× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হবিগঞ্জে বিএনপি’র বাজিমাতের নেপথ্যে

বাংলারজমিন

রাশেদ আহমদ খান, হবিগঞ্জ থেকে
২১ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার

১ম ও ২য় ধাপে হবিগঞ্জের ৩ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। এর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন মাধবপুর পৌরসভার নৌকার মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রার্থী মনোনয়নে ভুল সিদ্ধান্ত, বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় কোন্দলের কারণেই তিনটি পৌরসভায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। আরও দুটি পৌরসভা ক্ষমতাসীনদের হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। গত শনিবার নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে ছিল টানটান উত্তেজনা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বন ও পরিবেশমন্ত্রীর জামাতা গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী। তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচনের আগের রাতে অর্থ লেনদেনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ফলাফলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত নবীগঞ্জে মন্ত্রী’র জামাতা রাহেল চৌধুরী মাত্র ২৬৪ ভোটে পরাজিত হন। বিএনপি প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী পান ৫৭৪৯ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী পেয়েছেন ৫৪৮৫ ভোট।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে ভোটের আগের রাতের সংঘর্ষের ঘটনা। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপি প্রার্থীর চাচাতো ভাই শফিক মিয়ার ভুঁড়ি বেরিয়ে যায়। আহত শফিকের রক্তাক্ত ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে। এছাড়া ভোটারদের কাছে মর্মান্তিক এ বিষয়টি উপস্থাপন করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে বিএনপি প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে স্থানীয় নিরপেক্ষ ও দোদুল্যমাণ ভোটারদের একটি অংশ। এছাড়া কতিপয় নেতার লাইভে উল্টাপাল্টা বক্তব্যও অনেকটা বিরক্তিতে ফেলে সাধারণ ভোটারদের। যার ফলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত নবীগঞ্জ পৌরসভায় অল্প ভোটের ব্যবধানে নৌকার পরাজয় হয়।
 অন্যদিকে মাধবপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বেশি ভোটে জয়ী হন ধানের শীষ প্রার্থী। নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত। নির্বাচনে মাধবপুরে বিএনপি হাবিবুর রহমান মানিক পেয়েছেন ৫০৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ কুমার সাহা পেয়েছেন ৪১৮৬ ভোট। আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী শাহ মো. মুসলিম পেয়েছেন ৩০৪৯ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা শ্রীধাম দাশগুপ্ত মাত্র ৬০৮ পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, এ পৌরসভায় জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও দলীয় গ্রুপিং এর জেরে মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীধাম দাশগুপ্তকে। নানা কারণে পূর্ব থেকেই শ্রীধাম দাশগুপ্ত এলাকায় বিতর্কিত ছিলেন। এছাড়া নির্বাচনের সময় তিনি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভোটারদের কাছে প্রচারণা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে ভোটার ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে এ প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার অভাব ছিল বলে অনেকে মনে করেন। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলীয় নীতি নির্ধারকদের একচোখা নীতির কারণেই এ আসনে দলীয় প্রার্থীর লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে বলে নেতাকর্মীদের একাংশের ধারণা।
এদিকে প্রথম ধাপের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৯শ’ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এমএফ আহমেদ অলি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাসুদউজ্জামান মাসুক নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ১৪১ ভোট।
এ পৌরসভায় সদ্য বিদায়ী মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ছালেক মিয়া। মেয়র থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে রেলের কোটি কোটি টাকার জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, চাঁদাবাজিসহ সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যে কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যাপারে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় স্থানীয় ভোটারদের মাঝে। যদিও এবারের নির্বাচনে ছালেক মিয়াকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার মনোনয়ন দেয়া হয় অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ মো. মাসুদউজ্জামান মাসুককে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক মেয়র ছালেক মিয়াসহ দলীয় ৪ বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়রের প্রতি স্থানীয়দের বিরুপ ধারণা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে এ পৌরসভায় নৌকার পরাজয় ঘটে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত চুনারুঘাট পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাইফুল আলম রুবেলকে। রুবেল চুনারুঘাটের আলোচিত আখল মিয়া হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি। হত্যা মামলার আসামি রুবেলকে মনোনয়ন না দিতে যৌথভাবে হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন দলীয় ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু এরপরও তাকে মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এতে এ আসন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এছাড়া হবিগঞ্জ পৌরসভায় এখনো নির্বাচনের সময় নির্ধারণ না হওয়ায় প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। এ পৌরসভায়ও প্রার্থী মনোনয়নের ওপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর