পুঁজিবাজারের যেসব বিনিয়োগকারী হিসাব-নিকাশ তেমন বুঝেন না, বাজারের বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা কম-তাদেরকে শেয়ারের পরিবর্তে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত খুবই সম্ভাবনাময়। অতীতে এখানে কিছু অস্বচ্ছতা ছিল। কোনো কোনো ফান্ডের টাকা ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এসব বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো ফান্ডের টাকা যাতে ভুল জায়গায় বিনিয়োগ না হয় সেটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পারসোনাল ফাইন্যান্স বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল 'আমার টাকা’র উদ্বোধন ও ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামে বিএসইসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ১০ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কোনো কোনো ফান্ড অনেক ভাল করছে।
ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের চেয়ে এখানে রিটার্ন অনেক লাভজনক।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানতে ৫-৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। এখান থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে কিছুই থাকে না। এসব বিবেচনায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং কিছু কিছু শেয়ার অনেক লাভজনক।
দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানুষের আয় বাড়তে থাকায় সঞ্চয়ও বাড়ছে। এতে বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ছে। সঞ্চয়কে বিনিয়োগে আনতে হলে বিনিয়োগের নানা বিকল্প খাত তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, বিকল্প বিনিয়োগের খাত হিসেবে বন্ডকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করছে বিএসইসি। নতুন করে সুকুক বন্ড আনার চেষ্টা করছি। এগুলো পুঁজিবাজারে আসলে রিটার্ন ভালো হবে। কারণ এখানে বিনিয়োগ করলে কর দিতে হবে না। নতুন নতুন সঞ্চয়ের প্রোডাক্ট নিয়ে আসছি। যাতে মানুষ উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্বে আসার আগে ৩ লাখ কোটি টাকার বাজারমূলধন ছিল। এখন ৪ লাখ কোটি টাকার মতো হয়েছে। আমরা এটাকে আরো বড় আকারে দেখতে চাই।
বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সহায়তা করছে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্প সুদের একটি তহবিল যোগান দিতে পারে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। পাশপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, প্রাণ গ্রুপসহ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের বন্ডে বিদেশিরা বিনিয়োগ করেছে। এখানে বীমা সেক্টর বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করে আরো অনেক মুনাফা অর্জন করেত পারে।
দেশের বীমা কোম্পানিগুলো বন্ডের বীমা করতে পারে কিনা তা বিবেচনা করে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি থার্ড পার্টি বীমা ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ফার্স্ট পার্টি ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানান। তাতে কোম্পানিগুলোর আয় অনেক বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বীমা কোম্পানিগুলোর খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছি। আগের কোম্পানিগুলো ৬৫-৭০ শতাংশ খরচ করতো। আমরা এটাকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছি। এতে এসব উদ্যোগ নেয়ার ফলে সম্প্রতি আমরা বীমা কোম্পানির শেয়ারে বড় একটা প্রতিক্রিয়া দেখতে পারছি।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অফ ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশ-এর সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম। আমার টাকা’র সম্পাদক জিয়াউর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।