× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমার ভেতর বিশ্বাস জন্মেছিল যে, আমি সবকিছুই করতে পারি

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার

আমার প্রথম শ্রেণির ছবিগুলো দেখলে মনে হয় ঐ রকম বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বেড়ে ওঠাটা কতো মজার এবং আনন্দের ছিল। কারণ, নানান স্থানের শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে মিলিত হতাম আর তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল সাধারণ পরিবারের আর বাকিরা ছিল শিক্ষাবিদদের ছেলেমেয়ে। ছুটির দিনে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের বৈচিত্র্য এখনো আমার মনে পড়ে। সেখান থেকেই আমি কয়েকটা ভাষায় দশ পর্যন্ত গণনা করতে শিখি। আমার এখনো মনে আছে যে, আমার মাসহ অন্য পিতা-মাতারা শ্রেণিকক্ষে বাচ্চাদের বিজ্ঞান এবং আর্ট প্রজেক্টে কীভাবে স্বেচ্ছায় গাইড দিতে হয় তা শেখাতেন।
আমার প্রথম শ্রেণির শিক্ষিকা মিসেস ফ্রাঁসেস উইলসন শিক্ষার্থীদের প্রতি ছিলেন প্রচণ্ড দায়িত্বশীল। পরবর্তীতে আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির হ্যাস্টিং কলেজ অব ল’ থেকে আইন নিয়ে গ্র্যাজুয়েট করি তখন সেখানে দর্শক সারিতে মিসেস উইলসন বসে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। মায়া এবং আমি যখন স্কুল শেষ করে বাসায় ফিরি তখনও দেখতাম মা কাজ করেন।
আমরা তখন শেলটনের কাছে দু’টি বাড়ির পর একটা বাসা নেই। আঙ্কেল অব্রের মাধ্যমে শেলটনের সঙ্গে আমার মায়ের পরিচয় হয়েছিল। দীর্ঘসময় তার সঙ্গে আমাদের ছিল ভালোবাসা, দেখাশোনা আর যোগাযোগের সম্পর্ক।  
লুজিয়ানা থেকে আসা রেজিনা শেলটন ছিলেন অব্রে’র আন্ট। তিনি এবং তার স্বামী আর্থার দুজন মিলে একটি নার্সারি স্কুল শুরু করেন। নিজেদের বাসার নিচেই এই স্কুলটির সূচনা করেন প্রথমদিকে এবং পরে তা স্থানান্তর করেন আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের পাশেই। শেলটন দম্পতি প্রতিবেশীদের সন্তানদের সুন্দর জীবন গড়ার কাজে নিজেদের নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের ডে কেয়ার সেন্টার ছিল চমৎকার। এর দেয়ালগুলো পূর্ণ ছিল ফেডেরিক ডগলাস, সোজার্নার ট্রুথ এবং হ্যারিয়েট টাবম্যানের মতো খ্যাতনামা মানুষদের ছবিতে পূর্ণ। আমি আর মায়া যখন ছোট ছিলাম তখন জর্জ ওয়াশিংটনের কথা জেনেছিলাম জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভার হিসেবে। মায়া তার শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষককে যখন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনে তখন আমরা হেসেছিলাম। এ সময় মায়া গর্ব করে বলেছিল, আমি প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে চিনি। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি বাদাম চাষ করেন।

শেলটন স্কুল শেষে দৌড়ে চলে আসতেন আমাদের এখানে এবং আমরা চমৎকার বিকাল উপভোগ করতাম। আমরা যা করতাম তা বাসার মধ্যেই। ছোট ছোট বাচ্চারা বাসার আশেপাশেই দৌড়াদৌড়ি করতো এবং অনেক মজার মজার খেলাধুলা করতাম। মায়া এবং আমার অবিশ্বাস্যভাবে মিসেস শেলটনের মেয়ে এবং তার অধীনে থাকা বাচ্চাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। আমরা বিয়ের ভান করতাম জ্যাকসন ফাইভের সঙ্গে। মিশেলের সঙ্গে মায়া এবং আমি টিটোর সঙ্গে (তোমাকে অনেক ভালোবাসি, টিটো!)।  

ক্রমশই মিসেস শেলটন মায়া এবং আমার দ্বিতীয় মা হয়ে গেলেন। শালীনতা এবং উষ্ণতা সমান হয়ে গেল। তিনি দক্ষিণাংশের প্রথা অনুযায়ী আতিথেয়তা এবং সেবা দিতেন। তার পাউন্ড কেক এবং মনোলোভা বিস্কুটের কথা নাইবা বললাম। এসবই ছিল আমার প্রিয়। তার ব্যতিক্রমী স্মার্টনেস এবং অস্বাভাবিক উদারতা আমাকে গভীরভাবে আলোড়িত করতো।

লেমন বার ভাগ করে খাওয়ার দৃশ্য কখনো ভুলতে পারবো না। এক বিকালে মা’র রান্নার বই পড়তে গিয়ে আমি লেমন বার তৈরি করা শিখেছিলাম। তা আমি ভালোভাবে তৈরি করতে শিখি এবং তাদের সামনে উপস্থাপন করি। আমি তা একটি প্লেটে ‘সারান রেপ’সহ পরিবেশন করি যখন আমার মা এবং শেলটন তাদের বাসার খাবার টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। শেলটন তখন চা খাচ্ছিলেন এবং তার বোন আন্ট বিয়া এবং আমার মা-ও ছিলেন। আমি গর্বের সঙ্গে তা দেখিয়েছিলাম এবং মিসেস শেলটন সেখান থেকে একটি বড় অংশ খেয়েছিলেন।

আমি সেই খাবারটিতে চিনির পরিবর্তে লবণ ব্যবহার করেছিলাম। আমার জানা ছিল না বলেই এমনটি হয়েছে। আমার মা এবং মিসেস শেলটন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পশ্চিমা ঢঙে। খাবারের স্বাদ বুঝতে তিনি জিভ কাটছিলেন। বলেছিলেন, খুবই মজার হয়েছে। এ কথার মধ্য দিয়ে আমি যে ব্যর্থ হয়েছি আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমি ভেবে নিয়েছি আমি বেশ ভালো একটি কাজ করেছি। আর তাতে ছোট একটি ভুল হয়েছে। সামান্য একটু লবণ বেশি হয়েছে। এটা ছিল আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করার কিছু মুহূর্ত। আমার ভেতর বিশ্বাস জন্মে যে, আমি এখন সবকিছুই করতে পারি।
মিসেস শেলটন আমাকে শিখিয়েছেন অনেক কিছু। তিনি সবসময় মায়ের মতোই আমাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিতেন, ভালো কিছু করার জন্য প্রেরণা দিতেন এবং জড়িয়ে ধরে বলতেন, তুমি এরকমই করবে। আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি পালক সন্তানদের মধ্য থেকে সেন্ডি নামে একটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। যে ছিল পরবর্তীতে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তিনি মানুষের মধ্যে সম্ভাবনা দেখতেন। তিনি যতটা আমাকে পছন্দ করতেন আমি তার চেয়েও অনেক বেশি তাকে ভালোবাসতাম। প্রতিবেশীদের বাচ্চারা রাস্তাঘাটে পড়ে গেলে তিনি তাদের যত্ন নিতেন। তার মধ্যে এমন ধারণা ছিল লড়াই করা এসব ছেলে বা মেয়েরা একসময় বড় হবে।

আমি যখনই শেলটনের বাসা থেকে ফিরতাম দেখতাম মা নানারকমের কাজের মধ্যেই ব্যস্ত। হয়তো তিনি নোট লিখছেন নয়তো রাতের খাবার তৈরি করছেন। সকালের নাস্তা একপাশে রাখলে বাকি সব রান্নাই মা নিজ হাতে তৈরি করতে পছন্দ করতেন। আর আমার পছন্দ ছিল রান্নাঘরে মায়ের পাশে বসে তা দেখা এবং রান্না করা খাবারের স্বাদ পরখ করা। মা’র ছিল চাইনিজ ধরনের একটি দুর্ধর্ষ কাটার। এটা দিয়ে তিনি কাটাকাটি করতেন এবং একটি কাপবোর্ড ভর্তি ছিল মসলা সাজানো। এখান থেকে কোন মসলা ব্যবহার করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে বুঝতে পারতাম এই রান্নাটি ভারতীয় নাকি অন্য কোনো রকমের হবে। আর সেই খাবারটি আমি খুব পছন্দ করতাম। তিনি এর সঙ্গে যোগ করতেন চিংড়ির শুঁটকি এবং সস। এটা মিশিয়ে গম্বু নামক একটি খাবার তৈরি করতেন। অথবা এর সঙ্গে হলুদ আর সরিষা মিশিয়ে ভাজি করতেন।

কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর