× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমি অসহায় এবং বিব্রত বোধ করতাম

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
২২ নভেম্বর ২০২০, রবিবার

ভাগ্যক্রমে তখনো আমি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে চাকরি করি। তারা আমাকে সেখানে দাপ্তরিক কাজে অব্যাহতভাবে রাখতে চায়। আমাকে ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ কিন্তু বাসা থেকে গিয়ে অফিস করা আমার জন্য ছিল খুবই কষ্টের। এ সময় কখনো কখনো নিজেকে অসম্পূর্ণ এবং অযোগ্য মনে হতো। আমার সঙ্গে অন্য যারা এসেছিল তারা পাস করে গেছে এবং তারা আমাকে ছাড়াই তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করছে। আমার মনে আছে যখন কারো অফিসের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতাম তখন শুনতে পেতাম তারা কেউ বলাবলি করছে সে তো অনেক স্মার্ট কিন্তু পাস করতে পারে না কেন?

আমি এতে খুবই অসহায় এবং বিব্রত বোধ করতাম। আমার মধ্যে আতঙ্ক এবং ভীতি কাজ করতো এই ভেবে যে, লোকজন বুঝি আমাকে প্রতারক ভাবছে।
কিন্তু আমি মাথা উঁচু করে চলতাম এবং প্রতিদিন অফিস করতাম। আমি আমার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় পাস করলাম। আমি সেদিন গর্বিত এবং সম্মানিত বোধ করেছিলাম যেদিন আমাকে আদালতের কর্মকর্তা হিসেবে শপথ পড়ানো হয় এবং আমি সেখানে কাজ শুরু করি। কিন্তু এখানে যা দেখা গেল আইনের স্কুল অথবা কোনো বারের পরীক্ষায় যা করেছি বাস্তবে তা শেখানো হয় না। প্রথম প্রথম আমার কাছে মনে হতো আমি নতুন কোনো এক গ্রহে অবতরণ করেছি। সেখানে আমি বাদে অন্যরা সবাই কথা বলে। কেরানি হিসেবে কোর্টের তত্ত্বাবধানে সেখানকার মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। কিন্তু এই প্রথমবার আদালতের মুখোমুখি আমি।  

আমি ডজনখানেক মামলা নিয়ে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি চর্চা করেছি এর ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে, কি জিজ্ঞাসা করবো তা নিয়ে, আইনি দিক মাথায় নিয়ে তা তৈরি করেছি। আমি গবেষণা করেছি এবং চর্চা করেছি প্রতিটির ধরন নিয়ে। এখানে আমি নারী অ্যাটর্নিদের জন্য সব রকম বিষয় আমলে নিয়েছি। তখন আদালতে নারীদেরকে প্যান্ট পরতে দেয়া হতো না। আমি যতদূর পারি তার সবকিছুই করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই অসমতাটা এতো বেশি ছিল যে, আমার কখনো কখনো মনে হতো অনেক কিছু করার আছে। আমি যখন আদালতের ভেতর দিয়ে চলি তখন দেখতে পাই বারের এপাশ ওপাশে লোকজন বসা। যেখানে আলাদা আলাদা স্থানে বসে আছেন বিবাদী, পরিবার, সাক্ষী এবং অন্যসব পর্যবেক্ষকরা। বারের সামনের দিকের আসনগুলো রাখা হয়েছে আইনজীবীদের জন্য। তাদের পাশেই আমি বসতাম।

আমার ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা এবং উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু সর্বোপরি আমি যে সম্মান পেয়েছি এবং যে বড় রকমের দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়েছে সে বিষয়ে আমি ছিলাম সচেতন। সে কাজটি হলো ঐসব মানুষকে রক্ষা করা। যারা সমাজের সবচেয়ে বিপন্ন এবং যাদের কথা কেই শুনে না। যখন আমার পালা এলো আমি বিচারকের টেবিলের সামনে ওঠে দাঁড়ালাম সেখান থেকে পডিয়ামে চলে গেলাম।  সব বিচারক যে কথাটি বলে আমি সে কথাটিই বললাম, তা হলো, ‘কমালা হ্যারিস, জনগণের জন্য।’

যুক্তরাষ্ট্র্রের বিচার ব্যবস্থায় আমাদের যে কারও একজনের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হলে সেটাকে সবার জন্য অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় শক্তিশালীরা দুর্বলদের ক্ষতির চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে দুর্বল পক্ষ একাই যেন বিচারের মুখোমুখি না হয় আমরা সেটা প্রত্যাশা করি। বিষয়টিকে আমরা সামষ্টিকভাবে দেখি। এ জন্য বিচারকরা দোষীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা প্রতিনিধিত্ব করেন জনগণের, একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর।

আমি যখন ভিকটিমদের নিয়ে কাজ করেছি তখন এই নীতি আমার সামনে ছিল। এইসব ভিকটিমদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাহিনী ক্রস চেক এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত বিবরণ এসব কারো সঙ্গে ভাগ করা ছিল বড় রকমের সাহসের। যখন তারা অবস্থান নেন তাদের সে অবস্থান হয় আমাদের সবার জন্য মঙ্গলের। যাতে আইন লঙ্ঘনকারীকে পরিণতি ভোগ করতে হয় এবং জবাবদিহিতায় আসতে হয়।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর