দেশীয় সিনেমার কালজয়ী নায়ক ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। পাঁচ দশক চলচ্চিত্রের পর্দায় কাজ করেছেন ফারুক। অভিনয় ছাড়ার পর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সুস্থ হয়ে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। ফারুক জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ই নভেম্বর রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হন। টানা নয়দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন। এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তবে চিকিৎসকরা তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফারুক বলেন, পরপর ১৪ বার আমার করোনা টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসে।
১৫তম বার পজেটিভ হই। একজন মানুষ যখন এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সে তখন ভাবে কী করে আমি ভালো হবো। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। অসুস্থ হওয়ার পর ভেবেছি কীভাবে এবং কত তাড়াতাড়ি ভালো হবো। সত্যি বলতে কী আমি কখনো ভয় পাইনি। একদম করোনা মহামারি শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অসংখ্যবার আমি সরাসরি ত্রাণ দিয়েছি। সর্বশেষ ত্রাণ দিয়েছি পিপিই পরে। এ সময় মনে হলো একটু ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছি। হাজার লোকের ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কিন্তু একটু ঝুঁকি থেকেই যায়। ওইদিন থেকে মনে হলো হয়তোবা কোনো সমস্যা হতে পারে। পরবর্তীতে ঈদ চলে আসে। ঈদের সময় আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী সাড়ে তিন হাজার লোককে জড়ো করে আমার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করায়। আমাকে বলা হয় আপনি দেবেন। এরপর আর আমি কোথাও যাইনি। ইচ্ছে করেই ঘরে বসে ছিলাম। এই বসাটাই কিন্তু মনে হয় আমাকে পেয়ে বসেছে। পরবর্তীতে করোনা টেস্ট করি। প্রথম টেস্ট করালাম নেগেটিভ এসেছে। তখনো আমার কোনো কোভিড নেই।
তিনি বলেন, ঈদের তিনদিন পরে আবার টেস্ট করালাম। এবারও নেগেটিভ। এভাবে আমি টেস্ট করিয়েছি প্রায় ১৪ বার। প্রত্যেকবারই নেগেটিভ। এরপরে কীভাবে পজেটিভ হয় জানি না আমি। করোনা পরবর্তী শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত আমি বলতে পারবো না। প্রকৃতপক্ষে করোনার চেয়ে যেটায় বেশি ভুগছি সেটা হলো টিবি (টিউবারকলোসিস, যক্ষ্মা)। আমি তো ভর্তি হয়েছি টিবি নিয়ে। এখন সেটা ভালো হয়ে করোনার দিকে ঝুঁকেছে। কোথায় টিবি আর কোথায় করোনা। সিঙ্গাপুরে ঢুকতে দেয় না। অনেক চেষ্টার পরে যেতে পেরেছি। সম্প্রতি করোনা নেগেটিভ হয়। পুরো সময়টা আমার হাসপাতালে কেটেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমার পুরো বাড়িটা করোনামুক্ত। অর্থাৎ আর একজনও করোনা আক্রান্ত হয়নি। বাড়িতে থাকা প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন সদস্য প্রত্যেককেই টেস্ট করানো হয়েছে। কেউ পজেটিভ হয়নি। করোনা অনেকটা ছোঁয়াচে রোগ।
কিন্তু আমি তো করোনার চেয়েও বড় সমস্যায় ভুগছি। কালজয়ী নায়ক ফারুক বলেন, আমার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। একেবারে ভালো অনুভব করছি। বেশ ভালো আছি। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলছি। তিনি জানান, গত ২৪শে নভেম্বর রাত ১০টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফেরেন। অনেক সুস্থবোধ করছেন। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে বাসায় নেয়া হয়েছে। দুই মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় ফেরেন ফারুক। সেখানে যাওয়ার আগেও তার নিয়মিত জ্বর আসতো। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ফারুককে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সাত বছর ধরে সিঙ্গাপুরের এ হাসপাতালেই তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে আসছেন। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তিনি টিবি রোগে আক্রান্ত। সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পরপরই করোনায় আক্রান্ত হন নায়ক ও সংসদ সদস্য ফারুক।