× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মানুষটিকে এভাবেই আমি চিনি

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
৬ ডিসেম্বর ২০২০, রবিবার

সান ফ্রান্সিসকোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যা ওয়েস্টার্ন এডিশন বলে পরিচিত সেখানে ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করে আমার বান্ধবী লতিফা সাইমন। তৎকালীন সময়ে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল লতিফা। যখন সে এলাকায় অন্যায়ের বিস্তার ঘটছিল ঠিক তখনই ওই অঞ্চলের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠে সে। প্রথমত সে দেখতে পেয়েছিল তার কমিউনিটি বা সম্প্রদায় কি করছে। তারা আসলে নিজেরা নিজেদেরকে শেষ করে দিচ্ছিল। আর তার দায় এসে চাপছিল পরিবারগুলোর ওপর। আর ওই পরিবারগুলো সামান্য নিরাপত্তার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। পরিবারের ভেতরে পিতার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া অথবা মায়ের খুব বেখেয়ালিপনা আচরণের কারণে বাচ্চাদের কোনো যত্ন নেয়া হচ্ছিল না।


লতিফা তরুণ বয়স থেকেই মানুষের জন্য কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু তার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার নিজেরই অন্যদের সাহায্য প্রাপ্তির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক সময় তার পরীক্ষা শেষ হয়ে আসে এবং গুটিয়ে নেয়ার সময় হয়। লতিফা হাইস্কুলে পড়া বন্ধ করে দেয়। ঠিক সে সময় কেউ একজন তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। অন্যের সহায়তায় যখন সে একটি কাজের সুযোগ পায় লতিফা তখন বয়সে কিশোরী এবং এ সময় সে টাকু বেল কোম্পানিতে দিনে আট ঘণ্টা কাজ করতো। সান ফ্রান্সিসকো শহরে সেন্টার ফর ইয়াং ওমেন্স ডেভেলপমেন্ট নামে একটি সংগঠন ছিল যারা সমাজ সেবামূলক কাজ করতো। এই সংগঠন রাস্তার ভবঘুরে অথবা নানরকম সমস্যায় পড়া কিশোরী এবং তরুণীদের সহায়তা করতো এবং তাদের কাজের প্রশিক্ষণ দিতো। লতিফা সেখানে যোগ দিয়ে নতুন জীবন পায়।

লতিফা সেই কেন্দ্রে কাজ শুরু করে একেবারেই অল্প বয়সে যখন তার নিজেরও একটি কন্যা সন্তান বড় হচ্ছিল। সেখানে যোগ দিয়ে দ্রুতই সে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। সংগঠনের জন্য সে সবখানেই ছুটে যেত। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে মিটিং, পাচার হওয়া কোনো মেয়েদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো, দরিদ্র অঞ্চলগুলোর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কনডম বিতরণ করা এবং বাচ্চাদের ক্যান্ডি উপহার দেয়ার কাজ করতো। কাজের ফাঁকে সে তাদের জানিয়ে দিতো কীভাবে তার সংগঠন থেকে সাহায্য পেতে পারে। প্রতিবেশী যেসব মেয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে আছে তাদের নিয়েও তারা কাজ করতো।

‘আমি তাকে নিঃশব্দে কাজ করে যেতে দেখতাম।’ সে পুনর্ব্যক্ত করে। কিছু মানুষ রয়েছে যারা আসলে কিছুই করে না কিন্তু তাদের মাধ্যমেই একেকটি দিন কাটাতে হয়। আর এভাবেই দিনের পর দিন চলে যায়।

লতিফার ত্যাগ, কর্ম অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা দেখে সেই কেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদ তাকে মাত্র উনিশ বছর বয়সেই নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করতে চাইলে সে রাজি হয়ে যায়। মানুষটিকে এভাবেই আমিও চিনি।

সিটি অ্যাটর্নি অফিসে আমিও একই রকম নারীদের নিয়ে কাজ করতাম। লতিফা যেমনটি করছে। ‘তোমার জানার অধিকার রয়েছে’ এমন একটি কার্যক্রমের মাধ্যমে শহরের নানা রকম ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের সহায়তা করতাম আমরা। আমি লতিফাকে আমাদের কার্যক্রমে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। লতিফা ছিল অত্যন্ত মেধাবী এবং আমি শুধু একাই তাকে নিয়ে এমন ভাবছিলাম তা না। ২০০৩ সালে লতিফা সবচেয়ে কমবয়সে সম্মানজনক ম্যাকার্থার জিনিয়াস অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত হয়।

আমি যখন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হলাম তখন মাঝে মাঝে ভাবতাম যদি লতিফা দোকানে কাজ করার পরিবর্তে রাস্তাঘাটের ময়লা কুড়িয়ে বেড়াতো তাহলে তার ভাগ্যে কি ঘটতো? অথবা যদি তার সামনে এই পথ খুলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে কারাগারে যেতে হতো তাহলে তার ভাগ্যে কি ঘটতো? আমি জানি যে, একটি ঠুনকো অভিযোগের অর্থ কি? এটা আসলে কারাগারে বন্দি অবস্থার সময় নিয়ে কথা নয় ব্যাপারটি হলো তারপরে কি ঘটে তা নিয়ে। একটি দেশ হিসেবে আমরা অসহায় অবস্থায় বন্দিদের মুক্ত করে দেই তখন তাদের হাতে খুব সামান্য অর্থ ধরিয়ে দেয়া হয়, একটি বাসের টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের ঠুনকো অভিযোগের জবাবে আমরা তাদেরকে পাঠিয়ে দেই কারাগারের পথে। এই বিষয়টি সবকর্মী ভালোভাবে নেয় না। অনেক ক্ষেত্রে বন্দিদেরকে কাজ দেয়া হয় না। এর ফলে তারা কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারে না। এর অর্থ হলো যখনই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তারা আবার এমন এক বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যায় যাতে তাদেরকে আবার কারাগারে ফিরে আসতে হয়। তারা একই লোকজনের সঙ্গে এবং একই স্থানে বসবাস করতে থাকে। এক্ষেত্রে পার্থক্য শুধু একটাই তাহলো সময়ের। তারা একবার জেল খেটে গেছে এইতো। আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করে দেই। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই তিন বছরের মধ্যে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে এই ক্ষমা করে দেয়া কোনো কাজে আসে না।  
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর