× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে চায় আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান

প্রথম পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৩ নভেম্বর ২০২০, সোমবার

চীনের আরেক শীর্ষ পর্যায়ের কোম্পানি বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে টিকার ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য আবেদনও করেছে বলে জানা গেছে। তারা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে আলাপ- আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি’র এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, চীনের আরেকটি কোম্পানি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি চীন সরকারের স্পন্সর একটি কোম্পানি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, চীনের নামকরা প্রতিষ্ঠান আনহুই জেফেই লংকম বায়োলজিক ফার্মাসি বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করতে খুবই আগ্রহ দেখিয়েছে। কোম্পানিটির টিকার ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য আবেদনও করা হয়েছে।
তাদের ভ্যাকসিন নিরাপদ বলে কোম্পানিটি দাবি করেছে। কোম্পানিটির ভ্যাকসিনের নাম দেয়া হয়েছে জেডএফ২০০১।  
এদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ আবার হঠাৎ অবনতি হয়েছে। শনাক্তের হারও হু হু করে বাড়ছে। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত প্রায় এক সপ্তাহে এই হার বেড়েই চলছে। চলতি শীতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বড় আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি প্রতিরোধে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কার্যকরী কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি দুনিয়ায়। তাই মরণব্যাধি ভাইরাসটি রোধে প্রত্যেকেই তাকিয়ে আছেন নিরাপদ একটি ভ্যাকসিন বা টিকার দিকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আমরা একটি চুক্তি করেছি। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ৩ কোটি ডোজের। অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ৩ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে আমরা সেখান থেকে ভ্যাকসিন নিতে পারবো। যাদের ভ্যাকসিনের এডভান্স পর্যায়ে রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। রাশিয়া, ফ্রান্স এবং আমেরিকাসহ ৫/৭টি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেছেন, ইদানীং আমরা দেখছি সংক্রমণের হার বাড়ছে, মৃত্যুর হারও একটু বাড়ছে। অর্থাৎ, আমরা একটু বেখেয়ালি হয়ে গেছি। আমরা মাস্ক সেভাবে পরছি না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি না। কিন্তু আমাদের মাস্ক পরতে হবে। সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ চালু করেছে। সবাই মিলে যদি এটা মানা হয়, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছি। যখনই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে, বাংলাদেশ প্রথম পর্যায়েই ভ্যাকসিন আনবে। সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।
এদিকে গত ২৭শে আগস্ট বাংলাদেশ সরকার চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। আইসিডিডিআর,বি’ এই পরীক্ষা করার কথা ছিল। গত ২৪শে সেপ্টেম্বর চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি তাদের আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়কে। সেখানে কোম্পানিটি তাদের ‘অর্থনৈতিক ক্রাইসিস’-এর কথা জানিয়ে করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে বাংলাদেশ সরকারকে ‘কো-ফান্ডিং’ করার জন্য অনুরোধ করে। কারণ হিসেবে তারা চিঠিতে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে তাদের। চিঠিতে সিনোভ্যাক বলেছে, আমাদের কাছে যে ফান্ড ছিল তা অন্যান্য দেশে ট্রায়ালের জন্য বিতরণ করা হয়েছে এই মুহূর্তে। তাই বাংলাদেশে ট্রায়াল করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে নেই। গত ১৮ই জুলাই চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির ভ্যাকসিন করোনাভ্যাককে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এরপর সিনোভ্যাককে ট্রায়ালের অনুমতি দেয়া হয় গত ২৭শে আগস্ট।
অন্যদিকে ফরাসি ওষুধ কোম্পানি সানোফির উদ্ভাবিত টিকার ট্রায়ালের (কার্যকারিতা পরীক্ষা) প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ইতিমধ্যে প্রটোকল বা গবেষণাবিধি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিচার্স কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুুয়া বলেন, সানোফির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে আসলেই চুক্তি করা হবে। প্রাথমিকভাবে গবেষণাবিধি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিচার্স কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি’) তৃতীয় ধাপের টিকাটির ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। আইসিডিডিআর,বি’তে চীনের সিনোভ্যাক ও বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের টিকার ট্রায়ালের নতুন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন, রাশিয়া, ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে টিকা আনার সম্ভাব্য বিকল্প পথ খুঁজে দেখছে। কোভ্যাক্সের (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস) মাধ্যমে টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা দেশে আনতে সরকার, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং দেশের খ্যাতনামা বৃহৎ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে চলতি মাসের ৫ই নভেম্বর। এতে দেড় কোটি মানুষকে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হবে।
গত ২৬শে আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক আলোচনা সভায় করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে জানতে চাইলে টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে। বাংলাদেশে হু’র মাধ্যমে টিকা পেলেও আসবে কয়েক দফায়। লাগবে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে প্রথম দফায় করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা যারা তারা পাবেন ৫১ লাখ ভ্যাকসিন। দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ হারে প্রথমে এটা পাওয়া যাবে। এরপর যাদের বয়স বেশি (৬০-বছরে উপরে) এবং জটিল রোগে (কো-মরবিডিটি) ভুগছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য গত ৯ই জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে ২০ শতাংশ হিসেবে উল্লিখিত মোট ভ্যাকসিন আসবে দেশে। দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ২০ শতাংশ হারে এই টিকা পাবে। ডিসেম্বরে টিকা উৎপাদন হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি এই টিকা হাতে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব কিছু টিকা উৎপাদানের উপর নির্ভর করছে। ২০ শতাংশ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবো যাবে কিনা জানতে চাইলে লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, এটা কো-ফাইন্যান্সিং হিসেবে আসবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর