× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৩০ বছর ভোটে অংশ নেবে না জামায়াত!

প্রথম পাতা

আল-আমিন
২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার

সংস্কার। নতুন দল। জামায়াতে এসব আলাপ পুরনো। কথা হয়েছে অনেক। এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এ নিয়ে কারাগার থেকে দলকে লিখিত পরামর্শ দেন। মুক্তিযুদ্ধ আর সংস্কার ইস্যুতে দলত্যাগ করেন আরেক শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। পরিস্থিতি সামলাতে কমিটিও হয়েছিল জামায়াতে। শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয় দলটি? জামায়াত এখন চলছে নয়া নেতৃত্বে।
পুরনো শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে যুদ্ধাপরাধের মামলায়। কারো কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা কারাগারে। এক দশক ধরে কার্যত জামায়াত নিষিদ্ধ। দলের নিবন্ধন নেই। তারপরও দলটি নির্বাচনের ময়দানে ছিল। কখনো স্বতন্ত্র, কখনো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিলেন দলটির নেতারা। তবে সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি জামায়াত। একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের কৌশল হচ্ছে প্রচলিত রাজনীতি থেকে দূরে থাকা। অন্তত ৩০ বছর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি। পরিস্থিতির যদি বড় কোনো ওলট-পালট না হয়। প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন নেতাকর্মীরা। দলীয় সাহিত্য জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। এক গোয়েন্দা রিপোর্টেও ৩০ বছর ভোটের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের  কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার মানবজমিনকে বলেন, ’১৮ সালের নির্বাচন যখন হয়ে গেলো তখন বিএনপি এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হলো, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া আমরা আর নির্বাচনে যাবো না। এ সিদ্ধাতের ওপর আমরা এখনও আছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি সেটা এখনো ছাড়তে পারেনি। কিন্তু, আমরা এ সিদ্ধান্তের ওপর এখনো আছি।’

ওদিকে, একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে দিন বদলের ডাক দিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই বিতর্কিত, সাজা হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলাম বেকায়দায় পড়ে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের। পরে তাদের যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় দলের আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি  জেনারেল এবং সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদসহ ৫ শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাবেক আমীর গোলাম আযম কারাগারে মারা গেছেন। এ ছাড়াও আদালতের সাজা মাথায় নিয়ে সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সোবহান মারা গেছেন। আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সাজা কার্যকরের অপেক্ষায় আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি  জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি মাঠ পর্যায়ে দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়াও দলটির কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যাপক নজরদারি গড়ে তোলে এবং তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়। এ কারণে গত আশি এবং নব্বইয়ের দশকে যেভাবে দলটি সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল তা এ সরকারের সময় পায়নি। এতে দলটির অধিকাংশ নেতারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান।

এর মধ্যে আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয় ২০১৩ সালের পহেলা আগষ্ট। নিবন্ধন বাতিলের ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতা ও সমর্থকদের  মধ্যে হতাশা নেমে আসে। তারা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উপজেলা নির্বাচন করেনি নিবন্ধন হারানো জামায়াত। এ ছাড়াও একাধিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনেও অংশ নিতে দেখা যায়নি দলটির নেতাদের। নতুন দল খোলার ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কেন তারা নির্বাচনে অংশ নিবে না সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের নেতারা কোনো তথ্য দেননি।  তবে দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের কাছে ভোটে অংশ না নেয়ার তথ্যটি জানা যায়।
২০১৮ সালের ২৬শে অক্টোবর চট্টগ্রামের সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় একটি বাসা থেকে গোপন বৈঠকের সময় নগর জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ শাহজাহানসহ ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে জামায়াতের ঢাকা মহানগর নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশসহ আরো অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা জানায়, বর্তমান সরকারের সময় তাদের রাজনীতি অনুকূলে নয়। এ ছাড়াও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে শক্ত সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দলগত সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, তাদের দল আগামী ৩০ বছর গতানুগতিক নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে। শুধু দলের দাওয়াত এবং  দলের  যে ইসলামী সাহিত্য আছে তা জনগণের কাছে তুলে ধরবে।

ওদিকে, জামায়াতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক কার্যক্রমে জোর দিয়েছেন দলটির নেতারা। দলটির আমীর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহায়তামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রয়েছেন জামায়াত নেতারা। শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও এতে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা যোগ দেননি। তবে সংস্কার নিয়ে জামায়াতে দীর্ঘদিন থেকেই আলোচনা ছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি বড় মাত্রায় সামনে আসার আগেই সংস্কারপন্থি অংশটি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই প্রস্তাবে প্রচলিত ইসলামী ধারার রাজনীতির পরিবর্তে সমাজকল্যাণমূলক কাজ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে রাজনীতির কথা বলা হয়েছিল। তবে ওই প্রস্তাব জামায়াতের কোনো নীতি নির্ধারণী ফোরামে উত্থাপন করা হয়নি। ২০১১ সালে জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পত্রিকায় লেখা এক কলামে নিজের রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন। ওই লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ভারতে ৬০ বছরের জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করে ওয়েল ফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে পুরনো জামায়াতের ব্যর্থতার কারণে। ভারতের নতুন দলটিতে ১৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একজন ফাদারসহ ৫ জন অমুসলিমকে রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং সংস্কার ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত জামায়াত ত্যাগ করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দেন। ওই চিঠিতে তিনি নতুন নামে দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিঠিতে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি অব্যাহত রাখতে নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়। পরে অবশ্য যুদ্ধাপরাধের মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

 জামায়াতে ইসলামীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৬শে আগস্ট বৃটিশ ভারতে। শুরুতে সংগঠনটির নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী দলটির প্রতিষ্ঠাতা। নিষিদ্ধ হওয়াও জামায়াতের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৫৯ এবং ’৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর