ইতালিতে উত্তর-দক্ষিণ বিভেদটা ছিলই। রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এমনকি খেলাধুলায়ও। ফুটবলে ছড়ি ঘুরাচ্ছিল উত্তরাঞ্চলের জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, তোরিনো, জেনোয়া, বোলোনিয়ার মতো ক্লাবগুলো। তবে দক্ষিণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ইতালির মাটিতে পা রাখলেন এক ফুটবল জাদুকর। তার জাদুকরী স্পর্শে সাফল্য ধরা দিলো দক্ষিণেও। ১৯৮৪ সালে এফসি বার্সেলোনা থেকে নেপলসে পাড়ি দেন দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন লিজেন্ড বদলে দেন নাপোলি ফুটবল ক্লাবের ভাগ্য। ক্লাবের ৯৪ বছরের ইতিহাসে নাপোলি ইতালিয়ান সিরি আ শিরোপা জিতেছে দুবার।
দুটোই দিয়েগো ম্যারাডোনার কল্যাণে। দক্ষিণাঞ্চলের আর কেবল ক্যালিয়ারি ক্লাবের রয়েছে সিরি আ শিরোপার গৌরব। যদিও ক্যালিয়ারি ইতালির মূল ভূখণ্ডের অংশ নয়। সার্ডিনিয়া দ্বীপের ক্লাবটি সিরি আ আসরে একমাত্র শিরোপা জেতে ১৯৭০ সালে।
বুধবার বুয়েন্স আয়ার্সের টাইগ্রেতে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। মুহূর্তে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা ফুটবল বিশ্ব। নিজ দেশ আর্জেন্টিনা ছাড়াও মাতম ওঠে ইতালির নেপলসে। ম্যারাডোনার ছবি আঁকা পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার সমর্থক । নেপলস শহরে প্রতিষ্ঠিত ম্যারাডোনার দুই ভাস্কর্যে মোমবাতি প্রজ্জ্বলণ করেন ভক্ত-সমর্থকরা।
ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে যান ১৯৯১ সালে। সেই থেকে ম্যারাডোনার সম্মানে তাদের ১০ নম্বর জার্সি তুলে রেখেছে নাপোলি। আর কিংবদন্তির মৃত্যুতে আরেক ঘোষণা দিলেন নেপলসের মেয়র লুইজি ডি মাগিস্ত্রিস। নাপোলির স্তাদিও সান পাওলোর নাম বদলে ‘দিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়াম’ করা হচ্ছে।
নেপলসের মেয়র টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘স্তাদিও সান পাওলোর নাম পরিবর্তন করবো আমরা ডিয়েগো ম্যারাডোনার সম্মানে। ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, সর্বকালের সেরা ফুটবলার মৃত্যুবরণ করেছেন। তার প্রতিভা দিয়ে নেপলসকে বিজয় এনে দিয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে ডিয়েগোকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। নিওপলিটান ও আর্জেন্টাইন, তুমি আমাদের আনন্দ ও সুখ দিয়েছো, নেপলস তোমাকে ভালোবাসে!’
নাপোলির জার্সি গায়ে নিজের প্রথম মৌসুমেই ঝলক দেখান ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৪ গোল করে ফরাসি গ্রেট মিশেল প্লাতিনি ও ইতালিয়ান তারকা আলেসান্দ্রো আলতোবেলির পেছনে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার কৃতিত্ব দেখান আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। অষ্টম স্থান নিয়ে আসর শেষ করে নাপোলি।
১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ম্যারাডোনা এবার নাপোলিকেও করেন আলোকিত। ১৯৮৬-৮৭’ সিরি আ শিরোপা কুড়ায় নাপোলি। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটি তাদের প্রথম সিরি আ শিরোপা। পরের দুই মৌসুম রানার্স আপ হওয়ার পর নাপোলিকে ১৯৮৯-৯০ এ আবারো সিরি আ শিরোপা এনে দেন ম্যারাডোনা। নাপোলিতে টানা সাত বছরের ক্যারিয়ারে ২৫৯ ম্যাচে করেন ১১৫ গোল। ১৯৯১ সালে কোকেন সেবনের দায়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা পান ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ২০০৫ সালে নেপলসে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘এম টেন’ জাদুঘর। ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে নাপোলির বর্তমান অধিনায়ক লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে বলেন, ‘তার গৌরব গাঁথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। তার খেলা বারবার দেখে শিখেছি। তুমি আমাদের আনন্দ দিয়েছো, হাসি দিয়েছো, ট্রফি দিয়েছো ভালোবাসা দিয়েছো। তুমি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। তুমি আমাদের ডিয়েগো।’