× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আরব লীগের গোপন খবর যেভাবে পৌঁছে যায় জেরুজালেমে

অনলাইন

মেইর জামির
(৩ বছর আগে) নভেম্বর ২৩, ২০২০, সোমবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিন ঘিরে বৃটিশ সামরিক বাহিনীর পরিকল্পনা সম্পর্কে মারদামের দেয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয় ১৯৪৬ সালের বিভিন্ন ঘটনায়। প্রথমত, ওই বছরের মে মাসে আরব লীগের সচিব ও বৃটিশ এজেন্ট আব্দ আল-রহমান আল-আজমের সঙ্গে মিলে কায়রোর ইনশাস প্রাসাদে আরব নেতাদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেন ব্রিগ্রেডিয়ার ইলটিড ক্লেটন (মধ্যপ্রাচ্যে বৃটিশ গোয়েন্দা প্রধান)। ওই সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো প্রস্তাব রাখা হয় যে, জায়নিজম কেবল ফিলিস্তিনের জন্য নয়, আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্যও বিপজ্জনক। পরবর্তীতে জুন মাসে দামেস্কের নিকটস্থ ব্লৌদান গ্রামে আরব লীগ পরিষদের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের কিছু গোপন প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় যে, আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য জায়নিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ানোতেই বিপদ নিহীত। তেমনটা হলে ফিলিস্তিনের অর্থ, অস্ত্র ও জনশক্তি সরবরাহ করতে বাধ্য হবে আরবরা।

ব্লৌদানের বৈঠকে মারদাম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছিলেন সাসনও। বৈঠক শেষে তিনি বৈঠকের গোপন প্রস্তাবনার তথ্যগুলো নিয়ে জেরুজালেমে ফেরত যান।
বৃটিশ সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার পরবর্তী কিছু পদক্ষেপ মারদামের তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়।
১৯৪৬ সালের ২৯শে জুন কয়েকটি বৃটিশ সেনাবাহিনী ইউনিট জুয়িশ এজেন্সির নেতাদের গ্রেপ্তার করে। এই অভিযান ‘দ্যব অগাথা অপারেশন’ বা হিব্রুতে ‘ব্ল্যাক সাবাথ’ নামে পরিচিত। গ্রেপ্তারকৃত এজেন্সি নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এজেন্সির পররাষ্ট্র নীতিমালার প্রধান মোশে শ্যারেট। এছাড়া, জেরুজালেমে এজেন্সির সদর দপ্তর থেকে বিশাল পরিমাণের নথিপত্র জব্দ করা হয়। অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে বিশাল সংখ্যার কিবুতজিমে তল্লাশি চালানো হয়। এসব অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল হাগানাহকে নিরস্ত্রীকরণ করা ও ‘চরমপন্থি নেতৃত্ব’ অর্থাৎ বেন-গুরিয়নকে সরিয়ে সেখানে মধ্যপন্থিদের বসানো।

তবে বৃটিশদের অভিযান ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়। ওই অভিযানের বিষয়ে দুই মাস আগেই হাগানাহ’র কাছে তথ্য ছিল। বেন-গুরিয়নও গ্রেপ্তার হওয়া এড়াতে পেরেছিলেন। অভিযানের সময় তিনি ছিলেন প্যারিসে। বৃটিশরা জায়নিস্ট আন্দোলনে ফরাসি সমর্থনের প্রমাণ বের করারও চেষ্টা চালিয়েছিল। অভিযানে সবার আগে এলিয়াহু সাসনের নথিপত্রগুলো জব্দ করেছিল তারা। কিন্তু তাতে ফরাসিদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক কিছুই ছিল না।

অগাথা অপারেশনের পক্ষে সাফাই গাইতে, ২৫শে জুলাই, জেরুজালেমের কিং ড্যাভিড হোটেলে বোমা হামলার দুইদিন পর একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে বৃটিশ সরকার। তাতে বিভিন্ন গোপন সাংকেতিক কথোপকথন ছিল। বৃটিশরা দাবি করে, এসব কথোপকথন থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জুয়িশ এজেন্সি ও হাগানাহ ওই সন্ত্রাসী হামলার পেছনে জড়িত ছিল। এর দুইদিন পর প্যারিসে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বেন-গুরিয়ন। তাতে বৃটিশদের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। একইসঙ্গে ওই হামলার জন্য রেভিশনিস্ট ইরগুন (ইতজেল) মিলিশিয়াদের প্রতি তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। ব্ল্যাক সাবাথ অভিযানের জন্য কায়রোতে সক্রিয় বৃটিশ সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।

২৩শে আগস্ট মাপাই পার্টির এক সম্মেলনে বৃটিশদের অভিযান নিয়ে আরো খোলাখুলিভাবে কথা বলেন বেন-গুরিয়ন। তিনি বলেন, বৃটিশরা ২৯শে জুনের হামলার পরিকল্পনা করেছিল এ বছরের মার্চ বা এপ্রিলে। এর পরিকল্পনাকারীরা হচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে বৃটিশ নীতিমালা নির্ধারকরা। তারা হচ্ছে, কূটনৈতিক, সামরিক ও উপনিবেশবাদী আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়ামূলক চক্র। আর তাদের কেন্দ্র হচ্ছে কায়রোতে।
বস্তুত, মারদামের সরবরাহকৃত তথ্যের সুবাদে বেন-গুরিয়ন এসব পরিকল্পনা সম্পর্কে আগ থেকেই জানতে পেরেছিলেন।

স্ট্রিংস অ্যান্ড ট্রিগারস
১৯৪৬ সালের ডিসেম্বরে, গ্রেটার সিরিয়া পরিকল্পনা নস্যাতে ভূমিকা রাখায় তৎকালীন সিরীয় প্রধানমন্ত্রী সাদাল্লাহ আল-জাবিরিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট কুয়াতলিকে বাধ্য করেন ক্লেটন। আল-জাবিরির জায়গায় ফের ক্ষমতায় বসানো হয় জামিল মারদামকে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল, মারদাম যেন সিরীয় পার্লামেন্টে গ্রেটার সিরিয়া পরিকল্পনার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু মারদাম ততদিনে বৃটিশদের কাছ থেকে দূরে সরে আসতে শুরু করেছেন। তিনি বরং ফরাসিদের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন। অবশ্য বৃটিশরা তখনো তাকে একজন বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসেবে বিবেচনা করতো। সিরিয়ার সরকারি নথিপত্রে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনে সিরীয় রাষ্ট্রদূতকে এক সতর্কবার্তায় মারদাম বলেছিলেন, ‘আমাদের বৃটিশ বন্ধুরা আমাদের সতর্ক করছে যে, ফরাসিরা সিরীয় মরুভূমির দ্রুজ ও বেদুইনদের সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আদতে এসব করছে বৃটিশদের এজেন্টরাই।’

মারদাম দামেস্ক থেকে কায়রোতে ফেরত যাওয়ায় ফরাসিদের জন্য সুবিধা হয়। তারা মারদামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারতো। সাসনের মধ্যস্থতার আর প্রয়োজন হয়নি। ১৯৪৬ সালের গ্রীষ্মে সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ফরাসিরা। দামেস্কে একটি কনস্যুলেট স্থাপন করে তারা। ওই কনস্যুলেটের মাধ্যমে কূটনীতিকদের ছদ্মবেশে কাজ করতে শুরু করে গোয়েন্দারা। এই গোয়েন্দারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বৃটিশদের মধ্যে কোনো সন্দেহ না জাগিয়ে মারদামের সঙ্গে দেখা করতে পারতো।

যাই হোক, বৃটিশরা ফিলিস্তিনে জোর খাটিয়ে ইহুদিদের পরাস্ত করতে না পারায় সে দায়িত্ব বর্তায় আরব সেনাদের ওপর। এই পর্যায়ে শুরু হয় ১৯৪৭ সালের আগস্টে ও সর্বোচ্চ রূপ ধারণ করে ১৯৪৮ সালের মে মাসে যখন আরব সেনারা নবসৃষ্ট ইসরাইলের ওপর হামলা চালায়। জেরুজালেমে নিযুক্ত তৎকালীন ফরাসি দূত রেনে নেভিল এই পর্যায়ে, বৃটিশদের যথাযথভাবে ‘স্ট্রিং পুলারস’ ও আরব সেনাদের ‘স্কুইজারস অব দ্য ট্রিগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৯৪৮ সালের যুদ্ধে আরবদের পরাজয়ের পর সিরিয়া, মিসর ও ইরাকের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। এই অস্থির পরিস্থিতির শিকার হন জামিল মারদাম। সিরিয়ার প্রকট অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে, ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি আবার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি কায়রোতে কাটান। সেখানেই ১৯৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে বর্তমান অবধি ফরাসি ও জায়নিস্টদের সঙ্গে তার গোপন অধ্যায়ের কথা অজানাই থেকে গেছিল।

১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেন-গুরিয়ন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্ট বেভিনের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করেন। সে সময় বেভিনের কাছে আরব নেতা হিসেবে মারদামের প্রশংসা করেন তিনি। হয়তো পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে মারদামের বিষয়ে আরো উষ্ণভাবে নিজেকে ব্যক্ত করতেন তিনি।

(মেইর জামির নেগেভের বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির একজন এমিরেটাস অধ্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যে অ্যাংলো-ফরাসি যুদ্ধ ও ইসরাইল প্রতিষ্ঠা নিয়ে তার একটি বই আগামী বছর প্রকাশিত হবে)

(ইসরাইলি পত্রিকা দ্য হারেৎস থেকে অনূদিত)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর