× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে পীরগঞ্জ এলজিইডি’র অনিয়ম / টেন্ডার ছাড়াই ৩৬ লাখ টাকার কাজ

বাংলারজমিন

মো. রেজাউল প্রধান, ঠাকুরগাঁও থেকে
২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলার এলজিইডি’র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। মেইটেনেন্স, রাস্তাঘাট নির্মাণ, রিপেয়ারিং, কার্পেটিং সহ অন্যান্য কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে তাদেরকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়। এবার বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরাল নির্মাণেও দুর্নীতি করতে দ্বিধাবোধ করেননি পীরগঞ্জ এলজিইডি’র প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। বর্তমান ওই প্রকৌশলী জেলার হরিপুর উপজেলায় কর্মরত আছেন। সেখানেও তিনি দুর্নীতি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরজমিন পীরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা গেছে, ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যুরাল’- নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। ম্যুরাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ম্যুরালগুলোর দায়সারাভাবে তৈরি করে মোটা অংকের অর্থ ঘাপলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলজিইডি প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে কাগজে-কলমে টেন্ডার দেখানো হলেও ৩৬ লাখ টাকার নির্মাণকাজ করা হয়েছে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের এডিপি রাজস্ব উদ্বৃত্ত খাত থেকে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৮টি ম্যুরাল নির্মাণের জন্যে ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ নেয় উপজেলা পরিষদ। সরকারি নিয়ম-কানুন ও নির্মাণ কাজের নীতিমালা ভঙ্গ করে ব্যক্তিস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে মোটা অংকের কমিশন নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন ও কাজ বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হেয়-প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে ও পরিকল্পিতভাবে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে দায়সারা ভাবে ম্যুরাল তৈরি করেছেন। নির্মিত ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করে বিকৃতি করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর আস্থা ভাজন পীরগঞ্জ টিএন্ডটি রোড এলাকার মিজানুর রহমান মিজান নামে এক ঠিকাদারকে দিয়ে অতি গোপনে এসব ম্যুরাল তৈরি করে সিংহভাগ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ম্যুরালগুলো অভিজ্ঞ ও সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারা ডিজাইন না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে কম খরচে দায়সারাভাবে ডিজাইন করানো হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের প্রতিচ্ছবির পরিমাপ ও ডিজাইন সঠিক হয়নি। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ভোমরাদহ, খনগাঁও, কোষারাণীগঞ্জ, সৈয়দপুর, হাজীপুর, সেনগাঁও, জাবরহাট ও বৈরচুনা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এসব বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাণীশংকৈল উপজেলায় ইউএনও, স্থানীয় জাতীয় ও ইংলিশ ন্যাশনাল ডেইলি পত্রিকায় ম্যুরাল নির্মাণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে যথা নিয়মে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেছে। ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ম্যুরাল পরিমাপ ও ডিজাইন সঠিক না হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ভেঙে দিয়ে নতুন করে নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন নিযুক্ত ঠিকাদারকে। অথচ পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত ৮টি ব্যঙ্গ ম্যুরাল ভাঙা তো দূরের কথা নির্মাণ কাজের সময় সঠিকভাবে কাজের তদারকি করেননি এলজিইডি’র প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। পীরগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মিত ৮টি ম্যুরাল বিকৃতি ও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তৈরি না হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে অপসারণ করে নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন বলে সুশীল সমাজ মনে করেন। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা বর্তমান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার বলেন, আমার আসার বেশিদিন হয়নি, তবে আমার জানামতে ম্যুরাল নির্মাণ কাজগুলো ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামতক্রমে কোটেশনে করা হয়েছে। এডিপি প্রকল্পের তৎকালীন টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ইউএনও সাহেব যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবে করেছি, এর বেশিকিছু বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে এডিপি প্রকল্পের ডিডিও উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এডিপি প্রকল্পের ডিডিও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম মানবজমিনকে বলেন, কাজগুলোতো প্রকৌশলীর দপ্তর থেকেই হয়ে থাকে তাই টেন্ডার হলেও হয়ে থাকতে পারে। তবে এটা টেন্ডারেও করা যায় কোটেশনেও করা যায়। অপরদিকে ম্যুরাল নির্মাণকারী ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবরা বলেছেন আমি কাজ করে দিয়েছি মাত্র। কাজটি কীভাবে নিয়েছেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটি কোটেশনের মাধ্যমে আমাকে দেয়া হয়েছিল। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহারুল আলম মণ্ডল মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলবো। কাগজ-কলমে টেন্ডার দেখানো, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা, অর্থ ঘাপলা ও বিকৃতি ম্যুরাল নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর