× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মায়ের সহানুভূতির জন্য ভান করতাম

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
১৭ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

আমার মা বিজ্ঞানীর মতো রান্না করতেন। তিনি রান্না নিয়ে নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। একরাতে হয়তো ওয়েস্টার বিফ স্টির ফ্রাই তো আরেক রাতে পটেটো লেটকেস রান্না করতেন। বাসে চড়ে যাবার সময় আমার বন্ধুরা আমার কাছে জানতে চাইতো তাদের হাতে থাকা বোলোগনা স্যান্ডউইচ এবং পিবিএন্ডজেএস দেখিয়ে ‘কমালা, তুমি কি এনেছ?’ আমি আমার মায়ের দেয়া হাসিমুখের ছবি বা প্রতীক সংবলিত ব্রাউন রঙের প্যাকেট খুলে দেখতাম। ক্রিম চিজ এবং অলিভ অয়েল দিয়ে ডার্ক রাই। আমি এটা স্বীকার করে নেই  সবরকম পরীক্ষা সফল হতো না। অন্তত আমার স্কুলের প্লেটে দেয়ার মতো নয়। তাতে কিছু যায় আসে না এটা আমার মায়ের তৈরি বিশেষ কিছু, যা সকলের চেয়ে ব্যতিক্রম।
মা রান্না করার সময় এরিথা ফ্রাঙ্কলিনের গান শুনতেন আর আমি সে সময় ঘরে তার তালে তালে নাচতাম। আমার মনে হতো ঘরের ভেতরটা যেন আমার নাচের মঞ্চ। আমরা কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার কর্মীদের জাতীয় সংগীতের রূপ পাওয়া গানটি শুনতাম নিনা সাইমনের কণ্ঠে। সেটা ছিল ‘আমরা তরুণ, আমরা প্রকৃতির উপহার কৃষ্ণাঙ্গ’।

আমাদের কথাবার্তা বেশির ভাগ সময় চলতো রান্নাঘরে। রান্না এবং খাওয়া আমাদের পরিবারের সকলেই একসঙ্গে করতাম। আমি এবং মায়া যখন ছোট তখন মা আমাদেরকে বেশির ভাগ সময় যে খাবার পরিবেশন করতেন তাকে তিনি ‘স্মরগেসবোর্ড’ বলতেন। মা রুটি পিস করার জন্য কুকি কাটার ব্যবহার করতেন তারপর এর সঙ্গে সরিষা, মেওনেস, আচার এবং ফ্যান্সি টুথপিক ব্যবহার করতেন। আগের রাতে খাবার পর যা বেচে যেত তা রেখে দিতেন ফ্রিজে। পরদিন সেটাই পাউরুটির ভাঁজে ভাঁজে দিয়ে দেয়া হতো। স্মরগেসবোর্ড জিনিসটি কী এটা বুঝতে আমার কয়েক বছর সময় লেগেছিল। আসলে স্মরগেসবোর্ড হলো বেচে যাওয়া খাবার।

প্রচুর হাসাহাসিও হতো এ সময়টাতে। আমার মায়ের পছন্দের ছিল পাপেট শো ‘পানচ অ্যান্ড জুডি’। যেখানে জুডি একটি ঘূর্ণায়মান পিনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতো। মা রান্নাঘরে যখন রান্নায় ব্যস্ত তখন তিনি আমাদের তাড়া করার ভান দেখিয়ে সজোরে হাসতেন।

এটা যে সবসময় হাসির হতো তেমনটি নয়। শনিবার দিনটি ছিল সবাই মিলেমিশে কাটানোর এবং অ্যাসাইনমেন্ট দিবস। সেদিন আমার মা থাকতেন কড়া মেজাজে। তিনি নিজেকে সে জন্য তৈরি করতেন। আমি এবং মায়া কখনই মায়ের প্রত্যাশার কাছে কোনোভাবেই পর্যন্ত পৌঁছতে পারতাম না।
‘আমি কেন তোমাদেরকে সাধুবাদ দেব কারণ আমি তো এটাই চাই।’ আমি কোনো প্রশংসা শুনতে চাইলেই মা এরকম উপদেশ দিতেন এবং আমি যখন মায়ের সহানুভূতির জন্য ভান করতাম তখন তিনি তা পাত্তা দিতেন না। তার প্রথম কথাই থাকতো, ‘ভালো, তুমি কি করেছো?’ সে সময়টার কথা মনে হলে এখনো ভাবি তিনি আমাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন আমার মধ্যে শক্তি এবং ক্ষমতা আছে তার। যথেষ্ট হয়েছে, কিন্তু তা এখনো আমাকে উত্তেজিত করে।

সেদিনের সেই কঠোরতা আমার মধ্যে সবসময় ভালোবাসা, আনুগত্য ও দায়বদ্ধতা হিসেবেই দেখা দিয়েছে। যদি মায়া এবং আমার কখনো খারাপ সময় আসতো, প্রকৃতি যদি হতো হতাশাজনক তখন মা সবসময় জন্মদিন না অথচ জন্মদিনের মতোই অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন, কেক আনতেন, উপহার দিতেন। অন্যসময় তিনি আমাদের পছন্দের কিছু করতেন। যেমন চকলেট চিপস, প্যানকেক বা ‘স্পেশাল কে’ বিস্কুট (কে-তে কমালা)। কখনও মা সেলাই মেশিনে আমাদের জন্য বা বারবি ডলের জন্য কাপড় তৈরি করতেন। এমনকি মায়া এবং আমাকে আমাদের পারিবারিক গাড়িটির রং পছন্দ করতে বলতেন। সেটি ছিল ডস ডার্ট। আমরা হলুদ রঙটি বেছে নিয়েছিলাম। এসময় এটিই ছিল আমাদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের। আমাদের পছন্দ তিনি মেনে না নিতে পারলেও তা আমাদের কখনো বুঝতে দিতেন না। (হলুদ রঙের ভালো দিক হচ্ছে, খুব সহজেই তা পার্কিংলটে খুঁজে পাওয়া যেত)।
সপ্তাহে তিন দিন আমি হেঁটে হেঁটে মিসেস জোনসের বাসায় যেতাম। তিনি ক্ল্যাসিকেল ঘরানার পিয়ানো বাদক ছিলেন। এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের জন্য খুব বেশি সুযোগ ছিল না। সেজন্য তিনি এ ক্ষেত্রটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কঠোর এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। আমি তার কাছে তালিম নিতে গিয়ে কতক্ষণ হয়েছে সময় দেখতাম আর এ সময় তিনি আমাকে রুলার দিয়ে টোকা দিতেন। অন্য রাতে আমি আন্ট মেরি এবং আঙ্কেল শেরম্যানের বাসায় যেতাম দাবা খেলার জন্য। তিনি ছিলেন খুবই ভালো দাবাড়ু। তিনি আমাকে দাবা খেলার বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে কথা বলতেন। আপনার প্রতিপক্ষের চাল বুঝে খেলতে হয়। এক্ষেত্রে কৌশলী হতে হয়, পরিকল্পনা থাকতে হয়, সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে এমন অনেক কিছু ভাবতে হয়। এভাবে করেই তাদেরকে পরাজিত করতে হয়। প্রতিটি বারই তিনি আমাকে জিতিয়ে দিতেন।

রোববার মা আমাদেরকে ২৩তম এভিনিউর চার্চে পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে আরো অনেক ছেলেমেয়ে আসতো। আর এটা ছিল মিসেস শেলটনস স্টেশন ওয়াগনের পেছনে। চার্চে বাইবেল থেকে আমাদেরকে প্রথমে যে শিক্ষা দেয়া হতো তা হলো ঈশ্বরকে ভালোবাসা, সেই ঈশ্বর যিনি আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন যারা নিজেরা কথা বলতে পারে না তাদের পক্ষে কথা বলতে। গরিব এবং অভাবীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে। এখানেই আমি আরো শিখেছি বিশ্বাস হলো একটি ক্রিয়াপদ। আমি বিশ্বাস করি, আমাদেরকে বিশ্বাসের ওপরই বাঁচতে হবে এবং কাজেকর্মে বিশ্বাসের প্রদর্শন করতে হবে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর