× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সিলেটে যে শঙ্কা

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৫ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার

এপ্রিলে সিলেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা। এরপরের তিন মাসের চিত্র ছিল করুণ। হাসপাতালে স্থান সংকুলান হয়নি রোগীদের। প্রথম দিকে টাকা দিয়েও মেলেনি চিকিৎসা। হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। পরে অবশ্য এই অবস্থার উত্তরণ ঘটেছিলো। কিন্তু তার আগেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিলো। করোনায় মৃত্যুর মিছিল ছিল সিলেটে।
এই মিছিলে শরিক হয়েছেন সিলেটে পরিচিতজন রাজনীতিবিদ, সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, রাজনীতিবিদ এমএ হকসহ অনেকেই। চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে সিলেটে করোনা মোকাবিলা করা সহজ হয়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। এই উদ্যোগের কারণে আগস্ট থেকে সিলেটে কমতে থাকে রোগীর সংখ্যা। নভেম্বর পর্যন্ত রোগীর চাপ ছিল না সিলেটে। কিন্তু শীত বেড়ে যাওয়ায় আবারো সিলেটে করোনা নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। খোদ সংশ্লিষ্টরাই আগে থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। সরকারি পরিসংখ্যান মতে- সিলেটে গতকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৫৯ জন। সিলেট বিভাগের এই পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি রোগীর সংখ্যা সিলেট জেলায়। প্রবাসী শহর সিলেটে করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৫৩৮ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৪২৬ জন, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৫৬৪ জন ও মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৭১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থতার হার আশাব্যঞ্জক। গতকাল পর্যন্ত সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৪৫ জন। সিলেটে প্রথম দিকে করোনায় মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে- গত ৩ মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল কম। এ পর্যন্ত সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪৪ জন। এরমধ্যে বেশির ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনা উপসর্গ নিয়ে সিলেটে এখন পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেটির কোনো পরিসংখ্যান মেলেনি। চিকিৎসকদের ধারণা- উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দ্বিগুণ হতে পারে। সেই পরিসংখ্যান সরকারি তালিকায় আসেনি। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন সিলেটে। জেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮১ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২৫, হবিগঞ্জে ১৬ ও মৌলভীবাজারে ২২ জন মারা গেছেন। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রেরিত গতকালের বুলেটিন থেকে জানা গেছে- সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৪ জন। এর বাইরে কেবল মাত্র হবিগঞ্জে দুইজন রোগী ভর্তি আছেন। মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে কোনো রোগী ভর্তি নেই। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- ‘আমরা মনে করি সিলেটে এখনো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসেনি। আমরা চাইবো সিলেটে যেন সেটি না আসে। মানুষ সচেতন হলে কেবল এই ঢেউ ঠেকানো সম্ভব । কারণ, করোনা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হয়। আর এই সচেতনতা এখনই আরো বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন- ‘সিলেটে এখনো রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। শনাক্তের পরীক্ষায় খুব কম সংখ্যক রোগী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আমাদের আরো প্রস্তুতি নিতে হবে।’ এদিকে- গত কয়েকদিন থেকে সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে আইসিইউতে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন কয়েকজন। সিলেটের করোনা হাসপাতাল শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন- গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৩ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে ১৪ জন আছেন আইসিইউতে। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন সুশান্ত কুমার মহাপাত্র। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এমনকি নিজেরা অক্সিজেন ব্যবহার করছে। এটা মোটেও উচিত না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তারা। সিলেটে করোনা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় এরইমধ্যে গ্রহণ করা হচ্ছে প্রস্তুতি। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হতো রোগীদের। গত বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্বলিত একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল থেকে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের মাধ্যমে রোগীদের অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান- এই অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণে আমরা অনেক স্বস্তি পেয়েছি। আজ থেকে সিলেটে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট শুরু হচ্ছে। সকালে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ টেস্টের উদ্বোধন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কিট সিলেটে এসে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। এদিকে- করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে ঘিরে সিলেটে শঙ্কা তৈরি হওয়ার কারণে সরকারের তরফ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। করণীয় নির্ধারণে সিলেটে আসছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং সকল কার্যক্রমের সমন্বয়ে জেলার দায়িত্বশীল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। আগামীকাল রোববার সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সিলেটের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এই সভার আহ্বান করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণের পর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর