× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এসডিজি বাস্তবায়নে ‘নাগরিক প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ’ সামনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার শঙ্কা

দেশ বিদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার

মহামারি করোনার মধ্যেও দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। তবে সামনে এই গতিতে ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে, প্রবাসী আয়ের এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক রেমিট্যান্স প্রবাহ: এতো টাকা আসছে কোথা থেকে’? শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বক্তারা বলেন, গেল বছর বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এলেও এ সময় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। অনেকে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সবাই শঙ্কিত। তাদের আবার বিদেশে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার আহ্বান জানান বিশ্লেষকরা। এছাড়া এর মধ্যেও একটি বড় অংশের প্রবাসী কর্মহীন থাকায় তাদের উল্টো দেশ থেকে সহায়তা নিতে হচ্ছে বলেও জানান গবেষকরা। তারা দাবি করেন, করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও সরকারের দাবি এ সংখ্যা ৩ লাখের কিছু বেশি। যার ফলে তাদের জীবনযাত্রায় তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সংলাপে উঠে আসে মহামারির মধ্যে এতো বেশি রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসছে, কীভাবে আসছে এবং ভবিষ্যতে আর কতদিন এভাবে আসবেÑ এসব প্রশ্ন তার মধ্যে অন্যতম।
এসডিজি প্ল্যাটফরমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে আমাদের পাশের দেশ ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩২.৩ শতাংশ। ফিলিপাইনের প্রবাহ কমেছে ০.৯ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ১৮.৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগৃহীত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অন্যদিকে শুধু ৬ মাসের ব্যবধানে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮ শতাংশ।
সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) চেয়ারপারসন এমএস শেকিল চৌধুরী বলেন, একটি সময় হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি অর্থ দেশে আসত। কিন্তু সেটাও এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। আবার প্রবাসীরা প্রতি বছর ২ থেকে একবার দেশে আসার সময় অনেক ক্যাশ টাকা বয়ে আনতেন। এখন সেটার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে ভারী লেনদেন করতেন তাদের মধ্যেও বৈধ পথে টাকা লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে। তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর ওপরে জোর দেন। এছাড়া যারা দেশে ফেরত আসছেন তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করা জরুরি।
এসডিজি প্ল্যাটফরম জানায়, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি পর্যুদস্ত। কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিপুলসংখ্যক তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সবাই শঙ্কিত ছিলেন এবং এ কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করে চলেছে। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা যেমন আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, ঠিক একইভাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। এই অর্থের উৎস নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি মানে প্রবাসীরা ভালো আছেন এটা ভাবা উচিত নয়। তবে যেসব প্রবাসী ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়ে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন তাদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। নারী প্রবাসীরা অধিক পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন কারণ কোভিডের কারণে তাদের চাকরি হারানোর হার কম ছিল।
সংলাপে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা এ মানুষগুলোর পুনর্বাসনের সঠিক ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া তাদের জন্য প্রণোদনা আরো বৃদ্ধি করা যায় বলেও তিনি মনে করেন। তাহলে এই প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে। করোনা টিকা পাবার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। ফিরে আসা বাংলাদেশিদের কাজে লাগাতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন এই ঋণের ব্যবস্থা করছে সরকার।
সমাপনী বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, পরিশ্রমী এসব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ কর্মসংস্থানের ওপর ভিত্তি করেই বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জন নির্ভর করছে। অনেকেই বলছেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ ২০২১ সালে শেষ পর্যন্ত চলতে পারে আবার কারও কারও মতে অব্যাহত থাকবে এই প্রবৃদ্ধি। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে তার মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্য কোনো সিডিউল ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হবে না। খেটে খাওয়া এসব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য যেকোনোভাবে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে দেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেলেও ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখা কষ্টকর হবে। যারা দেশে ফেরত এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা অনেকেই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আসছেন না। এ বিষয়ে তিনি সকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বর্তমান প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করার ক্ষেত্রে সবাইকে পরামর্শ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হারের জন্য দরিদ্র্য পরিবারের যে উন্নয়ন হচ্ছে এটা ভাবা সঠিক হবে না। কেননা, এই প্রবাসী আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে দারিদ্র্যসীমার ওপরের মানুষদের থেকে। হুন্ডি ব্যবসার প্রকোপ কমা, হজের জন্য জমানো টাকা দেশে পাঠানোসহ অন্যান্য বিষয় এই বৃদ্ধির কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন। মহামারির কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরে যেখানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিদেশ গেছে সেখানে গত ৬ মাসে মাত্র ৭ হাজার লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখনো রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টসের (ওয়ারবি) চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, যে ক্ষেত্র থেকে কোনো বিনিয়োগ ছাড়া অর্থ আসছে সে ক্ষেত্রে আরো বেশি নজর দেয়া দরকার। তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যে প্রণোদনা রয়েছে তা বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ করার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।
কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস’র শ্রম কাউন্সিলর ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য সব সময় কাজ করছেন এবং তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রবাসীদের অবস্থার ক্ষেত্রে টেকসই কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। তাই নীতি নির্ধারকদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বিদেশ থেকে আরো কীভাবে সম্পদ দেশে আনা যায় তা নিয়ে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা জসীম উদ্দিন মহামারির কারণে দেশে ফিরে এসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আনেন।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর