× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিরিজ বৈঠক /ফাইজারের টিকা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ

প্রথম পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১১ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার

গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স-গ্যাভির মাধ্যমে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাব আসার পর এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। শুক্রবার গ্যাভির তরফে এ প্রস্তাব আসায় শনিবার  থেকেই সিরিজ আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ এই নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করারও কথা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্স। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজারের টিকা বাংলাদেশ নেবে কি-না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসের টিকা নিতে চাইলে ১৮ই জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশীদ আলম চিঠির কথা গণমাধ্যমে স্বীকারও করেছেন।
করোনার ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, অতিরিক্ত দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) মো. মুহিবুর রহমান। ফাইজারের টিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ফাইজারের টিকার বিষয়ে অধিদপ্তরের বৈঠক হয়েছে।
সাংবাদিকদের বিস্তারিত বলার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

জানা গেছে, কোভাক্সের চিঠি শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছে। চিঠি আসার বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ কোভাক্সের এই টিকা নেবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই) নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য কোভাক্স গড়ে উঠেছে। ৬ই জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের ১৯২টি সদস্য দেশকে চিঠি দেয়া হয়। জানুয়ারির শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে তাদের থেকে স্বল্প সংখ্যক টিকা দেয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সদস্য দেশগুলো টিকা নিতে আগ্রহী কি-না, তা আগামী ১৮ই জানুয়ারির মধ্যে কোভ্যাক্সকে জানাতে হবে। ১৯ থেকে ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ বা গ্যাভি সংশ্লিষ্ট দেশের আগ্রহপত্র ও অবকাঠামো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। ২৯শে জানুয়ারির মধ্যে টিকা বিতরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে এবং সদস্য দেশগুলোকে জানিয়ে দেবে।

আগামী মে মাসের মধ্যে এই টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইজারের টিকার অনুমোদন করানোর শর্তের কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই টিকা বাংলাদেশ নিতে চায় জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা কোনোভাবেই এই সুযোগটি ছাড়তে চাই না, আমরা ভ্যাকসিনটা নিতে চাই। আমরা বিষয়টি নিয়ে অলরেডি একটা হোমওয়ার্ক করে ফেলেছি। তবে ফাইজারের টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হতে পারে। এই টিকা অনেক ঠাণ্ডায়, মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি’তে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টিকা রাখা যায় এমন রেফ্রিজারেটর আছে। টিকাটি অনেক কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ কারণে সংরক্ষণ ও বিতরণ করা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কোভ্যাক্সের চিঠিতে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের জন্য এই টিকা দেয়া হবে। তবে কত ডোজ টিকা পাওয়া যাবে তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়টি জানার পর ওই পরিমাণ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে কি-না বোঝা যাবে। এই টিকার একটা ডোজ শূন্য দশমিক ৩ মিলিলিটার (পয়েন্ট থ্রি এমএল)। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এই টিকা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিয়ে আসা বা সেগুলো নিয়ে যাওয়া। এই ভ্যাকসিন দিতে হবে ঢাকা থেকে। ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ফাইজারের টিকা যে তাপমাত্রায় বহন করতে হয় সেই ধরনের বাহন বাংলাদেশে নাই। এ কারণে সেগুলো জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে। ডিজি বলেন, ১৮ই জানুয়ারির মধ্যে কোভ্যাক্সের চিঠির জবাব দিতে হবে। এ কারণে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোভাক্সের শর্ত অনুযায়ী এই টিকা করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সামনের সারিতে কাজ করা লোকজনকে দেয়া হবে। এ কারণে এই টিকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হবে। তাদের কন্ডিশন অনুযায়ী ফ্রন্টলাইনার ছাড়া আর কাউকে এই টিকা দেয়া যাবে না। তাদের শর্ত আমরা মেনে নিচ্ছি, এই টিকাগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে দিতে পারলে সিরাম থেকে যে টিকা পাচ্ছি তা অন্যদের দিতে পারবো।

দেশের প্রায় ১৪ কোটির বেশি মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ জন্য ইতিমধ্যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি হয়েছে। এই টিকা দেড় কোটি লোককে দেয়া যাবে। ওই টিকার জন্য এরইমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে গ্যাভি বাংলাদেশকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তা পর্যায়ক্রমে আসবে দেশে।

প্রসঙ্গত, গত ২রা ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। ধারণা থেকে বাস্তবে রূপ নিতে মাত্র ১০ মাস সময় লাগায় ফাইজার-বায়োএনটেকের এ প্রতিষেধকটিকে বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রচলিত সব টিকার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বানানো টিকা বলা হচ্ছে। চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালে টিকাটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর