× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে সড়কে স্বঘোষিত ভিআইপিদের দাপট

দেশ বিদেশ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার

চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়কে যানজটে শোনা যায় সাইরেন ও হুটারের তীব্র শব্দ। তাকালে দেখা যায় এটি কোনো রোগীবাহী এম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নয়। জরুরি প্রয়োজনে যেগুলোর সাইরেন ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে।
অথচ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাইরেন ব্যবহার করা হচ্ছে মোটরসাইকেল বা কালো গ্লাসে ঢাকা দামি কোনো পাজেরো গাড়িতে, যার সামনে লাগানো থাকে জরুরি বিদ্যুৎ, খাদ্য, ওষুধ বা সংবাদপত্রবাহী স্টিকার। যারা নিজেদের স্বঘোষিত ভিআইপি বলে দাবি করছেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে সাইরেন ও হুটার বাজানো এমন ভিআইপির তৎপরতা বেড়ে গেছে ব্যাপকহারে। যারা উচ্চস্বরে সাইরেন ও হুটারযুক্ত গাড়ি হাকিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ আবার অবৈধভাবে নিজ গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার করছেন।
মোটরযান আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় এসব গাড়িতে সাইরেনযুক্ত হর্ণ, হুটার ও বিকট শব্দ তৈরি করে গাড়ি চালাচ্ছেন নগরজুড়ে।
গতকাল বিকাল পৌনে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একটি কালো পাজেরো গাড়ি দেখা যায়, যেটির চালক অনবরত সাইরেন ও হুটার বাজিয়ে চলেছেন। কোনো ভিআইপির গাড়ি ভেবে সামনের গাড়িগুলোর মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। সাইড দেয়ার পর গাড়িটি যখন বেরিয়ে যায়, দেখা যায়, চালক ছাড়া ওই গাড়িতে আর কেউ নেই। অন্যান্য গাড়ির চালকরা শুরু করলেন গালাগালি। সাইড পেয়ে গাড়িটি ততক্ষণে চলে গেছে বহুদূর।
একই দৃশ্য দেখা গেল বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায়। নিউ মার্কেটের দিক থেকে রেলস্টেশন অভিমুখে যাচ্ছিল সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার ও সিলভার রঙের একটি মাইক্রোবাস। সামনে যথারীতি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সিটি সার্ভিসের তিনটি বাস।  পেছন থেকে এ দু’টি গাড়ি কখনো সাইরেন দিতে থাকে, কখনো হুটারের শব্দ করে। ঠিকই কার্যসিদ্ধি হলো তাদের। বাসগুলো সাইড দিলো। গাড়ি দু’টি শাঁ করে বেরিয়ে গেল।
এভাবে নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যানজটে সাইরেন ও হুটার বাজিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল  করছে স্বঘোষিত  ভিআইপিরা। বিশেষ করে বিত্তশালী পরিবারের উঠতি বয়সের তরুণরা এ ধরনের গাড়িগুলো চালিয়ে বা রেস করে বিকৃত আনন্দ খুঁজে পায়। এছাড়া কতিপয় কিশোররাও নিজের মোটরসাইকেলে সাইলেন্সার পাইপ ছাড়া বিকট শব্দ তৈরি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এদের কেউ কেউ আবার জীবজন্তুর অদ্ভুত আওয়াজের ডিজিটাল হর্ণ ব্যবহার করে। রাস্তায় চলন্ত গাড়ির ঠিক পেছনে পৌঁছেই এসব বিকট শব্দ ছড়ানো হর্ণ বাজিয়ে সামনের গাড়ির চালককে তটস্থ করে দিচ্ছে।
সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের উত্তর জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই-প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, মামলা দিচ্ছি, জরিমানা আদায় করছি। ভবিষ্যতে এ দৌরাত্ম্য বন্ধে আরো কঠোর হতে হলে, তাও হবো।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ, এম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া কারোরই সাইরেনযুক্ত হর্ণ ব্যবহার করার কথা নয়। সাইরেনের শব্দ শুনলে মানুষ ওইসব বাহনকে দ্রুত চলাচলের সুযোগ করে দেয়। অথচ এই বিশেষ হর্ণ এখন অনেক সাধারণ গাড়িতে দেখা যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন শব্দ দূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা।
সিএমপি’র দক্ষিণ জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই-প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন বলেন, স্বঘোষিত এই ভিআইপিরা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজেদের গাড়ির হর্ণের সঙ্গে এই সাইরেনযুক্ত করে দিচ্ছেন। মন্ত্রীদের গাড়িতে যে ধরনের হর্ণ থাকে এই ভিআইপি নামধারীরাও তেমন সাইরেনযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন। দিন দিন এ ধরনের ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় এই সাইরেনযুক্ত গাড়ি দেখে সেই গাড়িটিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাইড দিয়ে দেন সামনের গাড়িগুলো। কিন্তু পরে দেখা যায়, যাকে সাইড দেয়া হয়েছে তিনি আসলে স্বঘোষিত ভিআইপি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর