× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কি বলেন মার্কিনিরা / ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রতীকী, তবে অত্যাবশ্যক

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ১৪, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

সিম্বলিক। বাট নেসেসারি। অর্থাৎ ট্রাম্পকে অভিশংসিত করাটা প্রতীকী। কিন্তু এটা অত্যাবশ্যকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে এমনটাই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন মার্কিনিরা। কেউ কেউ ট্রাম্পের পক্ষে বললেও বেশির ভাগই তার বিপক্ষে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, ট্রাম্প যা করেছেন তা অসাংবিধানিক। একদিকে কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদে এ নিয়ে বুধবার তীব্র বিতর্ক করেছেন সদস্যরা।
অন্যদিকে এর বাইরে সাধারণ মানুষ এবং রাজনীতিকরা মন্তব্য করেছেন। তার মধ্যে আছেন ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমর্থক এটর্নি বেলিন্ডা নোয়া। তিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তার মতে, দ্বিতীয় অভিশংসনের ওপর ভোট গ্রহণ অন্যায় এবং গত সপ্তাহে যা ঘটেছে তার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এটা হলো সত্যের অপলাপ। বেলিন্ডা বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিশংসন অনাকাঙ্খিত। এর কোনো বৈধতা নেই। না আছে আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি। ট্রাম্প আইনগত সুবিধা পাননি। দেশের ওপর একটি কালো দাগ দেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে রাজনৈতিক উদ্দেশে এই অভিশংসন করা হয়েছে। আমি শঙ্কিত এ জন্য যে, আমাদের সংবিধান মৃত্যুশয্যায়। আশা করি মার্কিন জনগণ এর বিরুদ্ধে জেগে উঠবে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, একটি কমিউনিস্ট দেশে কি ঘটে, যেখানে মুক্তমত প্রকাশের কোনো অধিকার থাকে না। যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া উচিত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা উচিত। কিন্তু কার মাথায় এমন চিন্তা এলো যে, আমাদের প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটল হিলে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য লোক পাঠাবেন? ট্রাম্পের র‌্যালি সব সময়ই শান্তিপূর্ণ। বুধবার তার সমাবেশে যেসব মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলেন মধ্যবয়সী, বয়স্ক, শিশু ও নাতিপুতিরা। কিন্তু যেসব ব্যক্তিবিশেষ আইল লঙ্ঘন করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। কিভাবে কথা বলার জন্য একজনকে ক্রিমিনাল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করা যেতে পারে আমার মাথায় তা আসে না। বেছে বেছে মানুষের ওপর আইন প্রয়োগ করার কোনো অর্থ হয় না।
তবে তার মতের পুরো বিরোধী মিনেসোটার ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেলিসা দাঙ্গারান। তিনি একজন ফিলিপিনো বংশোদ্ভূত মার্কিনি। ছোটখাট ব্যবসা পরিচালনা করেন। আছে দুটি সন্তান। তিনি বলেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে আরো চারটি বছর যুক্তরাষ্ট্রের অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। মেলিসা বলেন, গত ৬ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে আচরণ প্রদর্শন করেছেন, তাতে নিঃসন্দেহে তিনি অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা-ই করেছেন তা অসাংবিধানিক। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যা করবেন তা হতে হবে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে। রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনি বলেছেন, যদি এই প্রেসিডেন্ট না থাকতেন তাহলে গত সপ্তাহের ঘটনা ঘটাতো না এবং লিজ চেনি ঠিকই বলেছেন। যদি ট্রাম্প নির্বাচনের ফল নিয়ে অব্যাহত লড়াই না করতেন, যদি তিনি নির্বাচনের ফলকে চুরি করা হয়েছে বলে যে মিথ্যা বার্তা বার বার ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন- তা যদি না করতেন, যদি তিনি ওইদিন ক্যাপিটল হিলের কাছে র‌্যালি না করতেন, যদি ‘উত্তেজিত করা’ নিয়ে কথা না বলতেন, তাহলে গত সপ্তাহের ঘটনা কখনোই ঘটতো না। এমনকি তিন মাস আগে, সব রকম মামলার আগে তিনি যা বলেছিলেন, তাতে তার ব্যবহারে আমি হতবাক হইনি। এর সবই আগেভাগে আন্দাজ করা গেছে। কারণ, এসবই আছে তার স্বভাবের মধ্যে। তাই যেসব রাজনীতিক বলছেন, তাকে অভিশংসিত করা হলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি বাড়বে, আমি তেমনটা দেখছি না। এতে কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে না। তবে আমি মনে করি না যে, এর ফলে সহিংসতা আরো খারাপের দিকে যাবে। এমন একটি বিবৃতি প্রয়োজন যাতে বলা হবে, সরকারের অন্য কোনো শাখাকে আক্রমণ করার অনুমোদন নেই প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্পের কব্জা থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এটা হলো রিপাবলিকানদের সামনে একটি সুযোগ।
নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান সমর্থক ও আঞ্চলিক সমন্বয়ক গাব্রিয়েল মন্টালভো। তিনি ‘লাতিনো ফর ট্রাম্প’ ইস্যুতে তুখোর বক্তা। ৬ই জানুয়ারির সহিংসতার নিন্দা জানান তিনি। বলেন, আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা উচিত। ওই র‌্যালিতে আমিও ছিলাম। কিন্তু ক্যাপিটল হিলের কাছে যাইনি। আমি চলে গিয়েছিলাম হোটেল রুমে। তবে দেখেছি, প্রেসিডেন্ট কথা বলছেন। তিনি ওই ভবনে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করতে বা কোনো ক্ষতি করতে কাউকে বলেছেন, এমনটা আমি শুনিনি। ফলে অভিশংসনের নামে যা করা হচ্ছে, তা হলো তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না দেয়া। এসবই রাজনৈতিক। এর ফলে ডান ও বামপক্ষের মধ্যে আরো বড় বিভক্তি সৃষ্টি হবে। আমার ভয় হয়, মানুষজন প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। এবারই সর্বশেষ নয়। নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অভিশংসনকে ব্যবহার করা হতে পারে। এটা প্রজাতন্ত্রের জন্য নয়, এটার ব্যবহার করা হতে পারে ক্ষমতাসীনকে সরিয়ে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে, যার সঙ্গে তারা একমত হতে পারে না। সব সহিংসতারই সুষ্ঠু ও ন্যায্যভিত্তিতে নিন্দা জানাতে হবে। দিনটা ছিল খুবই বেদনার। তবু আমি বিশ্বাস করি না যে, এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। এটা কোনো অভ্যুত্থানও ছিল না। এটা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সহিংসতা কোনো উত্তর বা সমাধান হতে পারে না। ওই দিনটি হয়তো ভিন্ন কিছু ছিল। ৬ই জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির জন্য কিছু একটা ব্যাপার। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড নতুন ভোটারদের অনুৎসাহিত করবে, যেসব ভোটারকে দলের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলেন ট্রাম্প এবং তার ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন।
জর্জিয়ার ১৯ বছর বয়সী উইলিয়াম মোরালেস। তিনি আটলান্টায় মেক্সিকান বংশোদ্ভূত প্রথম প্রজন্মের মার্কিন কলেজছাত্র। গত চার বছর ধরে তিনি যা দেখছেন তাতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে ক্যাপিটল হিলে যা ঘটেছে, তার প্রেক্ষাপটেই প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হয়েছে। তার ভাষায়, আমি মনে করি ট্রাম্পকে অভিশংসন করা উচিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুধু একটি জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকিই নন, একই সঙ্গে তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও অন্যদের হুমকির বিষয়ে কোনো নিন্দা প্রকাশ করেন না। এর প্রেক্ষিতে এখন এটা হচ্ছে একটি প্রতীকী অভিশংসন। কারণ, তিনি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিদায় নিচ্ছেন। তার অভিশংসন প্রতীকী হলেও এটা অত্যাবশ্যক। একবার অভিশংসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তিনি এমন প্রেক্ষিত তৈরি করেছেন যে, একজন প্রেসিডেন্ট একাধিকবার অভিশংসনের মুখে পড়ছেন। গত সপ্তাহের ঘটনার বিষয়ে আমি যা করতে পারি তা হলো, বিষয়টি এড়িয়ে যাওয় এবং পরিস্থিতি নিয়ে কৌতুক করা। কিন্তু বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে বেদনাহত করে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর