× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নগরীতে তীব্র গ্যাস সংকট চুলা জ্বলছে লাকড়িতে

প্রথম পাতা

মারুফ কিবরিয়া
১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার

দিনে দুপুরে বাড়ির ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। ভেতরে কয়েকজন নারীর উচ্চস্বরে কথা শোনা যায়। অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি তো! ভেতরে গিয়ে জানা যায় তেমন কিছু নয়। বাড়িতে লাকড়ির চুলায় আগুন জ্বালিয়ে চলছে রান্না। ষাটোর্ধ্ব এক নারী রান্নায় ব্যস্ত। বাকিরা খাবারের জন্য অন্য ব্যবস্থা করছিলেন। কারণ রাত ১১টার আগে চুলায় গ্যাসের দেখা মিলবে না। গত এক মাস ধরেই এই অবস্থা।
দিনে রান্নার সময় থাকে না গ্যাস। এ চিত্র রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বরের ব্লক সি এলাকার একটি বাড়ির। বাড়িটির গৃহিণী নাসিমা বেগম বলেন, গ্যাস তো আসেই না। রান্নার কাজ লাকড়ির চুলায় সারতে হয়। বাড়িতে এত মানুষ। সবার খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। গ্যাসের চুলায় রাত ১১টার আগেও আগুন জ্বলে না। সকালে চা বানানোর আগেই চলে যায়। এত কষ্ট আমাদের। দেখার কেউ নাই। শীতের সময় এলেই রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট দেখা দেয়। তবে সে চিত্র এবার আরো ভয়াবহ। রাজধানীর অনেক স্থানেই গ্যাস থাকে না দিনের একটা বড় অংশ। সকালেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। ধীরে ধীরে সেটি একেবারেই নিভে যায়। বেশির ভাগ এলাকায় সকাল আটটার ভেতর চাপ কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও বিকাল তিনটায় আবার কোথাও রাত ১১টায় আসে। এ নিয়ে দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই নগরবাসীর। কূল-কিনারা না করতে পেরে অনেকে লাকড়ির চুলার ব্যবস্থা করেছেন। আবার কারো বাড়তি ব্যয় হিসেবে যোগ হয়েছে কেরোসিনের স্টোভ।
গত কয়েকদিনে রাজধানীর, মিরপুর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মুগদা, বনশ্রী, মগবাজার, রামপুরা, আগারগাঁও, গ্রীনরোড, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়,  পল্লবী, কাফরুল, লালবাগ, নারিন্দা, টিকাটুলীসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এই দুর্ভোগের চিত্রের দেখা মেলে। গ্যাসের জন্য এ হাহাকার কবে থামবে- তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে রান্নায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে গিয়ে মানুষকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। তাছাড়া গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও মাস শেষে বিল পরিশোধও করতে হচ্ছে গ্রাহককে।
উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার বাসিন্দা আহমেদ শিপু জানান, গ্যাস থাকে না একদিনও। খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছি আমরা। সকাল ৮টায় ঘুম ভেঙে দেখি চুলায় নিভু নিভু আগুন। যা দিয়ে চা-ই বানানো সম্ভব না। রান্নার জন্য তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আমরা বড়রা বাইরে কিছু একটা খেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য তো বাইরের খাবার দেয়া যায় না। খুবই বাজে অবস্থা। উত্তর বাড্ডার পূর্বাচলের কেয়া বলেন, আগে সারাদিন গ্যাস পেতাম। এখন সারাদিনই থাকে না। একই এলাকার সাইফ উদ্দিন আবির জানান, সকালে আটটায় গেলে গ্যাস আসে বিকাল চারটায়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়তে হয় আমাদের। এই এলাকার রওশন আরা, রাজু, লুৎফুন নাহার, মারিয়া শারমিন মিতুসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা গ্যাস সংকটের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া উত্তর বাড্ডা বাজার, আলীর মোড় ও আশপাশের এলাকায়ও গত দুই মাস ধরে গ্যাসের সমস্যার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। দক্ষিণ বাড্ডার আকশা খান নামের এক গৃহিণী বলেন, আমার বাসায় আগে দিনের বেলাতে সমস্যা ছিল। এখন রাতেও গ্যাস থাকে না। একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মইনুল হাসান জানান, সকালে একটু থাকলে সারা দিনে গ্যাসের দেখা পাই না। খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি। কবে যে গ্যাসের সমস্যা শেষ হবে জানি না। অনেক সময় লাকড়ির চুলা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ফ্ল্যাট বাসায় ধোঁয়ায় পুরো ঘর নষ্ট হয়ে যায়। শীতে গ্যাস একটু কম থাকে মানলাম। কিন্তু একেবারেই যে থাকে না- এর সমাধান কি? নাঈম আহমেদ নামের বনশ্রীর এক বাসিন্দা জানান, আমাদের গ্যাসের সমস্যা আর কী বলবো। গ্যাস তো কোনোদিন দেখিই না। সকালে একটু দেখা যায়। তারপর সারাদিনে আর নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে এই একটা মাস।
রাজধানীর গ্যাস সংকটের ভয়াবহ চিত্র মিরপুর ১১ নম্বরের ব্লক সি এলাকায়। এই এলাকায় সকাল আটটায় চলে গেলে রাত ১১টার পর আসে। বাসিন্দাদের স্টোভ বা লাকড়ির চুলার উপরই নির্ভর করতে হয়। ইসমাত আরা কেয়া নামের এক গৃহিণী বলেন, সারা দিন আমরা  গ্যাসের চুলায় আগুন দেখতে পাই না। সন্ধ্যায় তো আসবে? তাও আসে না। রাত ১১টার পর আসে। তখন তো রান্নার আর সময় থাকে না। আর এত শীতের মধ্যে রাতের বেলায় রান্না কি করা সম্ভব?  ভোগান্তির শিকার হওয়া এই নারী আরো বলেন, কখনও স্টোভ বা লাকড়ির চুলা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এসব করতে গেলে বাড়তি টাকা খরচ হয়। আবার মাসের শেষে গ্যাসের বিল দেবো। এত খরচ টানতে টানতে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
একই  এলাকার আরেক বাসিন্দা নাজ বলেন, সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করা হোক। মিরপুর-১ এর সূচনা নামের এক নারী জানান, আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে আছি আজ দশদিন হলো। এ অবস্থায় বারবার গরম পানি খেতে হয়। নাকে ভাপ নিতে হয়। কিন্তু এসবের কিছুই করতে পারছি না। কারণ গ্যাস নেই। ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠার আগেই গ্যাস চলে যায়। আর কখন ফিরবে তার কোনো ঠিক থাকে না।
রাজধানীর নারিন্দার গুরুদাস সরকার লেনের বাসিন্দা পিনাক মহলানবীশ বলেন, এই শীতের সিজনে গ্যাস কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবছর তা-ই হয়। কিন্তু একেবারে চলে যায়- এটা কীভাবে সম্ভব। লাকড়ির চুলার ব্যবস্থা তো করেছি। কিন্তু মাস শেষে  যে বিল দিচ্ছি তা তো ব্যবহার না করেই দিতে হচ্ছে।
গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, আদাবর রোড, তাজমহল রোড, ঢাকা উদ্যানে। নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, আমাদের বাসায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। বেশির ভাগ দিনই অনলাইনে খাবারের অর্ডার দিতে হয়। একটা বাড়তি খরচ যোগ হয়। কিন্তু গ্যাসের বিলও মাসের মাস পরিশোধ করছি।  
রাজধানীজুড়ে এই গ্যস সংকট নিয়ে কথা হয় তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহর সঙ্গে। সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এই সংকট তো আছেই। এখন একটু বেশি হচ্ছে। সীমাবদ্ধতা আছে। সংকট সমাধানে কি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিতাসের এমডি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করতে। গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও এর বিল পরিশোধ করায় গ্রাহকের বাড়তি টাকা খরচ প্রসঙ্গে আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে কাজ করছি। গ্যাসের মিটার লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর