× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষবার একটু দেখা

প্রথম পাতা

স্পোর্টস ডেস্ক
২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার

কান্না, শোক, আবেগ। ফুটবলের আবেগী এক রাজপুত্র দিয়েগো ম্যারাডোনা। ছিলেন শিশুর মতো। তাকে হারিয়ে পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্তও যেন হয়ে গেছেন শিশু। তাদের কান্না থামছেই না। শোকের মিছিলের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বেল্লা ভিস্তায় মা-বাবার পাশেই সমাহিত করা হয় এই ফুটবল জাদুকরকে।
এর আগে ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানাতে লাখো ভক্ত হাজির হয় আর্জেন্টিনার প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে। সেখানে ভক্তরা কান্নাভেজা চোখে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। করোনা সংক্রমণের শঙ্কা উপেক্ষা করে লাখো ভক্ত সমবেত হয়েছিলেন শেষবারের মতো প্রিয় ফুটবলারের কফিন স্পর্শের আশায়।
অভ্যাগতদের সবারই চোখে জল, হাতে ফুল। কারও পরনে ছিল ১০ নম্বর জার্সি, কেউ পড়েছেন ম্যারাডোনার ছবি সম্বলিত পোশাক। কেউ দূর থেকেই প্রিয় মানুষটির জন্য হাওয়ায় ছুড়ে দিয়েছেন চুমু। হাতে গোলাপ নিয়ে প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ৫২ বছর বয়সী চাকরিজীবী মার্সেলো গাদেস বলেন, ‘এখানে না আসার কোনো কারণ দেখি না।’ আর্জেন্টিনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যুর মিছিল বেশ লম্বা। দেশটির সরকার গত মার্চে কঠোর লকডাউন দিয়েছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ভ্রমণে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এরপরেও ম্যারাডোনা ভক্তদের থামানো যায়নি। প্রাসাদের প্রবেশপথের মুখে অবশ্য স্যানিটাইজার সরঞ্জাম রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। সেখানে লোকজন মিছিল করছিল, অনেক সমর্থক প্রবেশপথের সামনে ভিড় করেছিল। কেউ কেউ আবার মাস্ক ছাড়াই গান গাইছিল। সাধারণ জনতার জন্য ম্যারাডোনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সে সময় তাকে রাখা হয় বুয়েন্স আয়ার্সের সিটি স্কয়ার প্লাজায়। সেখানে সবার আগে ম্যারাডোনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা। এরপর জনতাকে সুযোগ দেয়া হয়। এ সময় ঢল নামা ভক্তদের চাপ সামলাতে হিমশিম খায় বুয়েন্স আয়ার্সের পুলিশ। ’৮৬ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ লেগে যায় ভক্তদের। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভক্তদের উত্তেজনা প্রশমনে কাঁদানো গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার ভিডিও। ভক্তরাও কম যাননি। তারা বেড়া ভেঙে কিংবা ডিঙিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন ম্যারাডোনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সীমানার মধ্যে। বোতল ও বেড়া তুলে ছুড়েও মারেন কেউ কেউ।
শোকের আবহে একটি দৃশ্য হতবাক করেছে অনেককে। বোকা জুনিয়র্স বনাম রিভার প্লেট। আর্জেন্টিনা ফুটবলে ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী। দু’দলের সমর্থকেরা একে অপরকে শত্রু মনে করেন। এই দু’দলের ম্যাচ ঘিরে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটেছে বহুবার। গত বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল মধ্য বয়সী বোকা জুনিয়র্স সমর্থকের বুকে মাথা রেখে শিশুর মতো কাঁদছেন এক রিভার প্লেট সমর্থক। আর একজন বোকা জুনিয়র্স সমর্থক তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন! এই দৃশ্য তৈরি করা কেবল ম্যারাডোনার পক্ষেই সম্ভব।
আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা গত বুধবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ জেতানো এই কিংবদন্তির মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। প্রথম দিকে দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অ্যালকোহল আসক্তির কারণে নানা জটিলতা দেখা দেয়ায় বেশি সময় সেখানে থাকতে হয়। যদিও তার চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, জীবনের প্রতিটি সময় নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজের স্বভাবসুলভ আচরণে মগ্ন থাকা ম্যারাডোনা হাসপাতালে থাকতে চাননি। চিকিৎসকের নিষেধের পরও হাসপাতাল ছাড়তে জোরাজুরি করেন তিনি। কে জানতো, পৃথিবীতে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর কয়েকটা দিন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর