× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশে ৯০০ অবৈধ মাদক নিরাময়কেন্দ্র

এক্সক্লুসিভ

আল-আমিন
২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে সাইন বোর্ড সর্বস্ব অনুমোদনহীন অবৈধ মাদক নিরাময়কেন্দ্র। যেগুলো কেন্দ্র  থেকে মাদকাসক্তদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সম্ভাবনা কম। বরং সেখানে রোগী গিয়ে আরো মানসিক টর্চারের শিকার হচ্ছেন। নিজস্ব বলয়ে প্রভাব খাটিয়ে এইসব নিরাময় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা এইসব কেন্দ্র দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। অভিযোগ আছে, এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তারা পান মোটা অঙ্কের মাসোহারা। সারা দেশে এরকম প্রায় ৯০০টি অবৈধ মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে। যেগুলোতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
গত ৩ বছরে অনুমোদনহীন মাদক নিরাময়কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৭ জন রোগীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর দেশে মাত্র ৩৩৯টি মাদক নিরাময়কেন্দ্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মাদক নিরাময়কেন্দ্র খুললে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। তবে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠনের লাইসেন্স নেই। যারা অবৈধভাবে নিরাময়কেন্দ্র করে পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) মোসাদ্দেক হোসেন রেজা গতকাল মানবজমিনকে জানান,  যেসব ভুয়া মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। সারা দেশে ৩৩৯টি মাদক নিরাময়কেন্দ্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে থাকি। বাকিগুলোতে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যেসব অবৈধ মাদক নিরাময়কেন্দ্র অনুমতি ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আদাবরের কথিত একটি মাদক নিরাময়কেন্দ্রে একজন এএসপির মৃত্যু হওয়ার পর তারা নড়েচড়ে বসে। যেসব ভুয়া মাদক নিরাময়কেন্দ্র সারা দেশে অনুমোদনহীনভাবে গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে রোগীদের ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ আছে। ভর্তিরত রোগীদের আশু চিকিৎসা না দিয়েই মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। অনেক সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগীদের ভাগিয়ে ভুয়া মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়ে থাকে। অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আখ্যায়িত করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি করপোরেশন বা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অনুমতি নিয়ে এ প্রতারণার কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে মাদকাসক্তি পরামর্শ-নিরাময়-পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়ার কথা। কিন্তু, তা অনেকেই মানছে না। বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিরাময় কেন্দ্রের খোলামেলা সুন্দর পরিবেশ, একজন রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, লিফট থাকা, পৃথক টয়লেট, সুপীয় পানীয়জলের ব্যবস্থা, একজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, দু’জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র থাকতে হবে। কিন্তু, কেউ এ নিয়ম মানছেন না।  

সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে এসব মাদক নিরাময়কেন্দ্র। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে সুচিকিৎসা না দিয়ে তারা রোগীদের ওয়াটার থেরাপি, দুই পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা, দুই আঙ্গুলের ফাঁকে শক্ত কাঠের শলাকা রেখে সজোরে চাপ দেয়া, হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, মাথার চুল কেটে দেয়া ও শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে থাকে। এতে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। সূত্র জানায়, সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে ও পর্যবেক্ষণে থাকা ৩৩৯টি ছাড়াও ৫০টি অনুমোদনের আবেদন পড়েছে। কর্তৃপক্ষ সেগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। আর যেসব প্রতিষ্ঠান মাদক নিরাময়ের নামে ব্যবসা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অভিযানে পুলিশের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর