একুশে পদকপ্রাপ্ত, অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই। গতকাল সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে। আলী যাকেরের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে জানালেন শোক বার্তা...
নাটকই ছিল তার প্রাণ-আতাউর রহমানস্বাধীনতার আগে থেকে আলী যাকেরের সঙ্গে আমার পরিচয়। ফজলে লোহানী চাচাতো ভাই হওয়ায় একটা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। যতটুকু মনে পড়ে সেখানেই প্রথম পরিচয়। বয়সে আমার থেকে ছোট হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক হয় আমাদের। নিউ ইস্কাটনে একই বিল্ডিংয়ে একসময় আমরা থাকতাম।
খুবই আড্ডাপ্রিয় একজন মানুষ, প্রচুর আড্ডা দিয়েছি আমরা। হাজার হাজার স্মৃতি তার সঙ্গে। তাকে হারানোর পর সেসব স্মৃতি খুবই মনে পড়ছে। সকাল থেকেই মনটা ভীষণ খারাপ। খুব শক্তিশালী অভিনেতা ও নির্দেশক ছিলেন। নাটকই ছিল তার প্রাণ। তাই তুমুল ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও কখনো নাটক থেকে দূরে সরে যাননি। তার মৃত্যুতে চরম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমরা তাকে মিস করবো।
আমাদের সম্পর্ক পরিবারের চেয়েও বেশি ছিল- আসাদুজ্জামান নূরআমার নাটক, আমার ক্যারিয়ার এসবই তার জন্য। আমাদের সম্পর্কটা দীর্ঘ ৫০ বছরের। আমার নাটক, আমার ক্যারিয়ার সবকিছু তার হাতে গড়ে তোলা। আমাদের সম্পর্ক পরিবারের চেয়েও বেশি ছিল। ছটলু ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা। তার চলে যাওয়া এটা আমাদের জন্য বেদনার।
আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ নাট্য বন্ধুকে হারালাম: আবুল হায়াতআলী যাকের আর নেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বিষণ্ন হয়ে আছি। কি বলবো তাকে নিয়ে! বলার কোনো ভাষা নেই। কতটা কষ্ট পেয়েছি তা প্রকাশ করার জন্য কোনো ভাষা এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ নাট্য বন্ধুকে হারালাম। তার মৃত্যুতে বিশাল শূন্যতা তৈরি হবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিরাট এক নাট্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন আলী যাকের। আমার পরম সৌভাগ্য যে তার মতো মানুষকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি। আমি ভীষণ শোকাহত। আল্লাহ্ তাকে বেহেশত নসিব করুক।
তার চলে যাওয়া শোবিজে বড় একটি ধাক্কা-তারিক আনাম খানআমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা। একইসঙ্গে আমার সমালোচকও তিনি ছিলেন। আমার সৌভাগ্য তার মতো একজন মানুষকে বন্ধু ও সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। তিনি অসুস্থ হওয়ার কয়েকদিন আগে শেষবার আমার দেখা হয়েছিল। সেই সময়ও নাটক-শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে কথা হয়েছে। এক কথায় আমি বলবো তিনি জীবনমুখী একজন মানুষ ছিলেন। সবসময় হাসি-খুশি থাকতেন। সবাইকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করতেন। শিল্পকে সামগ্রিকভাবে দেখতেন। তার আড্ডাতে সব সময় কীভাবে সংস্কৃতির ভালো করা যায় এই নিয়েই বেশি আলোচনা হতো। আমি বলবো, তার চলে যাওয়া শোবিজে বড় একটি ধাক্কা। আমিও হারালাম আমার একজন প্রিয় মানুষকে।
তিনি অমায়িক একজন মানুষ-ফারুক আহমেদ৮৪ সাল থেকে আলী যাকের ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এটাকে শুধু কাজের সম্পর্ক বলবো না। কাজের বাইরেও তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। নব্বই দশকে ‘অচীন বৃক্ষ’ শিরোনামের একটি নাটকে বিটিভিতে তার সঙ্গে প্রথম কাজ করি। এরপর ‘আজ রবিবার’সহ আরো বেশকিছু নাটকে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ খুব সহজে পাওয়া যায় না। একটা স্মৃতি খুব মনে পড়ছে। ‘আজ রবিবার’ নাটকে একটি দৃশ্যে তিনি আমাকে চড় মারেন। যতবার তিনি আমাকে চড় দিতেন ততবার শুটিং শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরতেন। এই যে এমন আদর ভালোবাসা, কতজনে দিতে পারে। তাকে আর দেখতে পাবো না ভাবতেই পারছি না। ঢাকার বাইরে থাকায় তাকে শেষ দেখার সুযোগ হলো না।
আলী যাকের আমাদের প্রিয় ছোটলু ভাই-সুবর্ণা মুস্তাফাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলী যাকেরকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। সেখানে তিনি লেখেন, আমার চিন্তা বা অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য কোনো শব্দ নেই। আলী যাকের, আমাদের প্রিয় ছোটলু ভাই তার চিরন্তন যাত্রা করছেন। সারা ভাবি, ইরেশ এবং শ্রিয়া এই ব্যথা মোকাবিলার জন্য আপনার শক্তি খুঁজে পেতে পারেন। তোমাকে ভালোবাসি ছোটলু ভাই। আমরা আবার দেখা পর্যন্ত বিদায়। আমি যেমন সবসময় বলি, এটি সময়ের বিষয় মাত্র।