সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে ফ্রান্স। মঙ্গলবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় বাস করা ফরাসি নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নাগরিকদের মহানবীর (সা.) কার্টুনের বিরুদ্ধে যেকোনো বিক্ষোভ এবং সব ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলার নির্দেশও দিয়েছে দেশটি।
নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিশেষত ভ্রমণের সময় এবং পর্যটক বা প্রবাসী সম্প্রদায়ের চলাচল বেশি এমন জায়গাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে বলা হল। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোঁবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক রীতিমতো ভাইরাল। অনেক দেশেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। মুখ খুলেছেন মুসলিম দেশের নেতারাও।
এর আগে গত বুধবার খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ, ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপরই ফ্রান্সের মুসলিমরা ম্যাঁক্রোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তাদের ধর্মকে দমন করা ও ইসলামফোবিয়াকে বৈধতা দিতে চেষ্টা করছেন তিনি।
ম্যাঁক্রোর এমন বিতর্কিত মন্তব্যের পরই তুরস্ক এবং পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ নিন্দা জানিয়েছে। এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দরকার।
আরব বিশ্বও ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়। আর প্যারিস থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এদিকে গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইরাকে রাবা আল্লাহ নামে একটি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, ফ্রান্সের কর্মকাণ্ডে বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলিম অপমানিত হয়েছে। দলটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের সদস্যরা প্রয়োজনে যেকোনও সময় যেকোনও জায়গায় প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার ফ্রান্সের কয়েকটি সরকারি ভবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সংকটাপন্ন ধর্ম বলে বর্ণনা করেছিলেন।
দেশটির এমন আচরণে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিমদের মধ্যে। কুয়েত, কাতার, মিশর, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক তো বটেই, ম্যাক্রোঁর সমালোচনা করেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যও।