নদীভাঙনে দিশাহারা যমুনা পাড়ের মানুষ। থামছে না ভাঙনের তাণ্ডব। সিরাজগঞ্জের জালালপুর ও খুকনিতে ৭টি গ্রাম বিলীনের পথে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও খুকনি ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডবে বিলীন হওয়ার পথে। বন্যার পানি কমতে ধাকায় যমুনা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে ভাঙনের এ তাণ্ডব শুরু হয়েছে। গ্রামগুলো হল- খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর, ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলা, বাঐখোলা ও কুঠিরপাড়া। ইতিমধ্যেই এসব গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এ সব এলাকার আড়াই হাজার হতদরিদ্র মানুষ বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে পথে বসেছে।
অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাও বিলীন হওয়ার পথে। চলতি বছর বর্ষার শুরুতে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বালুভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলার কারণে ওই গ্রামগুলোতে ভাঙন কিছুটা কম। কিন্তু অন্য গ্রামগুলি ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এলাকাবাসী ঘরবাড়ি ও জমিজমা হারিয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হচ্ছে। এ ভাঙনে ইতিমধ্যে প্রায় ২ শতাধিক বাড়িঘর, ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২টি মসজিদ, ২টি ঈদগাহ মাঠ, ১২০টি তাঁত কারখানা, ৪০০ বিঘা আবাদি জমি, ২ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১টি কবরস্থান, ১টি শ্মশান ঘাট, ১টি মন্দির ও ৪ শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এ বিষয়ে জালালপুর গ্রামের আসাদ আলী, আতিক হাসান, রহম আলী, বাবলু মিয়া, দেরাজ মোল্লা, আব্দুল হামিদ, দুলাল শেখ, তয়জাল মোল্লা, রবি চান, আলম শেখ, ব্রাহ্মণগ্রামের এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের নুরু মির্জা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এসব গ্রাম ও ঘরবাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মানুষজন সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। এ থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, এলাকার সব বাড়িঘর ভেঙে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন ঘরবাড়ি হারিয়ে পলিথিন টানিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। তাদের মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা নাই। তারা কি খায় কোথায় থাকে তার কোনো খোঁজ নেয় না কেউ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে এসব গ্রামের সব শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ ও জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সময় মতো ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ৭ গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু আছে তা রক্ষা করা না গেলে মানুষজন নিঃস্ব হয়ে পথে বসবে। তাই অবিলম্বে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, কয়েকদিন আগে সরজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছি। আশাকরি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ভাঙন রোধে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। করোনার কারণে এ প্রকল্পটি একনেকে পাস হতে বিলম্ব হচ্ছে। প্রকল্পটি পাস হলেই কাজ শুরু করা হবে।