× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নারায়ণগঞ্জে আইভীর বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে অনশন

অনলাইন

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
(৩ বছর আগে) ডিসেম্বর ২, ২০২০, বুধবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা ও হুমকি প্রদানের প্রতিবাদে গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নগরীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত নারী পুরুষ।

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা এবং বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। কর্মসূচিতে জেলা আইনজীবী সমিতি, ৭১’এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর জাতীয় পার্টি, জেলা ও মহানগর জাসদ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক, চিকিৎসক, সাংবাদিক সংগঠন, নাসিকের কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। যেকোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে একযোগে প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

তাদের এই দাবির প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, আওয়ামী লীগের লেবাস লাগিয়ে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করে মেয়র আইভী দলকে কলঙ্কিত করেছেন। তিনি ভুলে গেছেন আওয়ামী লীগ জনতার আর জনতার শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়র আইভীকে অবশ্যই জনতার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মন্দিরের সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে আজ মাঠে নামতে হয়েছে এটা এই সরকারের জন্য আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বলেছেন, আমি ২৫ বছর ধরে ৩ দফায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।
আমি কোনো হিন্দু হিসেবে না, এই শহরের এই জেলার একজন সন্তান হিসেবে এখানে এসেছি। রাজনৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমাকে কখনওই সাম্প্রদায়িকতার মুখোমুখি হতে হয়নি। আমার মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহটির সামনেই হয়তো কোনো মুসলিম ভাই বহন করবেন আর পেছনে থাকবেন হিন্দু ভাই। এটাই তো অসাম্প্রদায়িক নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু বড় কষ্ট হয় যখন দেখি আমাদের সরকার আমলে আমাদেরই দলের মেয়র আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ওঠে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় যখন দেখি জনবিচ্ছিন্ন বামপন্থিরা এই সরকার আর জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করার দুঃসাহস দেখায় আর এই মেয়র আইভী তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসেন। কর্মী-সমর্থকদের কাছে তখন লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় আমাদের। খোকন সাহা বলেন, আমি আজ এই মঞ্চে ওয়াদা করছি শুধু মন্দিরের সম্পত্তিই নয়, মসজিদ হোক, গির্জা হোক কিংবা প্যাগোডা হোক, যেকোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ের সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে আমি পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে পাশে দাঁড়াবো।

এদিকে অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মহসিন মিয়া বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং গর্হিত কাজ। আমরা জেলা আইনজীবী সমিতি সভা করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন থেকে কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা, গির্জা, প্যাগোডা, মন্দিরসহ কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ের সম্পত্তি হরণের অপচেষ্টা হলে আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা আইনজীবী সমিতি নিজস্ব উদ্যোগে ও বিনা পয়সায় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সহায়তা প্রদান করবো।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সামিউল্লাহ মিলন বলেন, একটি ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সৃষ্টি করতেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমার এখনো মনে আছে আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে এই শহীদ মিনার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বের করে দেয়া হয়েছিল। সেদিন শহীদ মিনারে অনুমতি নেয়ার অজুহাতে জাতির বীর সন্তানদের অনুষ্ঠান করতে দেয়নি মেয়র আইভী। চোখের পানিতে ভিজে আমরা চাষাড়া গোলচত্বরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে সেই প্রতিবাদ করেছিলাম। আজ তার বিরুদ্ধে মন্দিরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। আমরা এই দখল চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সনাতনী ধর্মাবলম্বীর পাশে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে।
৭১’এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল বলেন, যে শহরের জন্ম থেকে কবরস্থান, শ্মশান আর খ্রিষ্টানদের সমাধিস্থল একসঙ্গে সেই শহর অসাম্প্রদায়িকতার স্বাক্ষর বহন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা দলের আর অসাম্প্রদায়িকতার লেবাস লাগিয়ে মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে, মসজিদ-মাদ্রাসার সম্পত্তি দখল করে তারা এই নারায়ণগঞ্জে বসবাসেরই যোগ্য না।

জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার বলেন, ‘লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দিরের নিজস্ব সম্পত্তি জিউশ পুকুরটি গিলে খেতে চাচ্ছেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবার। যে সকল নকল দলিল করে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে সেইসব দলিলেই মেয়র আইভীর মা, ২ ভাই, মামা, খালাসহ তারই আত্মীয়স্বজনের নাম রয়েছে। ভোটের সময় মেয়র আইভী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছের মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে ‘করজোরে নমস্কার’ করেন, অথচ তার পরিবারই এই মন্দিরের তথা দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে আসছে। ইতিপূর্বে মেয়র আইভীর বাবা প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকাও আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে জিয়াউর রহমানের আমলে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে এনে সভা করতেন। যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যে স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন সেই আদর্শ স্কুলের জায়গাও তিনি দখল করে বিক্রি করেছিলেন জামায়াত নেতাদের কাছে। মেয়র আইভী ও পরিবারের এই লেবাসি ভূমিকা আমাদের কাছে অনেক আগেই উন্মোচিত’।

বিকাল ৫টায় অনশন ভাঙান সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেয়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, গত ১১ই নভেম্বর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে একই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর