হচ্ছে হবে করে এক বছর যাবৎ দোদুল্যমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন। এবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানালেন গুঞ্জণ কিংবা গুজব নয় সত্যিই কমিটি গঠনের কাজে অগ্রগতি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, জোরেশোরেই জাবি কমিটি গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র।
জানা যায়, গত বছরের ১২ই মার্চ জাবি শাখা ছাত্রলদের কর্মী সম্মেলনে নতুন আহ্বায়ক কমিটির বিষয়ে ঘোষণা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম -১ (ক) কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই টিমে সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজের নেতৃত্বে আছেন পাঁচ সদস্য। টিমের বাকি সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সম্পাদক তানজিল হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসাইন, শাখাওয়াত হোসাইন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়াল হোসাইন।
জাবির কমিটির বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ‘গত ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেয়া হয়েছে। বাদবাকিটা কেন্দ্রীয় কমিটি বসে আরও অধিকতর আলাপ আলোচনা করে আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি দিয়ে দিবে।’
ছাত্রদল সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, কর্মী সম্মেলনের পর থেকেই আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা কিংবা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন পদ প্রত্যাশীরা।
জানা যায়, আসন্ন কমিটিতে আহ্বায়ক পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ করছেন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত। তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন শাখা ছাত্রদলের দায়িত্ব পালন করার পরও আবারও নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছেন। এই বিষয়ে সৈকত বলেন, ‘জাবি ছাত্রদলের কর্মীরা চায় যোগ্য, ত্যাগী, অভিজ্ঞ কেউ আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে আসুক। কারণ আহ্বায়ক কমিটির কাজ হবে সুন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়া। যেহেতু আমি দায়িত্বে ছিলাম, সেহেতু আমার পক্ষে স্বল্প সময়ে কাজটি করা সম্ভব হবে। এই জন্য আমি আহ্বায়ক হয়ে জাবি ছাত্রদলকে একটি শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে গড়ে দিয়ে যেতে চাই।’
পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি চরম মাত্রায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে রিহ্যাবে ভর্তি করানো হয়।
আরেক পদ প্রত্যাশী শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসরাফীল চৌধুরী সোহেলের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ মোবাইল ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালে হেমায়েতপুরে অবৈধ জমি দখল করতে গেলে র্যাব তাকে আটক করে। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় এ নেতা। এসব বিতর্কিত কাজের জন্য গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে সোহেল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বহিস্কৃত সভাপতি সোহেলের বিরুদ্ধে ছিনতাই ডাকাতির অভিযোগ আছে। সেটাই আমার বিরুদ্ধে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমি হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার।’
এদিকে শাখা ছাত্রদলের রাজনীতি করতে গিয়ে যখন বেশিরভাগ নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার। সেদিক থেকে ভিন্ন শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নবীনুর রহমান নবীন। তিনি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে নেই কোন মামলা। এমনকি যেখানে ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে ছাত্রদলের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনা সেখানে নবীন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পানদোয়া বাজারে ওয়ালটনের ইলেকট্রনিক্সের ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করছেন। এই বিষয়ে নবীন বলেন, ‘লাস্ট কয়েকটা অনুষ্ঠানে আমি সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলাম। আমাকে বিভিন্ন সময় মারা হইছে। আমার নামে একটা মামলাও আছে। আর ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার নামে ব্যবসা না, মাঝে মাঝে বসি।’
এছাড়া শাখা ছাত্রদলের আরেক সহ-সভাপতি মো. ফয়সাল হোসাইন ঢাকায় থেকেই ক্যাম্পসের শীর্ষ নেতা হতে চান। ব্যবসার কারণে দীর্ঘদিন রাজনীতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও কমিটি হওয়াকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছেন। তাকে কখন শাখা ছাত্রদলের কোন কর্মসূচিতে দেখা না গেলেও জাবিরে সাবেক নেতাদের হাত ধরে শীর্ষ নেতা হতে চান ফয়সাল। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাক্তিগত কাজে মানুষ যে কোন কিছু করতে পারে।’
অন্যদিকে জাবি ছাত্রদলের কোন কমিটিতে পদ না থাকলেও শীর্ষ পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী। তার নাম সাইফুল ইসলাম সাগর। ক্যাম্পাস জীবনের শুরুতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে সাগর বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। ছাত্রদলে আমার কি ভূমিকা তা ক্যাম্পাসের মামলাগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে আমার নামেই সবচেয়ে বেশি মামলা। গত কয়েক মাস আগেও আমি জেল খেটে এসেছি।