আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজ তারাই ব্যর্থ। আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছে, এই মর্যাদা ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এগুলোর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রেখে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসামপ্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। জাতির পিতার এই প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা যে- এই জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। অনুষ্ঠানে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এই জাতিকে ভালোবেসেছেন। আমাদের একটাই চিন্তা- যে জাতির জন্য আমাদের মহান নেতা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই জাতির কল্যাণ করা, তাদের জীবন সুন্দর করা। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। দেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা দিয়েছি। ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে তা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কিন্তু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থেকে মুক্ত হওয়ার পর লন্ডন হয়ে ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরে সরাসরি পরিবারের কাছে যাননি। সবার আগে তিনি রেসকোর্স ময়দানে ছুটে গিয়েছিলেন দেশবাসীর কাছে। সেখানে দেশের মানুষের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে তারপর আমাদের কাছে যান। বক্তৃতা করার সময় বঙ্গবন্ধুর হাতে কোনো লিখিত বক্তব্য না থাকলেও তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেয়া ভাষণে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সব নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা মানুষ জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে, মানুষকে কতটা ভালোবাসলে, এভাবে আত্মত্যাগ করতে পারেন, এভাবে মানুষের কথা বলতে পারেন, তার প্রমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশকে তিনি চিনতেন-জানতেন ও ভালোবাসতেন এবং দেশের কল্যাণের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে সবাইকে তার আদর্শ মেনে দেশ গঠনে মনোযোগী এবং জনকল্যাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুুল মতিন খসরু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। গণভবন প্রান্তে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আরো বক্তব্য রাখেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান, আবু আহমেদ মান্নাফী, এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির। ১০ই জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি অনন্য মাইলফলক। এদিন পূর্ণতা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ২৩ দিন পর ১৯৭২ সালের এদিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর মধ্যদিয়ে স্বাধীন জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। ঐতিহাসিক দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।