× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আনুশকার মায়ের অভিযোগ / দিহানের সঙ্গীদের আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
১৪ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার

শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ শেষে হত্যায় অভিযুক্ত ফারদিনের তিন বন্ধুকে মামলা থেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে একটি মহল। ঘটনার দিন ফারদিন ইফতেখার দিহান ও তার সঙ্গীরা আনুশকাকে অপহরণ করে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। এমনটিই দাবি করেছেন, আনুশকার মা শাহনূরে আমিন। তিনি বলেন, ফারদিন ওইদিন ফোন করলে আমি হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে গেলে আমার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে। বলে, আন্টি আমাকে বাঁচান। ফারদিন আরো জানায়, তারা চারজন মিলেই আনুশকাকে বাসায় নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার মেয়ে ফাঁকা বাসায় একা যাওয়ার কথা না।
মামলায় আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আমরা অপহরণ মামলা করতে চেয়েছি। কিন্তু পুলিশ সেটা করতে দেয়নি। উল্টো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মেয়ের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ফারদিনের সঙ্গে আনুশকার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ তথ্য মোটেও সঠিক নয়।
অভিযুক্ত ফারদিনের সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো পরিচয় ছিল না। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অনুষ্ঠানে আনুশকার মা বলেন, আমি চার দফা দাবি জানাচ্ছি। দ্রুত বিচার আইনে ফারদিন ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সরকার যেন তদন্তে আমাদের সহযোগিতা করে। স্বচ্ছ ও সঠিক ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক। আমার নিষ্পাপ মেয়েকে বিকৃতভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, আপনি একজন মা। আমি আমার মেয়ের হত্যার স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার চাই। এ সময় নিহত শিক্ষার্থীর বাবা আল আমিন বলেন, আনুশকা আমাদের অনুমতি ছাড়া কিছুই করতো না। সেভাবে মেয়েকে আমরা মানুষ করে তুলেছি। ওইদিন আনুশকা তার ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়েছিল। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় ফোন ধরতে পারিনি।  
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসার নিরাপত্তাকর্মী দুলাল হোসেনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু দুলাল এবং ফারদিনের জবানবন্দির মধ্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ফারদিন জানিয়েছে প্রথমে সে একা কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে আনুশকা যায়। এদিকে নিরাপত্তাকর্মী দুলাল আদালতে জানায়, ঘটনার দিন তারা দুজনে একত্রেই বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা ওই বাসায় প্রায় ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করে। এর আগে গত সোমবার দুপুরে দুলালকে মিরপুর রোডের ডলফিন গলির সামনে থেকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। আনুশকার মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিলেন দুলাল। দুলাল এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। কারণ তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে দুলাল জানিয়েছেন ঘটনার দিন দুপুরে অভিযুক্ত ফারদিন এবং আনুশকা একত্রে বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে বাসায় আর কেউ প্রবেশ করেনি। ফারদিন সাধারণত নিরাপত্তাকর্মী দুলালকে তুই বলে সম্বোধন করে। আনুশকা অচেতন হয়ে পড়লে এ সময় ফারদিন বাসার ইন্টারকমে ফোন দিয়ে দুলালকে জানায়, তুই শিগগিরই বাসায় আয়। আমার বিপদ হয়েছে। তোর সাহায্য লাগবে। ফোন পেয়ে দুলাল দ্রুত বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে দেখতে পায় আনুশকা বিছানার পাশে সোফার উপর পড়ে আছে। এ সময় দুলাল আনুশকার পা ধরে এবং ফারদিন মাথা ধরে তাকে গাড়িতে তোলে। বাসার গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেন গার্ড দুলাল। দুলাল আরো জানান, মেয়েটি মারা গেছে শুনে ভয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যাই। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম এই মর্মে পুলিশ যদি গ্রেপ্তার করে তাকে রিমান্ডে নেয় এই ভয়ে পালিয়ে যান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী এই নিরাপত্তা প্রহরী জানায়, পালিয়ে প্রথম দু’দিন সাভারে ছিলেন।  
সাভারে কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে জানান, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। পরবর্তীতে যখন মনে হলো আমি কেন পালালাম। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। অনুশোচনা বোধের জায়গা থেকে পরবর্তীতে বাসায় ফিরে আসলে পুলিশ আটক করে। সূত্র আরো জানায়, প্রায় দেড় বছর ধরে দুলাল ডলফিন গলির পান্থকুঞ্জ-২ নম্বর ভবনে চাকরি করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চাওয়া হয় দুলালকে ফারদিন কোনো বকশিশ (ঘুষ) দিয়েছিল কি-না। দুলাল জানান, ফারদিনের ব্যবহার একদমই ভালো নয়। সে তাকে সবসময় নাম ধরে তুই বলে সম্বোধন করতো। বকশিশ দেয়া তো অনেক পরের কথা। প্রায়ই অনেক বন্ধু-বান্ধব আড্ডা দিতে আসতো তাদের বাসায়। ফারদিন বাসায় ফিরতো অনেক রাত করে। কিন্তু এ বিষয়ে কখনোই ফারদিনের সঙ্গে ভয়ে কথা বলার সাহস পায়নি দুলাল। তিনি আরো জানান, গরিব মানুষ। ভাগ্য দোষে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতে এসেছি। অনেকের অনেক কথা এবং অপমান নীরবে সহ্য করতে হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর থেকেই নজরদারিতে ছিলেন বাসার দারোয়ান দুলাল। ঘটনার যথার্থতা যাচাইয়ে তার প্রয়োজন বোধ করায় তার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তাদের দু’জনের দেয়া বর্ণনা মিলিয়ে দেখা হবে। যেহেতু দুলাল আসামি নন, তাই তাকে আটক রাখা হয়নি। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ চলছে। পাশাপাশি ফারদিনের ওই তিন বন্ধুর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ঘটনার সময় তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন, কি কথা হয়েছে তাদের মধ্যে তা বের করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আপাতত তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তারা পরিবারের জিম্মায় থাকলেও পুলিশের নজরদারির বাইরে নয়। প্রয়োজনে তাদের আবার হেফাজতে নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর