× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নিজের বাড়িতেই যাচ্ছি: বাইডেন /১৭টি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর প্রথম দিন, ক্লান্তিহীন কাজ করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট

অনলাইন

হেলাল উদ্দীন রানা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
(৩ বছর আগে) জানুয়ারি ২১, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন শপথ নিয়ে তার নির্বাচনী অঙ্গিকার পূরণে মনোনিবেশ করেছেন। প্রথম দিনেই ১২ ঘণ্টারও বেশি একটানা ক্লান্তিহীন কাজ করে চলেছেন আমেরিকার ৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইমিগ্রেশন, জলবায়ুসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৭ টি জরুরি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করা ছাড়াও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন অতিমারি কোভিড-১৯ এর রিরুদ্ধে। ফেডারেল সরকারের সকল স্হাপনায় মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছেন। আজ প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের হোয়াইট হাউসে প্রথম রাত। এ উপলক্ষ্যে ফার্স্টলেডি ডঃ জিল বাইডেন সকল আমেরিকানদের প্রতি ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। এক টুইটে ফার্স্টলেডি একত্রে একটি নিরাপদ ও শান্তিময় বিশ্ব বিনির্মাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভেতর অতি জরুরি ক্যাবিনেট পর্যায়ের ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স পরিচালক পদে তার মনোনীত এভরিল হাইন্সকে সিনেট কনফার্ম করেছে। কালকের মধ্যে অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেনসহ আরো কয়েকটি ক্যাবিনেট পদ সিনেটে নিশ্চিত হতে পারে।

ক্ষমতা নিয়েই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস আমেরিকার জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আরলিংটন ন্যাশনাল সেমেটারীতে যান।

এসময় ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন, সেকেন্ড জেনেন্টম্যান ডউগ এলমহফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিটন ও সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারী ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও সাবেক ফার্স্টলেডি লরা বুশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা তাদের সাথে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জাতীয় বীরদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাদের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

 

সেখান থেকে ফেরার পথে হোয়াইট হাউসের অদূরে প্রেসিডেন্ট তার মোটরগাড়ি বিস্ট থেকে নেমে পড়েন পেনসেলভেনিয়া এ্যাভিন্যুতে। তারপর ফার্স্টলেডি ও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে পদযাত্রা সহকারে হোয়াইট হাউসে আসেন। প্রেসিডেন্ট তার পরিবার পরিজন নিয়ে বিকাল ৩টা ৫২ মিনিটে প্রথম পা রাখেন হোয়াইট হাউসে। বাইডেন তার উদ্দেশে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রেখে যাওয়া পত্রকে ভেরি জেনিরিয়াস বলে উল্লেখ করেন।বাইডেন বলেন, তার পত্রটি খুবই ব্যক্তিগত।আমি তার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করবো না।

কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও দূর থেকে লোকজনকে হাত নেড়ে বাইডেন দম্পতিকে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং জিল বাইডেনের পেছনে পেছনে হাঁটছিলেন বাইডেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
হেঁটে যাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক মুহূর্তের জন্য থামেন। এনবিসি নিউজের সাংবাদিক আল রকারের সাথে তাকে  শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। এনবিসি নিউজের সাংবাদিক মাইক মেমলির সামনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চলে যান এক পর্যায়ে। মাইক জিজ্ঞেস করেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট মুহূর্তটি কেমন লাগছে? জবাবে জো বাইডেন বলেন , মনে হচ্ছে আমি বাড়িতেই প্রবেশ করছি।

 

হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন,  যুক্তরাষ্ট্রে আজ নষ্ট করার সময় হাতে নেই।আমেরিকার জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই কাজ কাজ শুরু করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন  বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে অবিলম্বে স্বাক্ষর করার কথা জানান সাংবাদিকদের। ক্যামেরার সামনেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমস্ত ফেডারেল স্থাপনায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। গত দশ মাসে আমেরিকায় করোনায় চার লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর হয়েছে। চরম স্বাস্থ্য সংকটে রয়েছে আমেরিকার লোকজন এমন কঠিন বাস্তবতায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন। আগেই বলেছিলেন, মহামারীর সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর উদ্যোগই হবে তার প্রথম কাজ। জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় যোগদানের নির্দেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে দেন এ সিদ্বান্তের কথা। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় ২০১৫ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করা চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম দিনের নির্বাহী আদেশেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু সমস্যা নিয়ে গত চার বছরের নীতিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। আগামী ত্রিশ দিনের মধ্যে প্যারিস চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে। প্রথম কর্ম দিবসেই ১৭টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অভিবাসনের দেশ আমেরিকার ভেঙ্গে পড়া অভিবাসন সংস্কারে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

পৃথক নির্বাহী আদেশে মুসলমান প্রধান দেশ থেকে আমেরিকায় প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই মুসলমান প্রধান কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ নিয়ে সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়। এমন নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প তার অভিবাসন বিরোধী কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। নির্বাহী আদেশে অপ্রাপ্ত বয়সে বাবা মায়ের সাথে আমেরিকায় আসা কয়েক লাখ অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা'র চালু করা  এ অভিবাসন কর্মসুচী বন্ধ করার নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আদেশের মাধ্যমে কর্মসুচীটি আবার চালু হওয়ায় কয়েক লাখ অভিবাসীর আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের পথ উন্মুক্ত হলো।


প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করার আগেই জো বাইডেন আমেরিকার অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত জনগণের সহযোগিতার জন্য এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা কর্মসুচী ঘোষণা করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে করা প্রথম সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন , এমন প্রণোদনা আইন পাশের জন্য দ্বিদলীয় সমঝোতাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে বিরোধিতা আসলে সব ধরনের বিকল্পই ভাবনায় আছে বলে জেন সাকি জানিয়েছেন। কংগ্রেস ও সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এ ধরনের আইন প্রস্তাবের জন্য সিনেটে ৬০ ভোটের প্রয়োজন। রিপাবলিকান দলের সাথে সমঝোতা ছাড়া সিনেটে এমন আইন প্রস্তাবের জন্য ৬০ ভোট নেই। যদিও সনেটে প্রবীণ ডেমোক্র্যাট , বাজেট কমিটির প্রধান বার্নি সেন্ডার্স বলেছেন, সিনেটে রিপাবলিকান দলের কথা আমরা শুনবো। তবে আমেরিকার জনগণকে সাহায্যের জন্য মাসের পর মাস এ নিয়ে ব্যয় করা হবে না বলে বার্নি সেন্ডার্স উল্লেখ করেন। সিনেটের রিকন্সিয়েলশন প্রক্রিয়ায় ৫১ ভোটেও এমন আইন প্রস্তাব পাশ করার সুযোগ রয়েছে বলে সিনেটর বার্নি সেন্ডার্স স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।    

 

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর