× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুষ্টিয়ার এসপি’র ক্ষমা প্রার্থনা / প্রিজাইডিং অফিসারকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার

পুলিশকে কথায় নয়, কাজে পটু হতে হবে। পুলিশ যাতে মানুষের বন্ধু হয়- সেটা করতে হবে। পুলিশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া; সে যেই হোক না কেন। কুষ্টিয়ায় যে পরিবেশ বিরাজ করছে, পত্রপত্রিকায় যেভাবে এসেছে, তা যদি বাস্তবচিত্র হয়, এটি হবে ভয়ঙ্কর। এমন কাজ করবেন না যাতে মানুষের মনে হয় যে, একটি পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের ঘটনার শুনানিকালে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন।
পরে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্থানীয় উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ও তার পরিবার এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে কুষ্টিয়ার এসপিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ই ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করে আদালত এসপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, এ ক’দিন আমরা আপনার কর্মকাণ্ড দেখবো।
এর আগে, এসপি আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্ষমা প্রার্থনায় এসপি তানভীর আরাফাত আদালতকে বলেন, বিচার বিভাগের জন্য আমার মনে সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অসম্মান দেখানোর কথা দূরে থাক, বরং বিচার বিভাগের দেয়া কাজে নিয়োজিত হতে পারলে নিজেকে সম্মানিত বোধ করি। এ ঘটনায় আমি মনের গভীর থেকে অনুতপ্ত। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। পরে আদালত বলেন, আপনি একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। আপনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ঠিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা কোনো সাধারণ আদালত অবমাননা নয়। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া। সে যেই হোক না কেন। কুষ্টিয়ায় যে পরিবেশ বিরাজ করছে, পত্রপত্রিকায় যেভাবে এসেছে, তা যদি বাস্তবচিত্র হয়, এটি হবে ভয়ঙ্কর। কে কোন্‌ দল, মত, আদর্শের উত্তরাধিকার, এটা বিবেচ্য বিষয় আপনার নয়। কথায় পটু হলে চলবে না, কাজে পটু হতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আপনার কার্যক্রমের মাধ্যমে সবকিছুর সমন্বয় সাধন করে কুষ্টিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবেন, যাতে পুলিশ ভীতিকর না হয়ে বন্ধু হয়। আপনাদের মূলমন্ত্র দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন। আপনাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আপনি প্রেসিডেন্ট পদক পেয়েছেন। এর মর্যাদা রক্ষা করা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
পুলিশ সুপারের প্রতি হাইকোর্ট বলেন, রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর (তিনটি বিভাগ) মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করাকেই দক্ষতা বলে। এমন যাতে না হয়, একটি পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেছে, মানুষ সেই ধারণা করতে পারে। জাতি উৎকণ্ঠিত। এ অবস্থা নিরসনের দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনারা অনেক ভালো কাজ করেন। তাই কথায় পটু না হয়ে কর্মে পটু হোন। তাতে উদ্দেশ্য সাধনে আপনি সফল হবেন। পুলিশের দায়িত্বের বিষয়ে আদালত বলেন, আপনাদের অনেক দক্ষ পুলিশ অফিসার আছেন, যারা অনেক সুনাম অর্জন করেছে। আপনাকেও সে জায়গায় যেতে হবে। আপনি তো রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছেন। আপনাদের যথেষ্ট জ্ঞান আছে। সেটা কাজে লাগান। সমাজকে একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকে নিয়ে যান। রাষ্ট্রের এ অর্গানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করাই দক্ষতা। এমন যেন না হয় যে, মানুষ ধারণা করছে, একটা পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেছে।
আদালতের শুনানিতে পুলিশ কর্মকর্তা এস এম তানভীর আরাফাতের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও আহমেদ ইশতিয়াক। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক ও ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাহেরুল ইসলাম। শুনানিতে এসপি’র পক্ষে মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনা ঘটে গেছে। সেখানে আমার (এসপি’র) ভুল হয়েছে স্বীকার করছি। অপরাধ করেছি। অতীতে তার (এসপি’র) এমন কোনো রেকর্ড নেই। এমন ভুল ভবিষ্যতে হবে না। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরো সতর্ক থাকবো বলে অঙ্গীকার করছি।
এডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওই সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে যারা প্রতিবেদন করেছে, ওই সব সাংবাদিকদেরকে যেন কোনো হ্যারেজমেন্ট করা না হয় সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
 এর আগে গত বুধবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত এক আদেশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার এসপিকে ২৫শে জানুয়ারি সকালে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর