ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারী নির্ঘুম রাত কাটানোর পর পুঁর্নিমা তিথিতে পুন্যের আশায় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের নীল জলে পুন্যস্নান শেষ করেছেন। সৈকতে মোমবাতি ও আগরবাতি জ¦ালিয়ে বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকি, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সমুদ্রের নীল জলে অর্পণ করেন সহ¯্রাধিক সনাতনী নারীরা। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে পুরো সৈকতে বিরাজ করে এক মুখর পরিবেশ। এ ছাড়া মাথা ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পি-দান করেন অনেক মানতকারীরা। এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বসেনি মেলা। তবুও আগত পুন্যার্থী দর্শনার্থীসহ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের উপস্থিতিতে এ উৎসব রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে। এদের নিরাপত্তায় সৈকতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর পুন্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল কম। ফলে হোটেল মোটেলগুলোতে তেমন কোনো চাপ ছিল না। আগত দর্শনার্থী ও পুন্যার্থীর জন্য নিরাপদ পানি, মেডিকেল টিম, স্যানিটেশনসহ স্নান শেষে পোশাক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করেছেন আয়োজক কমিটি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনসহ র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, স্বেচ্ছাসেবক একত্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। পঞ্জিকা মতে রোববার দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে পুর্ণিমা তিথী শুরু হয়েছে। কুয়াকাটায় পুন্য¯œান শেষে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৌর শহরের মদনমোহন সেবাশ্রমে ৫ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসবে মিলিত হবে দূর দূরান্ত থেকে আসা পুন্যার্থী, দর্শনার্থী ও সাধু সন্ন্যাসীরা।
গঙ্গাস্নানে আসা কল্পনা রানী বলেন, মন্দিরে রাতভর নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলব্ধি করে সকালে গঙ্গাস্নান করেছি। স্নান শেষে তারা নিজ গন্তব্যে ফিরবেন। করোনার কারণে এ বছর তেমন কোনো লোকজন আসেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
গোপাল চন্দ্র শীল বলেন, আমার ছেলে মানত ছিল। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। সকালে পুর্নিমা তিথিতে সৈকতে বসে মাথা ন্যাড়া করেছি। এরপর গঙ্গা¯œান শেষে বাড়ি ফিরে যাবো।
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু অনন্ত মুখার্জী জানান, রাতভর শ্রী কৃষ্ণের নামযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করা  হয়েছে।
কলাপাড়া মদনমোহন সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাথুরাম ভৌমিক জানান, শনিবার রাতে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসবের অধিবাস সম্পন্ন হয়েছে। এ উৎসব চলবে ৫ দিনব্যাপী। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর পালন করা হয়।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সোহরাফ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে রাস উৎসবের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো কুয়াকাটার ট্যুরিস্ট পুলিশ সারারাত পুন্যার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে।