× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা, কোন দিকে মোড় নেবে পরিস্থিতি!

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) নভেম্বর ২৮, ২০২০, শনিবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাকরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পশ্চিমারা তাকে দেখে থাকেন ইরানের ‘পারমাণবিক বোমার জনক’ হিসেবে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জারিফ এর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের কাজ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ফাকরিজাদেহকে হত্যার ফলে সেই সমঝোতা এখন আরো কঠিন হয়ে পড়বে। এর আগে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আর এবার ফাকরিজাদেহকে কে হত্যা করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ২০১৮ সালে তার নাম উচ্চারণ করেছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা বোঝা খুবই কঠিন এখন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে আরো বলা হয়, ফাকরিজাদেহর ওপর হামলা হয় দামাভান্দের আবসার্ড এলাকায়। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে থাকে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূলে রয়েছেন ফাকরিজাদেহ। ২০১৪ সালে পশ্চিমা এক কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ইরান যদি কখনো (পারমাণবিক) অস্ত্রায়ণের দিকে যায়, তাহলে ফাকরিজাদেহ পরিচিত হবেন ইরানের পরমাণু বোমার জনক হিসেবে।
এখানে উল্লেখ্য, ইরান বার বারই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্যবহারের জন্য। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ কথা বিশ্বাস করে না। সম্প্রতি খবর প্রকাশ হয়েছে যে, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বৃদ্ধি করেছে। সেই খবর যখন চারদিকে চাউর হয়েছে, ঠিক সেই সময় হত্যা করা হলো ফাকরিজাদেহকে। একই সঙ্গে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য এবং অন্যদিকে সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত পর্যায়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১৫ সালে ৬টি বড় শক্তিধর দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইরান। কিন্তু ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার দু’বছর পরে ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নন। তারপর থেকে ইরান তার মতো করে চলছে। এরই মধ্যে গত ৩রা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেছে। তাতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এখানে উল্লেখ করার বিষয় হলো, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাÐের সঙ্গে ইসরাইল জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ইরান। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওর বক্তব্য দিতে গিয়ে ফাকরিজাদেহর নাম উচ্চারণ করেছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে ফাকরিজাদেহকে হত্যার খবরে ইসরাইলের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পেন্টাগন।

কি ঘটেছিল ফাকরিজাদেহর
শুক্রবার ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তারা বলেছে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংগঠনের প্রধান ছিলেন মোহসেন ফাকরিজাদেহ। তাকে বহনকারী গাড়ি টার্গেট করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসী ও তার দেহরক্ষীদের মধ্যে গুলির লড়াই হয়। ফাকরিজাদেহ মারাত্মক আহত হন। তাকে দ্রæত হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য! তাকে রক্ষার জন্য চিকিৎসকদের টিম চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি মারা গেলেন।
ইরানের মিডিয়া বলছে, বিজ্ঞানী ফাকরিজাদেহকে সরাসরি গুলি করা হয়েছে। তবে প্রথম দিকে বার্তা সংস্থা ফারস বলেছিল, আবজার্ড শহরে একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে তিন থেকে চারজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে।

কেন ফাকরিজাদেহকে টার্গেট
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান হওয়ার ফলে ইরানের পরমাণু অস্ত্রের স্পষ্টত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দু’বছর আগে তার নাম উচ্চারণ করেছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করার পর ইরান মুক্তভাবে ওই চুক্তির বাইরে যেতে থাকে। তারা দ্রুততার সঙ্গে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে থাকে। কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের স্তূপ গড়ে তোলে। অনুমোদিত মাত্রার বেশি পিউর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে থাকে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী আসগার সোলতানেহ সম্প্রতি বলেছেন, আমরা তো পশ্চাৎদিকে যেতে পারি না। যেহেতু মোহসেন ফাকরিজাদেহ ছিলেন ইসরাইলের দৃষ্টিতে পারমাণবিক কর্মসূচিতে মূল, তাই তার মৃত্যু এমন কারো উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে থাকতে পারে, যারা চায় ইরানের সম্মুখযাত্রা রুখে দিতে। এই হত্যার ফলে ইরানের সঙ্গে ওয়াশিংটন নতুন করে যুক্ত হওয়ার যে আগ্রহ দেখিয়েছেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সেই প্রচষ্টা এতে ব্যাহত হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর