× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

২০ দলের ভবিষ্যৎ কি?

প্রথম পাতা

শাহনেওয়াজ বাবলু
২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি’র সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের সম্পর্ক অনেকটাই মলিন। এ কারণে অনেকেই মনে করেন, ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। গত নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বর্তমানে বিএনপি’র কাছে ২০ দলীয় জোটের কার্যকারিতা কমে গেছে। গত বছরে মাত্র দুইবার জোটের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ তাদের বৈঠক হয় জুলাইতে। সেটাও ভার্চ্যুয়ালি। জোটের নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোট গঠন করেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর তিনি শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন।
মুক্তি পেলেও দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন দেশের বাইরে। মূলত সঠিক নেতৃত্বের অভাবে ২০ দলীয় জোট অনেকটাই অকার্যকর রয়েছে। এখন বিএনপিই পারে ২০ দলীয় জোটকে আবারো সক্রিয় করতে।   
এদিকে, শরিকদের কেউ নিজেই বিপাকে পড়ে জোট ছেড়ে যাচ্ছে আবার কোনোটি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভেঙে যাচ্ছে। অথচ দু-একটি ছাড়া নামসর্বস্ব এসব দল নিয়ে জোট করে তেমন কোনো লাভ ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। রাজপথের আন্দোলনেও তাদের বড় কোনো শক্তির জোগান মিলছে না। নির্বাচনে ভোটের মাঠেও তেমন অবদান রাখতে পারেনি দলগুলো। উল্টো শরিকদের এই ভাঙন ও জোট ছাড়ার দায় কোনো না কোনোভাবে বিএনপিকে নিতে হয়েছে।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপি জোটের রাজনীতি শুরু করে। অনেক ভাঙা গড়ার পর নতুন করে চারদলীয় জোট গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। তারপরে ১৮ দলীয় জোট এবং সর্বশেষ প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও সাম্যবাদী দলের একাংশ নিয়ে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল গঠিত হয় ২০ দলীয় জোট। অবশ্য চারদলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট এরইমধ্যে তিন ভাগ হয়েছে। চার দলের শরিক থাকা অবস্থায় ভেঙে গেছে জাতীয় পার্টিও। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বড় অংশ বিএনপি’র জোট ছেড়ে চলে গেলে মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন একাংশ জোটে থেকে যায়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর জোট ছেড়ে চলে যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের আগে দলীয় অন্তঃকলহ এবং মনোনয়ন না পাওয়ায় ২০ দল ছেড়ে চলে যায় এনডিপি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আবার নির্বাচনের পর দলীয় কলহে ভাগ হয়ে গেছে অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি। অবশ্য উভয় অংশই ২০ দলের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। নামে ২০ দলীয় জোট হলেও এতে দল রয়েছে ২৩টি। আর এগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মাত্র ৮টি। এই জোটে প্রথম ভাঙন শুরু হয় ২০১৫ সালে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে জোট থেকে বেরিয়ে যায় প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। নিলুর অভিযোগ ছিল, জোটে বিএনপি-জামায়াত সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। তবে মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জোটে থেকে যান। একই অবস্থা তৈরি হয় এনডিপিতেও। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও আজহারুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে দলটির আরেক অংশ জোটে থেকে যায়। একইভাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) নিবন্ধিত অংশ জেবেল রহমান গানি ও এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জোট ত্যাগ করলে শাওন সাদেকীকে ন্যাপের সভাপতি করে জোটে রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালে জটিলতা তৈরি হয় ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে। জোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী জোট ছেড়ে যান। ঐক্যজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি আবদুর রকিব নিজেকে ইসলামী ঐক্যজোটের নতুন চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোটের সঙ্গেই আছে। ২০১৯ সালের ৬ই মে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ ইস্যুতে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) ভেঙেছে। ভেঙেছে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে থাকা লেবার পার্টি। দলটির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি লেবার পার্টির একাংশ নিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও ইরান রয়ে গেছেন।
সূত্র মতে, এই মুহূর্তে জোটে ২৩টি দল দৃশ্যমান। দলগুলো হলো- ১. বিএনপি, ২. জামায়াতে ইসলামী, ৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি (অলি), ৪. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ৫. খেলাফত মজলিস, ৬. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, খন্দকার লুৎফর রহমানের অংশ), ৭. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, ব্যারিস্টার তাসমিয়া), ৮. ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি (ভগ্নাংশ), ৯. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (ভগ্নাংশ), ১০. ইসলামি ঐক্যজোট (অস্তিত্বহীন), ১১. বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (অস্তিত্বহীন), ১২. বাংলাদেশ মুসলীম লীগ (অস্তিত্বহীন), ১৩. ডেমোক্রেটিক লীগ (দলের প্রতিষ্ঠাতা অলি আহমদের মেয়ে), ১৪. সাম্যবাদী দল (যার সাধারণ সম্পাদক ২০০৮ সালের পর বিদেশে অবস্থান করছেন), ১৫. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (ভগ্নাংশ, যার নেতা মূল দলের ঢাকা মহানগরীর একজন সম্পাদক ছিলেন মাত্র), ১৬. ন্যাপ (ভাসানী, ভগ্নাংশ) ১৭. জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ১৮. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (কাসেমী), ১৯. জমিয়তে উলামায়ে (ওয়াক্কাস), ২০. বাংলাদেশ জাতীয় দল, ২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি (ভগ্নাংশ), ২২. পিপলস লীগ এবং ২৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি (শাহাদাত)।
জোট সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা জোট ত্যাগ করেছেন তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা সেভাবে না থাকলেও রাজনীতিতে বেশ পরিচিতি ছিল, ছিল অভিজ্ঞতার ঝুলিও। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর বিকল্প হিসেবে যাদের জোটে রাখা হয়েছে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা তো দূরের কথা, অভিজ্ঞতার পর্যন্ত ঘাটতি রয়েছে।
২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গত বৃহস্পতিবার এক সভায় বলেছেন, যে নীতি ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে আমরা এই জোটটা গঠন করেছি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেটার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। জোট নেতাদের কাছে অনুরোধ থাকবে একটাই- সেটা হলো মানসিক প্রস্তুতি নিন। জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি, আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা যারা জনগণের ক্ষমতার প্রতি আস্থাশীল, আমরা যারা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, আমাদেরই উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়া।
জোটের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম মানবজমনিকে বলেন, ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কি ভাবনা সেটা আমি জানি না। যেহেতু অনেকদিন যাবৎ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক হচ্ছে না এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে চিন্তার বা মতবিনিময় হচ্ছে না, তাই আমি কোনো মতেই এই জোটের চিন্তা ভাবনা কি সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না। আমি আমার দলের চিন্তা-ভাবনা উপস্থাপন করতে পারবো।
এই জোট কি প্রকৃতপক্ষে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই জোট যেহেতু এখন দৃশ্যমান কোনো কর্মে নেই, তাই সাংবাদিক শুভাকাক্সক্ষী এবং পর্যবেক্ষকগণ এটাকে নিষ্ক্রিয় বলেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে, বৈধ রাজনৈতিক পদ্ধতিতে অপসারণ করতে হলে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই আন্দোলনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। অতএব, দীর্ঘ ৮ বছরের পরিক্ষিত ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা এখন সময়ের দাবি। যদি ২০ দলীয় জোটে নেতৃত্বের সংকট থাকে সেটাও আলোচনার দাবি রাখে এবং আলোচনার পর এই জোটের নেতৃত্ব এবং কর্মপন্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, ২০ দলীয় জোট হচ্ছে নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি জোট। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত এ জোট স্পষ্ট হয়েছে। যেহেতু এখন কোনো নির্বাচন বা আন্দোলনের কর্মসূচি নেই সেহেতু এই জোটের কার্যক্রম অনেকটা নেই বললেই চলে। তবে আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রায় সময় আলোচনা বা বৈঠক হচ্ছে। আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে ২০ দলীয় জোট এক সঙ্গেই কাজ করবে।
বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের কোনো ফাটল নেই। দুই দলের সম্পর্ক আগে যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বর্তমানে এই জোট নেতৃত্ব শূন্যতায় আছে। জোটের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত। কিন্তু জোট নিষ্ক্রিয় না। এই মুহূর্তে আমরা যে অবস্থায় আছি, এই স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর বিএনপি চাইলেই জোটের কর্মসূচি মাঠে হবে। এখন বিএনপি’র ওপরই নির্ভর করে জোটের কার্যক্রম কতটুকু বেগবান হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর