চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি তরুণের বিষয়ে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে (আইএসএ) আহমেদ ফয়সাল (২৬) নামের এক নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফয়সাল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্প্রতি তদন্ত শুরুও করেছিলেন তারা। দুই ফয়সাল একই কিনা, তা এখন যাচাই করছেন তারা। এ খবর দিয়েছে দ্য স্ট্রেইট টাইমস।
সিটিটিসি’র উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়, আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, সে সিঙ্গাপুরে আছে। আমরা কেবল জানতাম যে, সে বিদেশে থাকে ও এখানে আমাদের কয়েকজন সন্দেহভাজনের সঙ্গে অনলাইনে তার যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল ও সিটিটিসি’র তদন্তাধীন ফয়সাল একই ব্যক্তি কিনা, তা নিশ্চিত করতে আরো তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। সাইফুল বলেন, গণমাধ্যমে ফয়সালের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর প্রকাশের আগে এ বিষয়ে জানতেন না তিনি।
এমনকি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ১৫ বাংলাদেশির বিষয়েও তিনি কিছুই জানতেন না।
উল্লেখ্য, ফয়সাল ২০১৭ সালে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর যান। ২০১৮ সালে অনলাইনে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস’র অপপ্রচারের সংস্পর্শে এসে উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ঢাকা ভিত্তিক বাংলাদেশ সেন্টার ফর টেররিজিম রিসার্সের প্রধান শাফকাত মুনির স্ট্রেইট টাইমসকে বলেন, ফয়সাল হামলা চালাতে চাওয়ার পেছনে কারণ কী ছিল তা সহ সে কিভাবে উগ্রপন্থার প্রতি ঝুঁকলো ওই পুরো প্রক্রিয়াটি খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, তার উগ্রবাদী হয়ে ওঠার পেছনে ফ্রান্সে যা ঘটেছে তার কোনো ভূমিকা আছে নাকি তা আরো আগ থেকেই শুরু হয়েছে, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সালের উত্তর থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, বিশ্বজুড়ে প্রচলিত রীতিতেই সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তার রূপান্তর হয়েছে। একজন বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে গিয়ে বেশ নির্বিঘ্নে সিরিয়া ভিত্তিক একটি সংগঠনের সংস্পর্শে এসেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আমরা কী গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন। এই সমস্যা উত্তরণে আমাদের ব্যাপক ট্রান্সন্যাশনাল সহযোগিতা প্রয়োজন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালা জোরদার করেছে। ২০১৬ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সফলভাবে স্থানীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোকে দমিয়ে রাখতে পেরেছে।
তবে মুনিরের মতে, দেশে সন্ত্রাসী হামলা না থাকার মানে এই নয় যে, সন্ত্রাসবাদের হুমকি নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি লাভ করেছে। তবে এই হুমকি আরো কমিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।