× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু

বাংলারজমিন

মো. আবদুর রউফ, খাগড়াছড়ি থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার

বহু প্রতীক্ষিত খাগড়াছড়ির রামগড় ও ত্রিপুরার সাবরুম অংশে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের এ সেতুটি ফেনী নদীর উপর নির্মিত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস রাত-দিন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়েছেন এর পেছনে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দু’দেশের জনগণ। ২৩শে জানুয়ারি সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির ৯৫ ভাগ নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিদিন অগণিত মানুষ সেতুটি এক নজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছে। এতে সেতুর বাংলাদেশের অংশে বিজিবি এবং ভারতের অংশে বিএসএফ পাহারার দায়িত্বে রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সেতুটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ভারতীয় হাইকমিশনারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যৌথভাবে সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় দেশের হাই অফিসিয়ালরা বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছেন স্থলবন্দর এলাকা। চলতি মাসের ৬ই জানুয়ারি একটি জাইকা (জাপানি উন্নয়ন সংস্থা) প্রতিনিধিদল আসেন। তারা মৈত্রী সেতুসহ সড়কে নির্মীয়মাণ সেতু পরিদর্শন করেন। ৩০শে ডিসেম্বর ২০২০ আসেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মো. জাবেদ হোসেন। তিনি ওই সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সেতু উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে রামগড় স্থলবন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষগুলোর মনে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা জাগছে স্বাভাবিক ভাবেই। সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা রামগড় স্থল বন্দরকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেকটিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়। যদিও রাজনৈতিক ও নানা আমলাতান্ত্রিক  জটিলতায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে ছিল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে চলতি বছরের মুজিববর্ষেই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বহুকাঙ্ক্ষিত রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের দৃশ্যমান সম্পূর্ণ অবকাঠামো। এ জন্য ভারত সরকার ফেনী নদীর উপর চার লেনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের একটি সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। রামগড় পৌরসভার মহামুনি ও সাবরুমের আনন্দপাড়া এলাকায় এর অবস্থান। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি রুপি। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার ইতিমধ্যে স্থলবন্দরকে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদামঘর সহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ কাজও চূড়ান্ত করেছে। রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, রামগড় স্থল বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে। খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই রামগড় স্থল বন্দরের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন, সরজমিন পরিদর্শনও করেছেন অনেকে। বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রামগড় স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩তম। এ জন্য রামগড়ের মহামুনিতে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে পরে আরো নেয়া  হবে। ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক আট মিটার প্রস্থ সংযোগ সেতুটির নির্মাণ ভারত সরকার করবে। তবে মূল সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। কাজ প্রায় শেষ, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। এতে ব্যবসায়ীসহ সকল মহল আশার আলো দেখছেন। সব মিলিয়ে রামগড় স্থল বন্দর পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আঞ্চলিক গণ্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপী সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।

উল্লেখ্য, ৬ই জুন ২০১৫ ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর ওপর রামগড়-সাবরুম মৈত্রী সেতু-১ এর  ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ১৯২০ সালের সাবেক মহকুমা শহর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় স্থলবন্দর স্থাপনের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ দেড় যুগের পর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় নতুন ভাবে আলোচনায় আসে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর