শক্ত ও মোটা থালার মতো প্লাস্টার জাতীয় শুকনো চামড়ায় আবৃত পুরো শরীর। তার উপর ডোরাকাটা দাগ। বিরল এমন এক শিশুর জন্ম হয়েছে চট্টগ্রামে। চিকিৎসকরা বলছেন- চামড়ায় প্লাস্টার নয়, এটি জন্মগত একটি চর্মরোগ। যা জিনগত (জেনেটিক্যালি) ত্রুটি। এমন ত্রুটি সচরাচর দেখা যায় না। সোমবার সকালে এমন এক বিরল ছেলে শিশুর জন্মগ্রহণের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগের চিকিৎসক ডা. ইশরাত জাহান। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় এই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান অপারেশনে চট্টগ্রাম মহানগীর পাঠানটুলি নাজিরপুল এলাকায় বেসরকারি মিড পয়েন্ট হাসপাতালে এই শিশুর জন্ম হয়।
জন্মের পরই শিশুটিকে শনিবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক (নিউনেটাল) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশুটির চিকিৎসা চলছে বলে জানান ডা. ইশরাত জাহান। ডা. ইশরাত জাহান বলেন, শিশুটি দেওয়ানহাট এলাকার এক দমপতির প্রথম সন্তান। জন্মের আগে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে শিশুটির জিনগত ত্রুটির বিষয়টি সাসপেক্ট করা যায়নি। শিশুটি পরিপূর্ণ সময়েই (৩৮ সপ্তাহে) জন্ম নিয়েছে। শিশুর এ ধরনের জিনগত ত্রুটি খুবই রেয়ার (বিরল) আর খুব একটা বাঁচে না। চমেক হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, জিনগত ত্রুটির বিষয়টি শিশুর মা-বাবার কোনো দোষের কারণ নয়, এটি জেনেটিক ত্রুটি। যা এভয়েড করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বিরল হলেও মাঝে-মধ্যে এ ধরনের জিনগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো নবজাতক পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এ ধরনের জন্মগত চর্মরোগ নিয়ে জন্মানো শিশুগুলোকে কলোডিয়ব বেবি বলা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এ রোগকে হারলিকুইন ইখথাইয়োসিস বলা হয়ে থাকে। প্রতি ৩ লাখে একজন শিশু জেনেটিক্যালি ইখথাইয়োসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়। এরমধ্যে হারলিকুইন জাতীয়টা খুবই বিরল। এসব শিশুর চোখ-মুখ, ঠোঁট ও প্রস্রাবের রাস্তা বিশেষ ভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। পুরো শরীর বড় বড় ডায়মন্ড শেইপের মতো থালা আকারে চামড়ায় মোড়ানো থাকে। জন্মের পরপর এসব শিশু পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট ও জীবাণু সংক্রমণে (ইনফেকশনে) ভোগে উল্লেখ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরণের শিশু জন্মের প্রথম মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে প্রকোপ কম হলে অনেক শিশু ভাগ্যক্রমে বেঁচেও যায়। কিন্তু এই শিশুর প্রকোপটা তুলনামূলক বেশি। শিশুটিকে মুখ দিয়ে কিছু খাওয়ানোর সুযোগ নেই। শিরা খুঁজে না পাওয়ায় স্যালাইনও দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ভিন্ন উপায়ে (নাভিতে নল লাগিয়ে) শিশুটিকে খাওয়ানো ও স্যালাইন দেয়া হচ্ছে বলে জানান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।