× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মশায় অতিষ্ঠ রাজধানীর মানুুষ

শেষের পাতা

নূরে আলম জিকু
১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার

ঢাকায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশায় অতিষ্ঠ জনজীবন। করোনাকালীন ও শীতের সময়ে মশার বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত দুই সিটি করপোরেশনের নাগরিকগণ। এতে যেমন রয়েছে করোনার আতঙ্ক, তেমনি বাড়ছে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও। মশক নিধন কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড কীটনাশক ‘নোভালোরন’ প্রয়োগ করেও মশা নিয়ন্ত্রণে সুফল পাচ্ছে না ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শীতের মৌসুমে মশার বিস্তার কমে যাওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এর বিস্তার বেড়েছে।
সিটি করপোরেশন বর্ষার মৌসুমে মশা নিধন কার্যক্রমে যথেষ্ট ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে এ কাজে ভাটা পড়েছে। সিটি করপোরেশনকে খাল, ডোবা পরিষ্কারের পাশাপাশি মশার লার্ভা ধ্বংসে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে মশার বিস্তার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়াসিস ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

সরজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় খাল, নর্দমা, ডোবায় পানির পরিমাণ কমে গেছে। এতে জমে থাকা পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেসব স্থানে মশার লার্ভা তৈরি হচ্ছে। শহরের বস্তি এলাকা, ঢালাই মেশিন, পরিত্যক্ত পলিথিন, ময়লার ভাগাড়, ঝোপঝাড়, রাস্তার পাশে থাকা ককশিট ও বাসাবাড়ির আশপাশ থেকে মশা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। জানা যায়, রাজধানীতে অবস্থিত জলাশয়ের মালিক ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। সিটি করপোরেশন মাঠে থাকলেও অন্যান্য সংস্থাকে মাঠে কাজ করতে তেমন একটা দেখা যায় না বলছেন নগরবাসী। তবে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ঢাকা ওয়াসা তাদের উপর ন্যস্ত থাকা দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরপর দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন এলাকায় খাল, ডোবা ও জলাশয় পরিষ্কার-উচ্ছেদ শুরু করে। এদিকে, জলাশয়ে উচ্ছেদ শুরু হলেও মশা মারার ওষুধ ছিটানো ক্রাশ প্রোগ্রামে গতি আগের চেয়ে কমেছে। প্রতি বছর এই সময়ে কিউলেক্স মশার বিস্তার বাড়লেও ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো মশক নিধনে অবহেলা করছে এমন অভিযোগও রয়েছে।   

রাজধানীর নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া আক্তার মানবজমিনকে বলেন, দিনে- রাতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। এমন মশা গত বর্ষা মৌসুমেও দেখিনি। পাশে হাতিরঝিল, সেখান থেকেই চারদিকে বেশি বিস্তার হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন আগে মশা মারতে দেখা গেলেও, গত একমাস কাউকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। মশার কামড় থেকে বাঁচতে দিনের বেলাও মশারি টানাতে হচ্ছে এখন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা মো. আকতার হোসেন। তিনি জানান। এখন যেসব মশায় কামড় দেয়, এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জির মতো দানা সৃষ্টি হয়। দিনের বেলায় দোকানপাটেও বসা যায় না এদের অত্যাচারে। মাঝে মধ্যে মশার ওষুধ দিলেও বাসাবাড়ির আনাচে কানাচে দিতে দেখা যায় না। মশক কর্মীরা শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সড়কেই ওষুধ ছিটায়। এতে মশা মরে না। বরং বাড়ে।

এনজিও কর্মী আফজাল হোসেন লাবু বলেন, করোনা আতঙ্কের মধ্যে শিশু- কিশোরসহ অসংখ্য মানুষ এখন ঘরবন্দি। দিনের বেলায় মশার উৎপাতের কারণে ছেলেমেয়েদেরকে বাসায় রাখা দুষ্কর হয়। কোথাও বসলে শরীরে মশা জেঁকে বসে। সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে যে মশার ওষুধ ছিটায় তার মান ভালো না। এর কারণে কোনো কাজ হয় না।

এদিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ রক্ত চুষে খাওয়া মশার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে দেখা গেছে।  
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, প্রতি বছরই নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউলেক্স মশার বিস্তার বাড়ে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ডোবা, খাল, নালা ও ঝিল থাকে। এবছরও কিউলেক্স মশার প্রকোপ অনেক বেশি। এখনই জরুরি ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে মার্চ পর্যন্ত এই মশা ঢাকাবাসীকে  ভোগাবে। বাসাবাড়ি কোথাও এখন নিরাপদ নয়। মশার কামড়ের জন্য মানুষ বাইরে দাঁড়াতে পারে না। সিটি করপোরেশনকে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করে ঢাকার প্রতিটি মহল্লার নর্দমা, খাল ও ডোবায় অভিযান পরিচালনা করলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া যেসব ডোবা, নর্দমা আছে সেখানে ৭ দিন পর পর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মশা কমে আসবে। খালগুলোতে গাপ্তি মাছ ও বিটিআই ব্যাকটেরিয়া ছাড়লে মশার লার্ভা বিনষ্ট হয়ে যাবে। এতে নগরবাসী অনেক বেশি উপকৃত হবে।

এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, মশার বিস্তার সিটি করপোরেশনের নজরে এসেছে। ডিএসসিসি এলাকার ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন একযোগে ৪ ঘণ্টা করে মশক নিধন ও ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সারা বছরের ন্যায় এই ওষুধ ছিটানো হয়। কীটনাশক প্রয়োগ করা হলেও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩টি ল্যাবে তাদের কীটনাশক পরীক্ষা করেছে। সেখানে ওষুধের মান ৯৮ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর মশার বিস্তার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে স্বাভাবিক নিয়মেই মশা বাড়ছে। এই মৌসুমে নালা, নর্দমা, জলাশয়ে পানি কমে যায়। নোংরা পানি থাকার কারণে কিউলেক্স মশা জন্মায়। আমাদের মশককর্মীরা নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক ভাবে তারা কাজ করছেন। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মনিটরিং করছেন। আমি ভিডিও কলে ও অনলাইনে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। মশক নিধন কাজকে আরো বেগবান করতে চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমরা যেসব ওষুধ প্রয়োগ করি, তা ৩ টি ল্যাবে পরীক্ষা করে ভালো  রেজাল্ট পেয়েছি। এ ছাড়া চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড কীটনাশক ‘নোভালোরন’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটি একবার প্রয়োগ করলে ৩ মাস পর্যন্ত কার্যকারিতা থাকে।  ঢাকায় মশা কমাতে হলে জনসচেতনতা খুব জরুরি। মানুষ সচেতন না হলে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মানুষ বাসা বাড়ির বেসমেন্ট, ছাদে ও বাসার আশেপাশে পানি জমা করে রাখে। এতে মশার লার্ভার বিস্তার বাড়ে। আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে তার প্রমাণ পেয়েছি। অনেকবার করে সচেতন করা হয়েছে। তারপরও তারা সচেতন হচ্ছে না। সম্প্রতি মশা বিস্তার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ডিএনসিসি’র এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পেয়ে খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। এসব খালে কচুরিপানায় ব্যাপক লার্ভা রয়েছে। সে সব নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর মশাগুলো সেখান থেকে উড়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আশা করি, খুব শিগগিরই মশার বিস্তার কমে আসবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর