যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের ক্রমাগত সশস্ত্র হুমকির মুখে ওয়াশিংটনসহ গোটা দেশব্যাপী স্মরণকালের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হযেছে। ওয়াশিংটনে ১৫টি রাজ্য থেকে আনা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড। ইরাক ও আফগানিস্তানে মোতায়েন মোট সৈন্য সংখ্যারও বেশি সংখ্যক বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এখন পাহারা দিচ্ছে মার্কিন রাজধানী। মোতায়েন করা হয়েছে ২১ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড। এর বাইরে রয়েছে পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিস, এফবিআইসহ অন্যান্য বাহিনী।
আইনসভা ক্যাপিটল হিল ভবন, হোয়াইট হাউস, ইউএস সুপ্রিম কোর্টসহ সকল গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। প্রতি ৬ ফুট দূরত্বে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সশস্ত্র গার্ড। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল শপিং মল।
বাইডেনের শপথ স্থল ক্যাপিটল ভবন আঙিনায় রচনা করা হয়েছে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা ব্যূহ। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার ওরেই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে তার অফিসে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ব্রিফিং করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বচক্ষে খতিয়ে দেখতে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান স্থল ক্যাপিটল ভবন এলাকায় সফর করেন রাতে। তিনি নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ডদের ধন্যবাদ জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যজুড়েই জারি করা হয়েছে এই নিরাপত্তা অ্যালার্ট। তবে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন ও মিনেসোটায় এই হুমকির মাত্রা বেশি বলে এফবিআই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়েছে। এফবিআই বলেছে, হামলা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের পাশাপাশি এসব উগ্র সন্ত্রাসীরা জীবনহানির ঘটনাও ঘটাতে পারে। ক্যাপিটল হিলের সন্ত্রাসী ঘটনায় দেশব্যাপী ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এফবিআইসহ বিভিন্ন ফেডারেল ও লোকাল এজেন্সি ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও মুঠোফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার কাজ করছে। অনেক সচেতন নাগরিক এফবিআই এর ডাকে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন। ম্যাচাচুচেটস রাজ্যের ১৮ বছরের হেলেনা ডিউক টিভিতে প্রচারিত ফুটেজে তার মা ও আত্মীয়দের ক্যাপিটল হামলায় অংশ নিতে দেখে। পরে হেলেনা এফবিআইকে এদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার হোম টাউন ডেলাওয়ারের উইলমিংটন থেকে এ্যামট্রাক ট্রেনে করে শপথ গ্রহণের আগের দিন ওয়াশিংটনে পৌঁছার কথা রয়েছে। বাইডেন তার দীর্ঘ আইন প্রণেতার কর্ম জীবনে এই এ্যামট্রাকেই যাতায়াত করেছেন একজন সাধারণ নাগরিকের মতো। তার ডিসিতে হোটেলে অবস্থানের কথা থাকলেও সেই কর্মসূচির পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন তিনি ক্যাম্প ডেভিডে রাত্রিযাপন করবেন। শপথ নিয়ে উঠবেন নতুন ঠিকানা হোয়াইট হাউসে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের ওপর। অন্যদিকে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। হোয়াইট হাউসে মুভিং ট্রাকে ট্রাম্পের মাল সামানা উঠানো হচ্ছে। ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প গত দুই মাস থেকেই নিজের জিনিসপত্র স্থানান্তরের কাজ করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শপথ অনুষ্ঠানের সময় ফ্লোরিডার পামবিচের মার-এ-লাগো ক্লাব হাউজে অবস্থান করবেন। এখানেই আপাতত তার থাকার কথা। যদিও এই ক্লাবের বাসিন্দারা ট্রাম্প ওখানে বসবাস করেন সেটা চান না। তিনি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জোসেফ বাইডেন শপথ নেবেন।
ইউএস সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস জন রবার্ট নিয়মানুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর কথা। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাধারণত বাইবেল হাতে নিয়ে শপথ নিলেও এক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান বরাবর জাঁকজমকপূর্ণ হলেও এবার নানাকারণে তা হবে সংক্ষিপ্ত এবং জৌলুসবিহীন। এবার বাতিল করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী অভিষেকের প্যারেড অনুষ্ঠান। সীমিত করা হয়েছে অতিথির তালিকা।