× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গণতন্ত্রের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া এক ভাইস প্রেসিডেন্ট

প্রথম পাতা

তারিক চয়ন
১২ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার

মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে এমন বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন সে ‘উপরের নির্দেশ’ নাকি ‘বিবেকের নির্দেশ’ পালন করবে, ওই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। যে সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজন সৎ সাহসের। ৬ই জানুয়ারি তেমনি এক মুহূর্ত এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জীবনে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের রানিংমেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পেন্স। ট্রাম্প দীর্ঘদিন তার প্রতি পেন্সের আনুগত্য থেকে উপকৃত হয়ে আসছিলেন। অনেকেই বলতেন, পেন্স ব্যক্তিত্বহীন, নিজ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই তার নেই। ডেমোক্রেট তথা সকলের ভয়টা ছিল সে কারণেই।
কারণ ৬ই জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে পদাধিকারবলে সভাপতিত্ব করবেন পেন্স যেখানে ইতিমধ্যেই ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হওয়া বাইডেনের ভোটগুলো সত্যায়িত করা হবে। এটাও নিশ্চিত ছিল ট্রাম্প সমর্থক আইনপ্রণেতারা সেখানে ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে আপত্তি জানাবেন।
ট্রাম্পও বারবার দাবি করে আসছিলেন, পেন্স বাইডেনের বিজয় চূড়ান্ত করা থেকে কংগ্রেসকে আটকাতে পারবেন। সুতরাং রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স তার ‘বস’ ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বাইডেনের জয় আটকে দেবেন এমন শঙ্কা ছিল অনেকের মনেই।
কিন্তু, সবাইকে অবাক করে দিয়ে পেন্স ৬ই জানুয়ারির আগেই এক বিবৃতি দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি বাইডেনের জয়ের এই প্রক্রিয়া থামাতে পারবেন না। তখন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প টুইটে লেখেন, প্রয়োজনীয় কাজটি করার ‘সাহস’ পেন্সের নেই।
বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলেছে, সপ্তাহের শুরুতেই পেন্স একটি লাঞ্চে ট্রাম্পকে বোঝাতে চেষ্টা করেন বাইডেনের জয় ঠেকাতে তার কোনো সাংবিধানিক সক্ষমতা নেই। বুধবারও (৬ই জানুয়ারি) ট্রাম্পকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
কিন্তু, হাল ছাড়েন নি নাছোড়বান্দা ট্রাম্প। আদালত, ‘পেছনের দরজা’ কোথাও না পেরে পেন্স-ই যে তখন তার একমাত্র ভরসা। ৬ই জানুয়ারি সকালেও ট্রাম্প এক টুইটে লেখেন, ‘মাইক আমাদের পক্ষে আসলেই আমরা জিতে যাবো। মাইক কাজটা করে ফেলো। এটাই সাহস দেখাবার সময়।’ পেন্সের কাছ থেকে ‘ইতিবাচক’ কোনো সাড়া না পেয়েই ট্রাম্প বিকল্প পরিকল্পনা সাজান। একের পর এক টুইট করে উস্কে দেন তার সমর্থক সন্ত্রাসীদের। তারা এগিয়ে যায় অধিবেশন স্থল ক্যাপিটল হিলে। তাণ্ডব চালায় ভবনজুড়ে। স্থগিত হয়ে যায় অধিবেশন। পেন্স এবং আইনপ্রণেতাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় নিরাপত্তাকর্মীরা। অনেক সিনেটর সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচেন। সহিংসতায় এক পুলিশসহ ৫ জনের প্রাণ যায়। কিন্তু দাঙ্গাকারীদের কাছ থেকে ভবনটি সুরক্ষিত করার পর আবারো অধিবেশন চালু করেন পেন্স, যেখানে বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু বিষয়গুলো মোটেও এত সহজ ছিল না পেন্সের জন্য। ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সেদিনের ঘটনাগুলো। ৭ই জানুয়ারি পেন্সের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাতে সিএনএন জানায়, ক্যাপিটল অবরোধ করা উত্তেজিত ট্রাম্প সমর্থকদের ‘মাইক পেন্স কোথায়’ এই চিৎকার করতে শোনা গিয়েছিল। সূত্রটি জানায় ট্রাম্প ক্যাপিটলে দাঙ্গাকারীদের ঠেলে দেয়ার পর পেন্স বা তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে মোটেও চিন্তিত ছিলেন না। সবমিলিয়ে অনেকে মনে করছেন, পেন্সকে অপহরণ করে তাকে দিয়ে জোর করে বাইডেনের জয় ঠেকাবার পরিকল্পনাও ছিল ট্রাম্পের।
রয়টার্সের একজন আলোকচিত্রী জিম বোগ সেদিন ক্যাপিটল হিলে ছিলেন। সামনে থেকে দেখেছেন সবকিছু। ৮ই জানুয়ারি একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমি কমপক্ষে তিনজন (ট্রাম্প সমর্থক) দাঙ্গাকারীকে বলতে শুনেছি, তারা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে খুঁজে বের করে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ক্যাপিটল হিলের গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়ার আশায় ছিল। এ ধরনের কথা বারবার বলা হচ্ছিল। আরো অনেকেই পেন্সকে কীভাবে শাস্তি দেয়া যায় সেসব নিয়ে কথা বলছিলো।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দাঙ্গাকারীদের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনী কর্মকর্তাকে প্লাস্টিকের ‘জিপ টাই’ হাতকড়া বহন করতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, ওই হাতকড়া হয়তো পেন্সকে পরানোর জন্যই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারেনি পেন্সকে। পেন্স ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর এক বক্তব্যে জনমতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, হামলাকারীরা জিতেনি, জিতেছে স্বাধীনতা। এটা এখনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জায়গা।
এরপর জল অনেক গড়িয়েছে। টুইটার ব্যবহারের নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে টুইটার। এই সিদ্ধান্তের পর ট্রাম্প সমর্থকরা টুইটারে ‘হ্যাং মাইক পেন্স’ বা ‘পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলাও’ ট্রেন্ড চালু করে। যার সুর জিম বোগ-এর শোনা ‘পেন্সকে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়ার’ মতোই। শনিবার টুইটার এ ধরনের পোস্ট নিষিদ্ধ করেছে। টুইটারের একজন মুখপাত্র বলেন, টুইটারের ট্রেন্ড হলো সুস্থ আলোচনার জন্য। এই নিষেধাজ্ঞার পরও কেউ তা না মানলে সেসব অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওকলাহোমার পত্রিকা তুলসা ওয়ার্ল্ডকে রাজ্যটির রিপাবলিকান সিনেটর জিম ইনহোফ বলেন, দাঙ্গার জেরে ট্রাম্পের উপর ক্ষিপ্ত হন পেন্স। আমি জীবনভর মাইক পেন্সকে চিনি। কিন্তু আজকের মতো তাকে এভাবে কখনো রাগতে দেখিনি। আর এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, ক্যাপিটলে হামলার পর পেন্স আর ট্রাম্পের মধ্যে কোনো কথা হয় নি।
ওদিকে শনিবার প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০শে জানুয়ারি মাইক পেন্স নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর