× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রায়হান হত্যা / অপরাধে সক্রিয় ছিল হাসান ও আশেক এলাহী

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

আকবরের অপরাধ কর্মে সক্রিয় ভূমিকা ছিল এস আই হাসান ও এ এস আই এলাহীর। আকবর তাদেরকে দিয়েই নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটাতো বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। রায়হানকে নির্যাতনের আগে ও পরে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। ইতিমধ্যে বিষয়টি ধরা পড়েছে পুলিশের তদন্তেও। এ কারণে এস আই হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার ও আশেক এলাহীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে- মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই এখনো এই দুইজনের মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এ ছাড়া কনস্টেবল তৌহিদের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছিলো রায়হানের মা সালমা বেগমের কাছে। সেই তৌহিদও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
তবে পিবিআই বলছে- মামলার তদন্তকালীন সময়ে যাকে প্রয়োজন মনে করা হবে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এখন তাদের সব মনোযোগ আকবরের দিকে। পলাতক থাকা আকবরকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ১১ই অক্টোবর ভোরে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগরীর নেহারী পাড়ার যুবক রায়হানকে। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে ক্ষোভের অন্ত নেই। প্রথম দিকে আকবর ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের বিভ্রান্ত করলেও পরে তদন্তে সবকিছু খোলাসা হওয়ার পর ঊর্ধ্বতনরা দোষী পুলিশের পক্ষ নিচ্ছেন না। বরং অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে তারা মূল্যায়ন করছেন। আলোচিত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পিবিআই কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে। পুলিশের তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে- রায়হানকে নির্যাতনের মূল হোতা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বরখাস্ত হওয়া সাব ইন্সপেক্টর আকবর। আকবরই রায়হানকে বেশি নির্যাতন করেছে। তার নির্দেশে অন্যরাও নির্যাতন করেছে। ঘটনার দিন গভীর রাতে নগরীর কাস্টঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো রায়হানকে। আর এ গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলো এ এস আই আশেক এলাহী। সে রায়হানকে আটক করে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আশেক এলাহী প্রথমে ঊর্ধ্বতনদের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। এদিকে- রায়হানের পরিবারের অভিযোগের কাঠগড়ায় বরখাস্ত হওয়া এস আই আকবরের পাশাপাশি সহকারী সাব ইন্সপেক্টর আশেক এলাহীও। রায়হানের মা সালমা বেগম জানিয়েছেন- এখনো অনেক দোষী কর্মকর্তাকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এ এস আই আশেক এলাহীর নেতৃত্বে তার ছেলেকে আটক করা হয়েছিলো বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলো বন্দরবাজার ফাঁড়ির টুআইসি বরখাস্ত হওয়া এসআই হাসান উদ্দিন। আকবরের পর একদিনের জন্য এস আই শাহীনকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে শাহীনকে সরিয়ে নেয়া হলেও ফাঁড়ির দায়িত্ব দেয়া হয় পূর্বের টুআইসি হাসানকে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাদের মতামতের আলোকে এস আই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে- এস আই হাসানের কাছে দায়িত্ব দিয়েই আকবর পালিয়েছে। এক্ষেত্রে হাসানের বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ মেলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও এস আই হাসান সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবগত করেননি। এদিকে- রায়হান খুনের ঘটনার যে মোবাইল নম্বরটি নিয়ে তোলপাড় সেই মোবাইল নম্বরের মালিক বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল তৌহিদ। ঘটনার পর তৌহিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে- এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। রায়হানের পরিবারের দাবি- তৌহিদের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মা সালমা বেগমকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা জানানো হয়েছিলো। তৌহিদের মোবাইল ফোনে রায়হান শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন পিতা হাবিবউল্লাহর সঙ্গে। এ সময় রায়হান টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে যাওয়ার আর্তনাদও করেন। ওই দিন ভোরে রায়হানের পিতা হাবিবউল্লাহ ফাঁড়িতে গিয়ে তৌহিদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। এ সময় তৌহিদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরও। এখনো পিবিআই তৌহিদকে গ্রেপ্তার করেনি। রায়হানের মা সালমা বেগম সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে অনশন করার সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন- এস আই হাসান, আশেক এলাহী, তৌহিদসহ অন্য পুলিশদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামি গ্রেপ্তারেও পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে- পিবিআই ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন- তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা মিলবে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে- পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার পর সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলে নতুন কমিশনার হিসেবে গতকাল বিকালেই যোগদান করেছেন নতুন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। সিলেটে এসেই তিনি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাতে তিনি রায়হানের মাকে সান্ত্বনা জানাতে তার বাড়িতে যান। এ সময় পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ রায়হানের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে জানান- আকবর গ্রেপ্তার হবে। পুলিশ সব অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে বলে আশ্বস্ত করেন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম: অমানবিক নির্যাতনে রায়হান আহমদকে হত্যার ঘটনায় সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে গৃহীত কর্মসূচি স্থগিত করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া চেয়ারম্যান ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতি সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাই আইন লঙ্ঘন করে চলছে। নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা জনগণের টাকায় বেতন দিয়ে কোনো খুনি পুলিশ পুষতে চাই না। দুর্নীতিবাজ খুনি এস আই আকবর ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নেতৃবৃন্দরা বলেন, কিছু পুলিশ একের পর এক অপকর্ম করে চলছে। বিনা বিচারে হত্যা, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মাদক ও অস্ত্র দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রায়হান হত্যাকারীর মূল আসামি এস আই আকবরকে দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে লাগাতার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ জানান, আগামী ৫ই নভেম্বরের মধ্যে রায়হান হত্যাকারীর মূল আসামি এস আই আকবরকে গ্রেপ্তার করা না হলে, সিলেটবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর