× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পথই যাদের ঠিকানা

বাংলারজমিন

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার

খোলা আকাশ। মাথার ওপর ছাদ নেই। চাল-চুলো-সংসারও নেই। যেখানে রাত সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন তারা। হোক রাস্তার ডিভাইডার, ফুটপাথ অথবা রেলস্টেশনের কোনো এক কোণায়। গোটা দেশের শহরগুলোতেই ছিন্নমূল এমন মানুষদের দেখা মেলে হামেশায়। গরমের সঙ্গে মানিয়ে এমনভাবে থাকতে পারলেও শীতের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন মানুষগুলো। কুয়াশা, হিম বাতাস কাবু করে ফেলে সহজেই।
কিছুই করার নেই। কিছু সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পাওয়া দুই একটি কম্বল দিয়ে এই শীত মোকাবিলা করতে হয়। চলমান শৈত্যপ্রবাহে কনকনে শীতে গোটা দেশ কাঁপছে। কাঁপছে পথের মানুষগুলোও। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের খোঁজ রাখে না কেউ। ছিন্নমূল এ মানুষগুলোর বেশির ভাগই পড়ন্ত বয়সের। একদিকে বয়সের ভার অন্য দিকে শারীরিক অসুস্থতা এই মানুষগুলোকে আরো অসহায় করে তুলছে। এদের বেশির ভাগের সন্তান আছে। সেই সন্তানেরা তাদের খোঁজ রাখে না। পেটে ধরা এই সন্তানরা বিয়ের পর নিজেদের সংসার সামলাতেই ব্যস্ত। মা বাবার খোঁজ রাখার সুযোগ নেই এই অমানুষগুলোর। যদিও এই বৃদ্ধ লোকেরা কেউই তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। তাদের ক্ষোভও নেই। তবে দীর্ঘশ্বাস আছে। পেটের তাগিদে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব মানুষ শহরে এসেছেন। সকাল থেকে রাতের শুরুর অংশ পর্যন্ত তারা শহরের অলিগলিতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। বাসাবাড়িতেও ভিক্ষার জন্য তারা যান। দিন শেষে রাস্তার ডিভাইডার, রেলস্টেশনসহ পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতেই শুয়ে রাত কাটান। শীত, বর্ষা এভাবেই মোকাবিলা করে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন এসব মানুষ।
বহুদিন তারা নিজ হাতে রান্না করেননি। রান্নার পরিবেশ তাদের নেই। খোলা রাস্তায় আগুন জ্বালাতে পারে না। হোটেলগুলোতে ভিক্ষার টাকা দিয়ে অথবা কোনো মানুষের সাহায্যে দু’এক বেলা খেয়ে জীবন ধারণ করেন।  
বগুড়া শহরের রেলস্টেশন, বিভিন্ন রাস্তার ধারে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষ আঞ্জু বেগম, আহাতুন বেগম, বেলী বেগম, আমিনুর রহমানের কথা বললে তারা তাদের নানামুখী সমস্যার কথা জানালেন। বর্তমান এই শীতে খোলা আকাশের নিচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। এদের অনেকেই বয়স্ক অথবা বিধরা ভাতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। মাঝেমধ্যে কিছু হৃদয়বান মানুষ তাদের খাবার, শীতের কাপড় দিয়ে গেলেও চাহিদার তুলনায় খুব কম। দেশের বিভিন্ন জায়গার হওয়ার কারণে সরকারি বিভিন্ন অনুদান থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এমন কি এই ছিন্নমূল মানুষদের পরিসংখ্যানও নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে।
এক সময় বগুড়া পৌরসভার মেয়র এডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১২ সালের দিকে তারা একটি জরিপ করেছিলেন এই মানুষগুলোকে নিয়ে। সেই সময় বগুড়া শহরে এই ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ শতাধিক। এখন এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। পরে সেই প্রকল্পটি বগুড়া থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় দেয়া হয়েছে। ফলে বগুড়ার মেয়র আর তাদের নিয়ে এগোতে পারেননি।
এদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, এনজিও এসব ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে লোকদেখানো নানামুখী সামাজিক পদক্ষেপ পরিচালনা করলেও ভাগ্যে পরিবর্তন কখনোই ঘটে না এদের। এদিকে বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের খুঁজে সরকারি ভাতার আওতায় আনার আশ্বাস দিলেন বগুড়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান আকাশ। তিনি বলেন, আমরা ছিন্নমূল মানুষদের আবারো তালিকা করবো। এদের মধ্যে যারা বয়স্ক এবং বিধবা তাদের ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  অবহেলা আর অনাদরে পৃথিবীর বিস্বাদ গ্রহণ করছেন এরা। রোদ-বৃষ্টি অথবা কনকনে শীতের সঙ্গে মিতালী করেই কেটে যাচ্ছে জীবন। এরাও মানুষ। এদেরও ভালোভাবে বসবাসের অধিকার আছে। সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর