট্রোল রুম। এখান থেকেই সকল অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তুলে নিয়ে আসতেন যাকে তাকে। করতেন নির্যাতন। তিনি ঢাকা-৭ আসনের হাজী সেলিম ও নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর জামাতা পুরান ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম। যার নিয়ন্ত্রণে ছিল পুরান ঢাকার অলিগলি। গতকাল ওই  বাসায় র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এমপিপুত্র ইফরান ও তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে জেল দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ছয় মাস ও অবৈধ মাদক রাখার দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে দু’জনকে। তিনি জানান, র‌্যাব’র অভিযানে ৩৮টি ওয়াকিটকি, পাঁচটি ভিপিএস সেট, অস্ত্রসহ একটি পিস্তল, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফকেস, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন এবং সাত বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব’র জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান সেলিম জানিয়েছেন, এসব ওয়াকিটকির মাধ্যমে তিনি তার বাসার আশপাশের পাঁচ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা নেতাকর্মী ও অনুসারীদের সঙ্গে কথাবার্তা এবং যোগাযোগ রাখতেন। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাতেন।
র‌্যাব জানিয়েছে, উদ্ধার ভিপিএস সেটগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিটেক করতে পারত না। তার বাসার চার ও পাঁচতলার কন্ট্রোল রুম থেকে এসব উদ্ধার করা হয়। ১ টি ব্রিফকেস উদ্ধার করা হয়েছে যা ভিআইপি নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ সদস্যরা ব্যবহার করে থাকেন। ব্রিফকেস ও অন্যান্য সরঞ্জাম সহকারে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে লোক তুলে আনতেন বলে ধারনা করা হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এদিকে র‌্যাব’র অভিযানে তার দেহরক্ষী জাহিদের কাছ থেকে আরো প্রায় ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এসব অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইরফান সেলিম। আমাদের ধারণা এগুলো দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন। তার অস্ত্র দু’টির কোনো লাইসেন্স ছিল না। সবশেষ রাতে চকবাজার মদিনা আশিক টাওয়ারের ১৬ তলায় একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে নির্যাতন করার নানান আলামত পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, এই কক্ষে মানুষকে নির্যাতন করার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। ওদিকে হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমানের আদালত এই আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, রোববার রাতে এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও (সোমবার) ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘এরফানের গাড়ি ওয়াসিফকে ধাক্কা মারার পর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসঙ্গে বলতে থাকেন, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনি মেরে ফেলবো’- বলে কিল-ঘুষি মারেন এবং আমার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।’ ‘তারা আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। পরে আমার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডি থানার ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ মামলায় মোট পাঁচটি ফৌজদারি অপরাধের ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধগুলো হলো- দণ্ডবিধি ১৪৩ অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশের সদস্য হয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলকভাবে বলপ্রয়োগ করা, ৩৪১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৩৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশে আহত করা, ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার ওপর বলপ্রয়োগ করা এবং ৫০৬ ধারায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর