বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, লুটের এক টেক্সবুক এক্সাম্পল এখন বাংলাদেশ। লুটের টাকার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে তৈরি হয় বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোম। গত এক যুগের জানা-অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। গতকাল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি বালিশ ৬ হাজার টাকা, একটি বঁটি ১০ হাজার টাকা, কাঁটাচামচ ১ হাজার টাকা, দুধে পানি মাপার যন্ত্র ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তালা ৫ হাজার ৫৫০ টাকা, বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকা, একটি মেডিকেল বই ৮৫ হাজার টাকা, পর্দা ৩৭ লাখ টাকা, টেলিফোন ১৫ লাখ টাকা, লিফট ২ কোটি টাকা, রক্তচাপ মাপার মেশিন ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, চেয়ার ৬ লাখ টাকা এখন অতি স্বাভাবিক বিষয়। প্রকল্পের কেনাকাটায় লুটপাটের সঙ্গে আছে পুকুর খনন, লিফট কিনতে, গরুর কৃত্রিম প্রজনন, ট্যাংরা-পাবদা মাছ চাষ, তেলজাতীয় ফসল এবং মৌ চাষ, নলকূপ খনন শেখার মতো উদ্ভট যুক্তিতে বিদেশ সফর। সংরক্ষিত নারী আসনের এই এমপি বলেন, গত এক যুগের জানা-অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। ২০০৯ সালের ২১ হাজার ৪৯২ জন কোটিপতি ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮ জনে।
ব্যাংকের এই হিসাবের বাইরে আছে আরো বহু কোটিপতি। বিশ্বে ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হিসেবে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম আর ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়, কিন্তু বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশ পঞ্চম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে যত গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন, ততটাই অবহেলিত থেকেছে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সর্বজনীন মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাধারণ মানুষের জীবনমান, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, লুটপাট, সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া ইত্যাদি। রাষ্ট্রপতির পুরো ভাষণ মূলত কিছু ডেটার সমাহার, যেখানে জিডিপি থেকে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় থেকে মাতৃমৃত্যু কিছুই বাদ যায়নি। অথচ বাংলাদেশের ডেটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই কঠিন প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক। রুমিন ফারহানা বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকেও ‘নৌকা মানেই জেতা’ ধরনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন অনেকেসহ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতাসহ আর্থিক দুর্নীতি উল্লেখ করে তাদের অভিশংসন চেয়েছেন। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপরে নানামুখী চাপের কারণে ২০২০ সালের রিপোর্টে বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে আছে, যা পাকিস্তান, মিয়ানমার, আফগানিস্তানের চেয়ে পেছনে। রুমিন ফারহানা দাবি করেন, সরকারের এযাবৎকালের সব ব্যর্থতা ছাড়িয়ে গেছে করোনাকালীন ব্যর্থতা। শুরু থেকে করোনা পরীক্ষা, মাস্ক, পিপিই, হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, প্রণোদনাসহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা এই কঠিন সময়কে কঠিনতর করেছে। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে নকল করোনা সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে। এখন যুক্ত হয়েছে টিকা নিয়ে ব্যবসা। শুধু সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি না করে বেক্সিমকোর সঙ্গে চুক্তি করার কারণে বাংলাদেশকে ভারতের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে টিকা কিনতে হচ্ছে, যাতে ৩২৫ কোটি টাকা যাবে কোম্পানিটির পকেটে। রুমিনের বক্তব্যের পর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বক্তব্য দিয়েই বের হয়ে গেছেন। কারণ, তিনি জানেন, তার বক্তব্য মিথ্যায় ভরা। এর জবাব তারা শুনতে চান না। রুমিনের উদ্দেশ্যে সরকারদলীয় এই এমপি বলেন, তারা (বিএনপি) নির্বাচন করেন না, কিন্তু সংসদে এসে বসেন। এতই খারাপ নির্বাচন হয়ে থাকলে এমপি হিসেবে কেন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন? কেন ১০ কাঠার জমির জন্য আবেদন করেছিলেন? পত্রিকায় আসার পর আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টাকা কোথা থেকে আসে আমরা জানি।