× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সত্যকথন: দেশে-পরবাসে

মত-মতান্তর

ড. শরীফ আস্-সাবের
২২ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

আমার মতো যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদেরকে একটা কথা প্রায়শ শুনতে  হয়- বিদেশে বসে নাকি অনেক কিছু অনায়াসে বলা যায়, করা যায়, যা দেশে থেকে একেবারেই অসম্ভব। এই কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়ার মতো না হলেও আমি এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নই।

দেশে বা পরবাসে, যার যেখানেই অবস্থান থাকুক না কেন, যা সত্যি তাই তো বলা উচিত। তবে এই সত্য শুধুই নেতিবাচক হতে হবে, তাও নয়। যা ভালো তাকে ভালো বলতে হবে, আর যা মন্দ তা তো মন্দই।

এখানে দেশ-পরবাস বড় কথা নয়। দেশে থেকেও অনেকে সত্যি কথা, উচিত কথা বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন- আবার কেউ কেউ দেশের বাইরে বসেও মিথ্যাচার করেন অবলীলায়, সমর্থন করেন শত অন্যায় ও অবিচার। এক কথায়, যার যেমন বিবেক বিবেচনা, তার তেমনই স্বভাব।
এ সবের পরিসর ও প্রকৃতি ব্যক্তিবিশেষের ভৌগলিক অবস্থান ভেদে পাল্টায় না- অনেকটা স্বর্গে  যাওয়ার পরও ঢেঁকির ধান ভানার মতো।

পৃথিবীর সর্বত্রই নানান ধরনের, নানান ঘরানার মানুষ আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিবেকতাড়িত হয়ে সোজাসাপ্টা কথা বলেন। কেউ আবার নির্লজ্জভাবে মিথ্যার বেসাতি করেন- অকপট, বিরামহীন। সুযোগ বুঝে এদের অনেকেই যখন তখন ভোল পাল্টান আর এক পকেট থেকে অন্য পকেটে স্বার্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে পাচার হয়ে যান। এদের স্থান কাল পাত্র জ্ঞান নেই- দেশে বসে কিংবা পরবাসে থেকেও এরা সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার গুণকীর্তন করে যান নির্বিকার।

যাই হোক, মতাদর্শ, অবস্থান কিংবা অভ্যাসগত কারণে নানাজন নানাভাবে নানা কথা বলবেন- এটাই হয়তো স্বাভাবিক। অনেকে নিজের মতামত কিংবা বিবেচনার বাইরের ভিন্ন কোন মতাদর্শ পছন্দ করেন না। এ নিয়ে কোন সুস্থ বিতর্কও তারা সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে চান এবং কোনো বিষয়ে যুক্তি দিয়ে যুক্তি খন্ডাতে ব্যর্থ হলে অসভ্যতার আশ্রয় নিয়ে প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের ভাষা ও আচরণে সুস্পষ্ট স্বার্থপরতা, অশ্রাব্যতা ও অসহিষ্ণুতা সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

এনিয়ে অবশ্য বিস্মিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সমাজে মীরজাফরীয় এবং গোয়েবলীয় চরিত্রের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়।  আর সব মানুষ তো একই ধাঁচে গড়া নয়। তাই, সবাই সবসময় সোজা কথা বলবেন কিংবা ঠিক কাজটি করবেন তা আশা করা কিছুটা বাতুলতা বৈ কি!

মোদ্দা কথা, সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না আর সমাজের চলমান অন্যায়, অপকর্ম ও মিথ্যাচারের বিহিত করাও চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্য দেশ-পরদেশ, যে যেখানেই থাকুন না কেন, দরকার সকলের সম্মিলিত প্রয়াস। এই ক্ষেত্রে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা মহলকে খুশি রাখার জন্য বুকে যন্ত্রণা লুকিয়ে আর মুখে হাসি ফুটিয়ে সত্যের অপলাপ আর মিথ্যার গুণগান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সমালোচনার খাতিরে সমালোচনাও গ্রহণযোগ্য নয়- যা ভালো তাকে ভালো বলতে হবে, আর মন্দকে মন্দ। উপরন্তু, যে কোন ধরনের মত প্রকাশের সময় আচরণ ও ভাষার ব্যবহারে সাবধানতা ও শ্লীলতা বজায় রাখা জরুরি।  মতাদর্শ কিংবা চিন্তা-চেতনা যার যাই হোক না কেন, মতপ্রকাশের ভাষা হওয়া উচিত মার্জিত, পরিশীলিত  ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন।

এছাড়া, সঠিক ও গঠনমূলক সমালোচনাকে সানন্দে গ্রহণ করার মন মানসিকতাও রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সরকারের থাকা উচিত। মানুষ তো দেবতা নয়। তাই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিছু ভুল যে কেউ করতেই পারেন। একে অপরের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে এবং তা প্রতিপক্ষের বিবেচনায় যুক্ত হলে তা শোধরানোর একটি সুযোগ আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়। এই ধরনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে  সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে পারে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতি যা প্রকারান্তরে  বয়ে আনতে পারে ইতিবাচক উন্নয়ন সাফল্য।

সর্বোপরি, নির্দ্বিধায় এবং নির্ভয়ে যে কোন মিথ্যাচার এবং অন্যায়কে জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং এর প্রতিবাদ করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমাদের সন্তানের অন্যায়কে প্রশ্রয় কিংবা বাহবা দিলে যেমন সন্তানের অমঙ্গল হয় এবং তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে ব্যাহত করে, তেমনি যারা নানা অজুহাতে মিথ্যার বন্দনা করেন কিংবা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন, তারাও কার্যত: দেশের অমঙ্গল ডেকে আনেন।

সত্যকথন, মুক্ত আলোচনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহায়ক শর্ত। তাই, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে যে অবস্থা বা অবস্থানেই থাকুন না কেন, দেশের স্বার্থে দেশকে ভালোবাসুন, ভালো কাজের প্রশংসা করুন, মিথ্যাকে অবজ্ঞা করুন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন আর সত্যি কথা বলুন অকপট, অবলীলায়!

সত্য শুভ নিরঞ্জন!

লেখক: অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। প্রাক্তন আমলা ও প্রেসিডেন্ট, গেইন ইন্টারন্যাশনাল। ইমেইল: [email protected]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর