× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যার সম্মানে বাংলার আকাশে ওড়ে আর্জেন্টিনার পতাকা

বিশ্বজমিন

মোহাম্মদ আবুল হোসেন
(৩ বছর আগে) নভেম্বর ২৬, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

আর্জেন্টিনা ফুটবলের কিংবদন্তি ও সারা বিশ্বের অগণিত মানুষের চোখের মণি দিয়েগো ম্যারাডোনা। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশেও তিনি ছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। বলা যায়, তার কারণেই বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের ভক্তদের হৃদয়ে আর্জেন্টিনা এক অটুট আসন পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই বাংলাদেশের শহরে, বন্দরে, গ্রামে, গঞ্জে সর্বত্র ছেয়ে যায় আর্জেন্টিনার পতাকায়। সেই সব ভক্তের মনে আজ ক্ষরণ হচ্ছে। অনেকে ঘরের কোণে বসে, অনেকে নির্জনে, অনেকে মাঠের কোণায় কার্জের ভিড়ে অঝোরে কাঁদছেন। ম্যারাডোনা নেই, এই বেদনা তাদের কাছে স্বজন হারানোর চেয়েও বেশি কিছু। ম্যারাডোনা শুধু তাদের কাছে ফুটবলার নন, তিনি ফুটবলের রাজপুত্তুর।
তাকে নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন, তিনি অনন্য এক উচ্চতায় আসন পেয়েছেন এসব ভক্তের কাছে।
১৯৮৬ সাল। তখন বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে টেলিভিশন ছিল না। ৫/১০ গ্রামে হয়তো একটি টেলিভিশনের সন্ধান মিলতো। তাও ১৪ ইঞ্চি সাদা-কালো টেলিভিশন। স্পষ্ট ছবি পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে হতো। লম্বা বাঁশের মাথায় এন্টেনা লাগিয়ে আকাশে উঠিয়ে দিয়ে ছবি আনার সে কি দুঃসাধ্য কাজ! তারপর কোনোমতে, ঝির ঝিরে, কখনো কিছুটা স্পষ্ট ছবি আসতো। তখনও গ্রামের মানুষ ফুটবল খেলে। কিন্তু ফুটবল নিয়ে যে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা হয়, তা সম্ভবত প্রায় মানুষই জানতো না। ফলে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো উত্তাপ ছিল না গ্রামেগঞ্জে। শহরে কি পরিবেশ ছিল তা জানা নেই। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ কবে কখন হয়েছে সে খবর গ্রামের মানুষ তখনও জানে না। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই বাজারে পাচু দাদার ঘরে আকস্মিকভাবে একদিন ভিউকার্ড চলে এলো। তাতে একজন ফুটবলারের ছবি। তাতে লেখা ফুটবলের রাজপুত্তুর। ভিউকার্ডটি সে সময় এক টাকা অথবা দু’টাকায় বিক্রি হতে লাগলো। আস্তে আস্তে জানাজানি হলো, ভিউ কার্ডের ওই যুবকটি হলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি অসাধারণ নৈপুন্য প্রদর্শন করে তার দেশ আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। তখনও গ্রামের মানুষ আর্জেন্টিনা নামে একটি দেশ আছে, এ কথা খুব কম মানুষই জানতো। আস্তে আস্তে আর্জেন্টিনার পরিচিতি বাড়তে থাকে। আর্জেন্টিনা গ্রামের ন্যাংটো ছেলের কাছেও জানা হয়ে যায়। ওই যে ভিউকার্ড তা সবার হাতে হাতে। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে খালি পায়ে স্কুলে যাওয়া ছেলেটির হাতেও ওই উঠে গেল ওই ভিউকার্ড। আর এর মধ্য দিয়ে আপামর জনতার কাছে ভিউ কার্ডের মানুষটি হয়ে উঠলেন-‘আমাদের ম্যারাডোনা’। সেই যে ভালবাসা, সেই যে উন্মাদনাম তার প্রতিফলন ঘটেছে এরপরের বিশ্বকাপ ফুটবলে ১৯৯০ সালে। তখন গ্রামের অনেকের বাড়িতে টিভি গেছে শুধু ম্যারাডোনা নামের ওই কিংবদন্তির খেলা দেখার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনার পতাকারও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এখনও বিশ্বকাপ মানে বাংলাদেশ, এ উপমহাদেশে যেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল উন্মাদনা। শহরে ভবনের মাথায় মাথায়, গ্রামের হাটবাজারে, গ্রামের গাছের মগডালে উড়তে থাকে এই দুটি দেশের পতাকা। দুটি দেশকে বিশ্বের কাছে ঈর্ষণীয় করে তুলেছেন দু’জন মানুষ। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা। আর ব্রাজিলের কালোমানিক পেলে। তাদের এই ভালবাসায় এখন পাগলের মতো মেতে ওঠে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ। তারা আকাশ সয়লাব করে দেয় এ দুটি দেশের পতাকা দিয়ে। এর অর্থ এই নয় যে, তারা বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা করেন। বাংলাদেশ হলো তাদের হৃদয়, রক্ত। আর ফুটবলের পতাকা হলো উন্মাদনা।
বাংলাদেশে যেমন ম্যারাডোনা জনপ্রিয়, লাতিন আমেরিকার বামদের কাছেও তাই। কিউবা বিপ্লবের প্রয়াত কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে তিনি ‘দ্বিতীয় পিতা’ হিসেবে মানতেন। ম্যারাডোনার পায়ে ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মুখের ট্যাট্টু আঁকা। একবার এই ক্যাস্ত্রো তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন রাজনীতিতে আসার। কিন্তু যার রক্তে লেখা ফুটবল, হিমোগ্লোবিনে মিশে আছে ফুটবল তিনি কি করে রাজনীতিতে যাবেন ফুটবল ছেড়ে! তিনি পারেন নি। তাই ফুটবলের তকমা গায়ে মেখে বুধবার ৬০ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন ম্যারাডোনা। রাজনীতি না করলে কি হয়েছে। লাতিন আমেরিকার বাম নেতাদের সঙ্গে ছিল তার সখ্য। যেমন ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে সম্পর্ক, তেমন ছিল ভেনিজুয়েলার হুগো শাভেজ, বলিভিয়ার ইভো মোরালেসের সঙ্গে। ২০১৭ সালে এক সাপ্তাহিক টেলিভিশনকে শ্যাভেজ সম্পর্কে ম্যারাডোনা বলেছেন, ফিদেল (ক্যাস্ত্রো) আমার জন্য যেমন সব কিছু করেছেন, তেমনি আমার জন্য সর্বোত্তম করেছেন শ্যাভেজ। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যা আসে তার সবটাই আমি ঘৃণা করি। আমার সর্বশক্তি দিয়ে এসব ঘৃণা করি।
রাজধানী বুয়েন্স আয়ারসের বাইরে এক নোংরা শহরে এক কারখানা শ্রমিকের ছেলে ম্যারাডোনা। কে জানতো তিনি সারাবিশ্বের মানুষের হৃদয় জয় করবেন। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা দলের ফুটবল জয়ের নায়ক হয়ে সারা বিশ্বকে যেন জয় করেছেন। যদিও এতে গোল করা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবু তার খেলোয়ার হিসেবে যে নৈপুন্য, দক্ষতা, পুরো মাঠে একাই প্রতিপক্ষের ১১ খেলোয়ারকে বোকা বানিয়ে গোল দেয়া- এসব যেন অবিশ্বাস্য বিষয়। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেয়ার পরের বছর ১৯৮৭ সালে তিনি প্রথম সাক্ষাত করেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে। সময়টা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চার বছর পরের কথা। ওই সাক্ষাতেই এই দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। বিপ্লবী নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই গাঢ় হয় যে, ম্যারাডোনা পরের চার বছর কাটিয়ে দেন হাভানায়। কিন্তু তাকে আর্জেন্টাইন টিভি প্রযোজক আলফ্রেডো টেডেসছি বলেছেন, এটা ছিল এক অসম্ভব সম্পর্কের সূচনা। ক্যাস্ত্রো ছিলেন তার আদর্শ। ব্যাপারটা যেন তিনি তার (ক্যাস্ত্রো) প্রেমে পড়ে গেছেন। এরপর এলো শাভেজ, মোরালেস ও অন্যদের বেলা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর