× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সক্রিয় ‘প্রাইভেটকার’ চক্র

বাংলারজমিন

মো. আরিফ হোসেন, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) থেকে
২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার

মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছিনতাইকারী চক্রের  প্রাইভেটকারের চালক দু-একজনকে গাড়িতে তুলে ঢাকার দিকে রওনা করে। পথে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে পার্টনার হিসাবে কৌশলে কম ভাড়ায় যাত্রী তুলে নেয়। সামনের কোন স্টেশন থেকে গাড়িতে উঠে চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা। এরপরই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রীর হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং সব কিছু হাতিয়ে নেয়। এরপর চক্রটি শুরু করে তাদের নতুন মিশন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। কাঙ্ক্ষিত অর্থ পাঠানোর জন্য ভিকটিমকে দিয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফোন দিয়ে বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠাতে দেরি হলেই দফায় দফায় মারধর করে।
বিকাশে টাকা পেয়ে এক্সপ্রেসওয়ের নির্জন স্থানে ভিকটিমকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ে চক্রটি। তাদের এক একটি মিশন সফল করতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে তারা এক্সপ্রেসওয়েই চক্কর দিতে থাকে। সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মিলালে এমন চিত্রই ফুটে উঠে। গত সোমবার দুপুরে দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ও বিক্রমপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ খান ও তার বন্ধু লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ভাঙা মোড়  থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেট কারে উঠেন। মাসুদ খান জানান, তিনি প্রাইভেট কারটির পিছনের সিটে বসেন। এসময় প্রাইভেট কারে চালকের পাশে ১জন যাত্রী বসে ছিলেন। প্রাইভেটকারটি চন্দ্রেরবাড়ি বাজারে আসলে ড্রাইভার আরো ১জন যাত্রীকে পিছনের সিটে উঠায়। পরবর্তীতে ড্রাইভার সামনের সিটে গাদাগাদি করে আরেকজন যাত্রীকে উঠায়। অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ীটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের মাশুরগাও (ফেরি ঘাট) এলাকা পার হলে হঠাৎ চালক সহ যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা মাসুদ খান ও তার বন্ধুকে জাপটে ধরে এবং গাড়িতে থাকা গামছা ও গাড়ির বেল্ট দিয়ে বেঁধে ফেলে। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাদের নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সহ সর্বস্ব লুটে নেয়। পরে শুরু করে দ্বিতীয় মিশন। তারা মাসুদ খান ও তার বন্ধুকে মারধর শুরু করে মুক্তিপণ দাবি করে। মাসুদ খান উপায় না দেখে তার বন্ধুর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা এনে দেয়। চক্রটি তাদেরকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুরিয়ে শ্রীনগর উপজেলার উমপাড়া বটতলা নামক স্থানে নামিয়ে দেয়। ওইদিন রাতেই মাসুদ খান শ্রীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গত ৬ই জানুয়ারী শ্রীনগর বাজারের মসজিদ মার্কেটের সাইফ বোরকা হাউসের মালিক হাফেজ সাইফুল ইসলাম চক্রটির ফাঁদে পড়েন।  সাইফুল ইসলাম জানান, ওই দিন সকালে তিনি হাঁসাড়া ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে হাঁসাড়া স্কুলগেটে এসে বাসে উঠার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এমন সময় চক্রটি প্রাইভেট কার নিয়ে তার সামনে হাজির হয়। তাড়াহুড়ো থাকায় তিনি প্রাইভেট কারে উঠে বসেন। এসময় তার পাশে আরেকজন বসা ছিল। প্রাইভেট কারটি ধলেশ্বরী টোল প্লাজা পার হয়ে আরো ২জন যাত্রী তুলে। অল্প সময়ের মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই চালক ও অন্যান্যরা সাইফুল ইসলামকে বেঁধে ফেলে তার কাছ থেকে নগদ প্রায় ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেট হাতিয়ে নেয়। পরে তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে মারধর শুরু করে এবং এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরতে থাকে। উপায় না দেখে তিনি বিকাশের মাধ্যমে দোকানের কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০ হাজার, স্ত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার ও ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধ করেন। পরে তাকে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নামিয়ে দেয় চক্রটি। পরদিন তিনি শ্রীনগর থানায় অভিযোগ করতে যান। এসময় ডিউটি অফিসার তাকে কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে আর তিনি মামলা করেননি।
এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মাছ ও সবজির আড়তে আসা মৎসচাষী ও কৃষকরা প্রায়ই সার্ভিস লেনে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এই লেনে সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। গত ২৪শে ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে বেঁজগাও এলাকার পূর্বপাশের সার্ভিস লেন থেকে হাইওয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বীরতারা গ্রামের মো. শ্যামলের ইজিবাইক ছিনতাই হয়। এর আগে ষোলঘর ভূইছিত্র কবরস্থানের সামনে থেকে সালেপুর গ্রামের মোকলেছ শেখের ইজিবাইক ছিনতাই করে চক্রটি।
এব্যাপারে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আফজাল হোসেন বলেন, প্রাইভেট কার নিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমরা জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করছি। তাছাড়া হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম প্রতিদিনই টহল দিয়ে থাকে। সার্ভিস লেনের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট এরিয়ার থানা পুলিশ দেখে থাকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর