× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ করলেই শাস্তি

প্রথম পাতা

কাজী সোহাগ
২৯ নভেম্বর ২০২০, রবিবার

প্রায় এক বছর ধরে দলের কেন্দ্র থেকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয় তৃণমূলে। দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেয়া হয়। তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়, দলের মধ্যে কেউ যেন বিদ্রোহ না করে। এসব নির্দেশনায় খুব একটা কাজ হয়নি। দলের  কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নেতারা বিভিন্ন জেলার নেতাদের বিদ্রাহ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতে হিমশিম খান। এ বার্তা পৌঁছে যায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কানেও। পরিস্থিতি সামলাতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। যেসব জেলা ও উপজেলার নেতারা নিজেরা কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়।
এরপর তালিকা ধরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত জানান দলীয় সভাপতি। কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যর্থ হলে দলীয় সভাপতি হস্তক্ষেপ করবেন বলে জানানো হয়। এরইমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত  সাংগঠনিক সম্পাদকরা দলীয় সভাপতির কাছে তাদের রিপোর্ট উত্থাপন করেছেন। ওই রিপোর্টে বিদ্রোহ, দ্বন্দ্ব আর বিভেদে ভরা জেলা, উপজেলা কমিটির তালিকা দিয়েছেন। দলীয় সভাপতি সেইসব তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। শিগগিরই বেশ ক’টি জেলার দলীয় নেতাদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এরইমধ্যে নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অনেক এলাকার নেতা নিজেদের ‘কি হনুরে’ মনোভাব নিয়ে চলতে দেখা যায়। তারা দলীয় শৃঙ্খলাকে তোয়াক্কা করেন না। তাদের এ ধরনের ভূমিকার কারণে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে যেতে বসেছে। তাই দলের পক্ষ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আরো কঠোর হবেন বলে জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, পর পর দুই জেলার নেতাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আরো অন্তত ৭ থেকে ১০টি জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এরমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক জেলার আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একই দলের সংসদ সদস্যর টানাপড়েন বেশ আলোচনায় এসেছে। ওই উপজেলা চেয়ারম্যান মানবজমিনকে জানান, দলের সভাপতির কাছে এসএমএস’র মাধ্যমে ওই এমপি’র ভূমিকা জানিয়েছি। এসব প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা বা আনুগত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও শৃঙ্খলার বিষয়। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে প্রায়ই নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। এতে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাই জেলা আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্র। এদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের তৃণমূল নেতাদের কাছে দলীয় সভাপতির কঠোর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সম্প্রতি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কয়েকটি ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত জনপ্রতিনিধি ও দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কঠোর নজরদারিতে আছেন। আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন নীতি অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হয় না। যেকোনো অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া মাত্রই নেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা স্বপ্রণোদিত হয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন, তা এখনো চলমান আছে, ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধ করার কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগে নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল কখনো কোনো অপরাধীকে রক্ষা করার ঢাল হবে না। শেখ হাসিনার কাছে অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই। গুটিকয়েক মানুষের অপরাধের জন্য সরকারের অনন্য অর্জনগুলো ম্লান হতে দেয়া যায় না। অপরাধের দায় ব্যক্তির, দলের নয়। পুরো দেশে সাংগঠনিক নেতৃত্বের ওপর দলীয় সভাপতির দৃষ্টি রয়েছে। শেখ হাসিনার কাছে সকলের পারফরমেন্সের রিপোর্টও রয়েছে। যারা বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, দলীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কার্যক্রমও গুরুত্বসহকারে মনিটর করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দুটি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটি কেন্দ্র হতে তৃণমূলের জন্য দলীয় প্রধানের একটি বার্তা। মজবুত এবং গণমুখী সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য, বিভিন্ন ইউনিটে পারস্পরিক সমঝোতা, সমন্বয় এবং সম্প্রীতির অভাব দেখা দিলে সংগঠনে অচলাবস্থা তৈরি হয়। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাকে এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সততা, নিষ্ঠা এবং দলের প্রতি ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জেলা থেকে কেন্দ্রে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর