× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিয়ানীবাজারে ‘বাড়ি বিলাস’

বাংলারজমিন

বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার

বিয়ানীবাজারে বাড়ি তৈরিতে চলছে রীতিমতো ‘বাড়াবাড়ি’। কারুকার্যময় এমন ‘বাড়ি বিলাস’ প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে। এ উপজেলায় বাড়ি নয় যেন ‘রাজপ্রাসাদ’  তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে প্রায় দুই দশক ধরে। বাড়িতে থাকার মতো কোনো মানুষ নেই। বাড়ির মালিক প্রবাসী। কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এসব বাড়ি বছরের অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে। তত্ত্বাবধায়কদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব অট্টালিকা সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া কোনো কাজে আসছে না। বিয়ানীবাজার উপজেলায় এমন আলিশান বাড়ি রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক।
যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় এক থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত।
প্রবাসীবহুল বিয়ানীবাজার। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক ইংল্যান্ড-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। মাঝেমাঝে দেশে বেড়াতে আসেন তারা। তাদের কেউই স্থায়ীভাবে থাকেন না দেশে। তবু দেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকাসম বাড়ি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিয়ানীবাজারের প্রবাসীদের বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে কোটি টাকার বাড়িগুলো।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সিলেট তথা বিয়ানীবাজারের প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ৭৫ ভাগই ব্যয় হয় বাড়ি নির্মাণে। আর প্রবাসীরা তাদের পাঠানো অর্থের ৭৮ শতাংশই দেশে জমি কেনার কাজে ব্যয় করেন। তারা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের চেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণেই বেশি আগ্রহী। শুধু লোক দেখানোর জন্য এতো অর্থ খরচ করে এই বাড়িগুলো তৈরি করা হয় কিনা তা জানতে চাইলে একটি বাড়ির মালিক আবু বক্কর জানান, পরিবারের কিছু সদস্য দেশের বাইরে থাকেন। তারা দীর্ঘদিন পর যখন দেশে ফেরেন তখন যৌথ পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে মিলে আনন্দ আয়োজন করার উদ্দেশ্যেই এই বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিলাসবহুল বাড়িগুলোর বেশির ভাগই ডুপ্লেক্স। এগুলোতে সর্বনিম্ন ১০টি থেকে সর্বোচ্চ ৩০টি করে রুম আছে। বাড়িগুলোর ভিতরে বিদেশি কায়দায় কিচেন কেবিনেট করা হয়েছে। আলোকসজ্জার জন্য ব্যয়বহুল ঝাড়বাতি এবং সিলিং থেকে স্পট লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দেয়ালে বৈচিত্র্য আনতে চিত্রশিল্পীকে দিয়ে বিভিন্ন ল্যান্ডস্কেপের ছবিও আঁকা হয়েছে। আর বাড়িগুলোর প্রবেশদ্বার ও জানালায় দামি সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদ ও আঙিনায় আছে বিদেশি ফুলের বাগান। এমনকি কিছু বাড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালও বাইরে থেকে আনা হয়।
বিয়ানীবাজারের পাতন গ্রামের এক সারিতেই কয়েকটি প্রাসাদসম অট্টালিকার অবস্থান। এর মধ্যে আছে ‘মালিক মহল,’ ‘বাংলাবাড়ি’ ‘লাল বাংলা’ ইত্যাদি। এই বাড়িগুলো তৈরিতে কম করে হলেও পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একটি বাড়ির ভিতরে প্রবেশের আগে বিশাল স্থানজুড়ে পুকুর খনন করে তার ওপর কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। সেই ব্রিজে বসার জন্য আলাদা স্থানও বানানো হয়েছে। কিছু বাড়ির মধ্যে ফোয়ারাও লাগানো হয়েছে। এমনকি বাড়ির বাইরেও টাইলস লাগানো হয়েছে। প্রবেশদ্বারের ওপর সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
‘বাংলাবাড়ি’র আবদুল করিম বলেন, ‘আমার বড় তিন ভাই তাদের পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে থাকেন। সেখানে তারা রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। বছরে দুই-একবার বাড়ি আসেন। মূলত তাদের পরিকল্পনাতেই এই বাড়ি করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, এ বাড়িটি অনেকটা ক্যালিফোর্নিয়ার আবাসিক বাড়ির আদলে তৈরি করা হয়েছে। তাদের বাড়ির সদস্য সংখ্যা ১২ জন হলেও পুরো বাড়িতে আছে ২৬টি কক্ষ। যার মধ্যে ২৩টি বেডরুম। বাড়িটির বিশাল ডাইনিং রুমে ৬০-৭০ জন একসঙ্গে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া এই বাড়ির দেয়ালজুড়ে চিত্রশিল্পী দিয়ে গ্রামবাংলার ল্যান্ডস্কেপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বিয়ানীবাজারের আলিশান বাড়িগুলোতে বাস করে অন্য জেলার মানুষ। তাদের কাছে বিয়ানীবাজার যেন দ্বিতীয় লন্ডন। এখানে লন্ডনের বিভিন্ন বিলাসবহুল বাড়িঘর ও ভবনের ছায়াচিত্র সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ সবকিছু হয়েছে বিয়ানীবাজারের লন্ডন প্রবাসীদের হাতের ছোঁয়ায়। পর্যটকরা এসব বাড়িঘর দেখতে আসেন প্রায়ই।
প্রবাসী আলতাফ আহমদ জানান, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি এ বছর নিজ গ্রামে বাড়ি বানিয়েছেন। সকল প্রবাসীই দেশে বাড়ি বানিয়েছে। তাই সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও একটি বাড়ি বানিয়েছেন।
সম্প্রতি উপজেলার কাকরদিয়ায় কাকর ভিলা নামে তৈরি করা হয়েছে বাংলো বাড়ি। যেটিতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষণীয়।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর জানান, প্রবাসীরা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। তাই কেবল বাড়ি বানানোর মতো অনুৎপাদনশীল খাতেই ব্যয় করছেন তাদের অর্থ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর