অগ্নিপরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সামনে। আজ বুধবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী সক্রিয় করতে তার ওপর চাপ আসছে প্রতিনিধি পরিষদ থেকে। ওই সংশোধনী সক্রিয় করতে মাইক পেন্সের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হবে আজ। এ প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পাস হলে মাইক পেন্স কি করবেন সেদিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব! তিনি কি তার শীর্ষকর্তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াবেন? নাকি ট্রাম্পকে বাঁচাতে নীরবতা পালন করবেন? এই অগ্নিপরীক্ষার উত্তর কি তা শুধু তিনি একাই জানেন। সময় বলে দিবে তিনি কোন পক্ষে অবস্থান করবেন। যদি তিনি ওই সংশোধনী সক্রিয় করতে ব্যর্থ হন তাহলে আজই প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে। আগামী ২০শে জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বত্র বিরাজ করছে সতর্কাবস্থা। এদিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সোমবার তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক পোস্ট, বিবিসিসহ একাধিক মিডিয়া।
এফবিআই সারা দেশে অভ্যন্তরীণ এলার্ট জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেকোনো নাশকতা মোকাবিলায় সব রকমের প্রস্তুতি নিতে বলেছে। আমেরিকার প্রত্যেক বড় বড় শহর, মহানগরগুলোতে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই বিশেষ নিরাপত্তা ১৬ থেকে ২০শে জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ৬দিন আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে সবকিছু। শপথ অনুষ্ঠানকে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে ১৫ হাজার অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদানের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চাদ উলফ নিজেই পদত্যাগ করেছেন। জো বাইডেন বলেছেন, ক্যাপিটল হিলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে তিনি বা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মোটেও শঙ্কিত নন।
ট্রাম্পের উগ্রবাদী সমর্থকরা প্রতিটি রাজ্যে সশস্ত্র মহড়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যাপক ভাবে লিফলেট বিলি করছে। তারা বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে ১৭ই জানুয়ারি সমাবেশ সফল করতে প্রচারণা চালাচ্ছে। এফবিআই’র একটি স্মারকের উল্লেখ করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, প্রত্যেক রাজ্যের কোর্ট হাউস, নগর ভবন ও ফেডারেল বিল্ডিং এই হামলার টার্গেটে পরিণত হতে পারে। গত ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলায় সারাদেশ থেকে যোগ দেয়া উগ্রবাদী সমর্থকদের মধ্যে সাবেক সেনা, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সহ অনেক বিভাগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার লোকজন ছিল বলে তদন্তে উঠে আসছে। এই ষড়যন্ত্রের শিকড় ছিল অনেক গভীরে প্রোথিত। ধারণার চাইতেও ভয়ঙ্কর। এখন ট্রাম্পকে এই মূহূর্তে অফিস থেকে প্রত্যাহার অথবা অভিশংসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার এসব উগ্রবাদী সমর্থকরা অবস্থা আরো খারাপ বা ভয়াবহ করে তুলতে পারে বলে মনে করছে এফবিআই। এদিকে, সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সহিংস অভ্যুত্থানে মদত দানের অভিযোগ এনে তাকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফায় অভিশংসনের প্রস্তাব হাউজে পেশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের উপর বুধবার আলোচনা হতে পারে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে শিগগিরই সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে প্রেসিডেন্টকে তার অফিস থেকে প্রতাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ বুশ ও বিল ক্লিনটন উপস্থিত থাকবেন। তারা এই অনুষ্ঠানে ঐক্য ও সংহতির উপর গুরুত্ব দেবেন এবং সকল ক্ষত ভুলে ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গঠনের আহ্বান জানাতে পারেন সকলের প্রতি। বিগত ১শ’ ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।